‘নির্বাচনে এনসিপি'র প্রার্থী আসিফ-মাহফুজ’

জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখসারীর নেতা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম এয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের থেকে পদত্যাগ করেছেন। নির্বাচনে তারা কোন দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তা নিয়ে আগ্রহ সবার।
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম-সদস্যসচিব পদমর্যাদা একজন সদস্য জানান আসিফ মাহমুদ মুখপাত্র এবং মাহফুজ আলম এক নম্বর সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক পদে যোগদান করার সম্ভাবনা আছে, তবে এখনো নিশ্চিত নয়।
নির্বাচনে ঢাকা-১০ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন আসিফ মাহমুদ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন জুলাই অভ্যুত্থানের তরুণ নেতাদের নিয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তে সাবেক দুই উপদেষ্টা যোগ দিলে একটি পূর্ণতা পাবে। এবং দেশের রাজনৈতিক সচেতন নাগরিকরাও মনে করেন তাদের এনসিপিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত উত্তম হবে। বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামীতে যদি তারা যোগ দেয় তাদের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা হ্রাস পাবে বলে মনে করেন অনেকে।
আরও পড়ুন: মালিক খসরু’র কব্জায় গণপূর্ত অধিদপ্তর
বিজ্ঞাপন
আসিফ ও মাহফুজের সংসদীয় আসন ফাঁকা রেখেছে এনসিপি
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১০ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) তার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে আসিফ মাহমুদ এ ঘোষণা দেন।
ঢাকা-১০ আসনে (ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউমার্কেট ও হাজারীবাগ) এখন পর্যন্ত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে বিএনপি ও জামায়াত ইসলামীর প্রার্থী রয়েছে এই আসনে। বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম এবং জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য জসীম উদ্দিন সরকার।
বিজ্ঞাপন
ঐদিন ফেসবুক পোস্টে প্রকাশিত ভিডিওতে আসিফ মাহমুদ বলেন, "দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশের ভবিষ্যত নির্ধারণের এক বিশেষ সুযোগ এসেছে। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়ন কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। যুগ যুগ ধরে চলে আসা বিভাজনের রাজনীতির পরিবর্তে আমাদের প্রয়োজন জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং নতুন সামাজিক, রাজনৈতিক ও জিওপলিটিক্যাল বন্দোবস্তের বাস্তবায়ন। এই লড়াই সহজ নয়।"
তিনি বলেন, "মতিউর রহমান, তারাবোন বিবি, নূর হোসেন, ফেলানী, আব্দুর ফাহাদ, আবু সাঈদ ও মুগদ্ধদের আত্মত্যাগ আমাদের প্রেরণা। তাদের স্মৃতিকে সামনে রেখে আমি এই পুনর্গঠন ও বিনির্মাণের লড়াই চালিয়ে যেতে চাই। আমি কোনো বড় রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতা, অসংখ্য নিবেদিত কর্মী বা প্রচলিত ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় অর্থের ওপর নির্ভরশীল নই। আপনাদের সহযোগিতা ও সমর্থনই আমার একমাত্র অবলম্বন।"
অন্যদিকে জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা ও অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায়। এই আসনটি হলো লক্ষ্মীপুর-১। মাহফুজ আলমের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, তিনি এই আসনে নির্বাচন করতে আগ্রহী। এবং প্রথম ধাপে এ আসনে কাউকে মনোনয়ন দেয়নি এনসিপি।
বিজ্ঞাপন
বিএনপির এই আসনের প্রার্থী হলে নিজের দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দেওয়া বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- বিএলডিপি’র (একাংশ) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম এবং জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী নাজমুল হাসান পাটওয়ারী।
আসিফ ও মাহফুজের জন্য যে পদ নিয়ে আলোচনা চলছে এনসিপিতে:
আসিফ ও মাহফুজের এনসিপি'র যোগ দেওয়া নিয়ে দলের দলের ভিতরে ও বাইরে চলছে নানান আলোচনা। তারা এনসিপিতে আসলে কে কোন পদ পাবে তা নিয়ে ও চলছে জল্পনাকল্পনা।
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম-সদস্যসচিব পদমর্যাদা একজন সদস্য জানান আসিফ মাহমুদ মুখপাত্র এবং মাহফুজ আলম এক নম্বর সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক পদে যোগদান করার সম্ভাবনা আছে। তবে এই বিষয়ে এখনো দলীয় নীতিনির্ধারণী ফোরাম কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
সম্প্রতি বিভিন্ন বক্তব্যে আসিফ ও মাহফুজ এনসিপিতে আসতে চাইলে দল তাঁদের স্বাগত জানাবে বলে জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, "আসিফ মাহমুদ জনতার কাতারে এসেছেন, আমরা তাকে স্বাগত জানাই। তিনি কোন দলের হয়ে নির্বাচন করবেন এটি তার সিদ্ধান্ত। তিনি যদি জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) আসেন আমরা তাকে স্বাগত জানাবো।"
বিজ্ঞাপন
আসিফ ও মাহফুজের এনসিপি'র যোগদান বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামন্তা শারমি বলেন, "আমরা মনে করি যে একত্র হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।এখানে পদবী বা এই বিষয়গুলো আসলে আমার মনে হয় না তাদের কাছেও মুখ্য। আমার কাছে মনে হয় যে আমরা সবাই একসাথে একটা নতুন রাজনৈতির জন্য করবো এটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।"
তৃণমূল কর্মী সমর্থকরাও চায় আসিফ- মাহফুজ এনসিপিতে আসুক
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সময় এক সঙ্গে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক দুই ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম এনসিপিতে আসলে দেশের জাতীয় রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হবে বলে মনে করছেন অনেকে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও মহানগরের এনসিপি ঘনিষ্ঠ তৃণমূল কর্মী ও সমর্থকদের একটি বড় অংশ প্রকাশ্যে বলছেন, আসিফ ও মাহফুজ এনসিপিতে যোগ দিলে দল আরও সংগঠিত ও গতিশীল হবে।
বিজ্ঞাপন
এনসিপি'র তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা, নীতিগত দৃঢ়তা ও জনসম্পৃক্ততার পরিচয় দিয়েছেন। এসব অভিজ্ঞতা এনসিপির সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি'র (এনসিপি) ঢাকা মহানগরীর নিউমার্কেট থানা যুগ্ম সমন্বয়কারী মামুন রশিদ রতন বলেন, "আমরা দীর্ঘদিন ধরে যে একটা পরিবর্তন চাচ্ছি সেটা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৈরি নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির প্রতি সেই আস্থা আকাঙ্ক্ষা সাধারণ মানুষের রয়েছে। আমরা নতুন কিছু পরিবর্তন চাচ্ছি এজন্য আমরা চাই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখসারীর নেতা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম আমাদের সঙ্গে আসুক এবং এনসিপির হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। তারা দুজন এনসিপিতে আসলে দেশের রাজনীতির একটি নতুন সমীকরণ তৈরি হবে। আমাদের দুইজন ছাত্র উপদেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের এই অভিজ্ঞতা এনসিপি'র প্রয়োজন। তারা এনসিপিতে যোগ দিলে একটি পজিটিভ ধারা তৈরি হবে।"
রাজধানীর ধানমন্ডির বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরিজীবী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুনসুর আহমেদ বলেন, "আসিফ ও মাহফুজ জুলাই অভ্যুত্থানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁদের রাজনৈতিক দর্শনের সঙ্গে এনসিপি'র রাজনৈতিক দর্শনের মিল রয়েছে। তাই তাদের দুজনের উচিত অন্য কোনো দলে না গিয়ে এনসিপিতেই যোগদান করা। তারা এনসিপিতে এলে আন্দোলন-পরবর্তী রাজনীতিতে তরুণ নেতৃত্ব ও বড় দলগুলোর সমন্বয়ের এখনো জোটের যে আলোচনা চলছে, এনসিপি সেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করছি।"
বিজ্ঞাপন
আসিফ ও মাহফুজের এনসিপি'র যোগদান বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামন্তা শারমিন বলেন, "আমরা যেটা মনে করি যে অভ্যুত্থানের সকল শক্তি একত্র থাকবে এটাই চাই। তারা সরকার থেকে নেমে এসেছেন। যেহেতু আমরা গণভুত্থানের রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদেরকে দাবি করছি সেহেতু গণভুত্থানের সকল নেতৃত্ব একসাথে থাকবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। দেখুন তারা কোন পদে জয়েন দিবে কি বা তাদেরও প্রত্যাশা আছে কিনা আমার কাছে মনে হয় যে এই বিষয়গুলো একটা কালোক্রমে প্রকাশ হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। আমরা দলগতভাবে চাই সেই জায়গা থেকে তাদের যে যে মনোবৃত্তি এবং তাদের যে অবস্থান সেগুলো প্রকাশ করা প্রকাশ হওয়াটা জরুরি। আমরা মনে করি যে একত্র হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে পদবী বা এই বিষয়গুলো আসলে আমার মনে হয় না তাদের কাছেও মুখ্য। আমার কাছে মনে হয় যে আমরা সবাই একসাথে একটা নতুন রাজনৈতির জন্য করবো এটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এখন গণঅভ্যুত্থানের সকল শক্তি একসাথে থাকবে ঐক্যবদ্ধ থাকবে এটাই তো সকলের চাওয়া থাকবে। আমাদের তৃণমূল বলেন বাংলাদেশের সকল মানুষের কিন্তু চাওয়াটা থাকবে যে তারা যাতে একসাথে থাকে।
আপনাদের পক্ষ থেকে আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘হ্যা অবশ্যই বন্ধুত্ব যোগাযোগ সবসময় ছিল এখনো নিশ্চয়ই যোগাযোগ করা হচ্ছে এবং তাদের জায়গা থেকে আমরা কোন ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য বা আপনারাও দেখেছেন যে কোন ধরনের নেতিমাত্র মন্তব্য আসলে আসেনি। আমরা আশা করছি যে গণঅভ্যুত্থানের সকল শক্তি এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সকল শক্তি একসাথে সাম্য অবস্থায় লড়াইটা করতে পারবে। এবিষয়ে শীঘ্রই আপনারা জানতে পারবেন।"








