Logo

মালিক খসরু’র কব্জায় গণপূর্ত অধিদপ্তর

profile picture
বশির হোসেন খান
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১৬:০০
18Shares
মালিক খসরু’র কব্জায় গণপূর্ত অধিদপ্তর
ছবি: পত্রিকা থেকে নেওয়া।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল (ই/এম) বিভাগের একটি প্রভাবশালী অংশ দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগের কেন্দ্র। আর সেই অভিযোগের কেন্দ্রে উঠে এসেছে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) মালিক খসরুর নাম। আজিমপুর এলাকার একাধিক সরকারি আবাসন ও অবকাঠামো প্রকল্প ঘিরে তার বিরুদ্ধে যে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তা শুধু একজন কর্মকর্তাকে নয়, পুরো ব্যবস্থাপনাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মালিক খসরু কর্মজীবনের বড় একটি সময় রাজধানী কেন্দ্রিক ‘লোভনীয়’ ই/এম ডিভিশন গুলোতেই অবস্থান করেছেন। ই/এম ৩নং ডিভিশনে স্টাফ অফিসার (সহকারী প্রকৌশলী) হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর প্রভাব ও তদবির কাজে লাগিয়ে একই ডিভিশনের অধীন ই/এম ৫নং উপবিভাগে এসডিই হিসেবে পদায়ন বাগিয়ে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সেখানেই টানা তিন বছরেরও বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকাতেই ই/এম ৭নং ডিভিশনের অধীন ১৪নং উপবিভাগে বদলি হন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার অবসর নেওয়ার মাত্র ২৯ দিন আগে একটি অফিস আদেশের মাধ্যমে এই বদলি কার্যকর করা হয়। বিষয়টি নিয়ে অধিদপ্তরের ভেতরে তীব্র আলোচনা ও প্রশ্ন দেখা দেয়।

অভিযোগ সূত্র বলছে, আজিমপুরে বহুতল আবাসিক ভবন, সরকারি কার পার্কিং ও আবাসন প্রকল্পের ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কাজগুলোতেই মূলত অভিযোগের পাহাড় জমেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিকল্পিতভাবে কাজের ‘গ্যাপ’ খোঁজা হতো ঠিকাদারের অনুপস্থিতিতে সময়ে-অসময়ে সাইট ভিজিট পরে ঠিকাদারকে ডেকে ভয়ভীতি ও প্রশাসনিক চাপ দিয়ে কাজ আটকে দেওয়ার হুমকিতে মোটা অঙ্কেও দাবি করতেন। চাহিদা মত টাকা মালিক খসরুর পকেটে ঢুকলেই কাজ করতে পরতেন ঠিকাদাররা।

বিজ্ঞাপন

একাধিক ঠিকাদার জানিয়েছেন, কাজ নির্বিঘ্নে এগিয়ে নিতে বাধ্য হয়ে তারা নিয়মিত অর্থ দিতে বাধ্য হয়েছেন। অনুসন্ধানে আরও গুরুতর তথ্য উঠে এসেছে। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ প্রথমে ডলারে রূপান্তর করা হয়। এরপর আত্মীয়-স্বজনের নামে বিদেশে পাঠিয়ে আবার দেশে এনে তা ‘বৈধ’ করার চেষ্টা চলে। এসব লেনদেন পরিচালনার জন্য স্ত্রী, শ্যালক-শ্যালিকা, শ্বশুর-শাশুড়ি, ভাই-ভাতিজাদের নামে প্রায় ২৫টি ব্যাংক হিসাব ব্যবহারের তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্রমতে, ঢাকার খিলগাঁওয়ে একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে রাজকীয় বসবাস করেন মালিক মালিক খসরু। কার রয়েছে একটি ডেভেলপার কোম্পানিও। টাঙ্গাইলের মধুপুরে কমপক্ষে ২০ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। নামে-বেনামে মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি টাকার বেশি। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে ই/এম ৫নং ডিভিশন (তেজগাঁও সেকশন), কাঠের কারখানাসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে দায়িত্ব পালনের সময় বেনামি ঠিকাদারি ব্যবসার মাধ্যমেও বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই ঠিকাদার অভিযোগ করেন, ই/এম ৩নং ডিভিশনে দায়িত্বে থাকার সময় মালিক খসরু কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আড়ালে পরোক্ষভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতেন।

বিজ্ঞাপন

শুভ নামের এক ঠিকাদার বলেন, “কাজ সহজে পাওয়ার আশায় আমরা তাকে পাঁচতারকা হোটেলে আপ্যায়ন করেছি, দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ভ্রমণের ব্যবস্থা করেছি। কখনো বন্ধু, কখনো পরিবার নিয়ে তিনি ৩৪ দিন করে থেকেছেন। তারপরও সাইটে গিয়ে অযথা চাপ ও হয়রানি বন্ধ হয়নি।”

অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত মালিক খসরু বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এত বড় অঙ্কের প্রকল্পে বারবার অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও কেন কার্যকর তদন্ত হচ্ছে না, সে প্রশ্ন তুলছেন সংশ্লিষ্টরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, মালিক খসরু সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর মুরিদ। তাই তাকে কেউ কিছু বলতে পারেন না। যে বলবে তাকে ঝামেলার মধ্যে পড়তে হবে। বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী স্যার তা কাছ থেকে মাসোয়ারা নিচ্ছেন। না হলে তিনি এসে কেনো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন না।

বিজ্ঞাপন

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুর্নীতিবাজরা বহুমাত্রিক ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারলে আরও প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। আর এই ক্ষমতার অপব্যবহার করেই তারা অর্থবিত্তের মালিক হচ্ছেন। তিনি বলেন, একজন প্রকৌশলীর নিজস্ব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান থাকতে পারেন না। এটা আইন পরিপন্থি। এটা ঘোরতর অপরাধ। এটা তিনি করতে পেরেছেন তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে এবং দলীয় প্রভাবকে ব্যবহার করে। তিনি বলেন, খসরু যত অবৈধ সম্পদ অর্জন সেগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত করে পাশাপাশি তার যে ক্ষমতার অপব্যবহার এসব অপরাধের কারণে তাকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

জেবি/এসডি
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD