আর কতদিন চলবে মতিনের লুটোৎসব

বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজার ও জলযান সংগ্রহ প্রকল্পের দুর্নীতি কেবল মাঠ পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয় এর শিকড় গেড়ে বসেছে ফাইল, অফিস আর ব্যাংক লেনদেনের জটিল জালেও। তদন্তে দেখা যাচ্ছে, যেসব যন্ত্রপাতির জন্য কোটি কোটি টাকার বিল তোলা হয়েছে, সেগুলোর অস্থিত্ব কেবল কাগজে।
বিজ্ঞাপন
একটি প্রকল্প ফাইলে দেখা যায়, ২০২২ সালের মে মাসে ৪টি হাই-ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রেজ পাম্প কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। বিদেশ থেকে আমদানি দেখানো হয়েছে মালয়েশিয়ার একটি কোম্পানির মাধ্যমে। কিন্তু বন্দর কাস্টমসে সেই চালানের কোনো রেকর্ড নেই।
দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, “এটি ক্লাসিক ‘পেপার সাপ্লাই’ কাগজে সরবরাহ, বাস্তবে কিছুই নয়। ”দুদকের হাতে আসা নথিপত্রে দেখা গেছে, প্রকল্পে খোলা হয়েছে অন্তত ১৭টি এলসি, যার মধ্যে ৯টির কোনো বৈধ ব্যাংক রেকর্ড পাওয়া যায়নি। ব্যাংক সূত্র বলছে, এলসি নম্বরগুলো ভুয়া বা অন্য প্রকল্প থেকে নকল করা। অথচ সেই এলসি দেখিয়েই বিল উত্তোলন করা হয়েছে।
একজন প্রকল্প কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, “অফিসে কাগজ দেখলে মনে হবে বিশাল কাজ চলছে রঙিন ব্রোশিওর, আমদানির কাগজ, ভেন্ডর সার্টিফিকেট সবই আছে। কিন্তু মাঠে গেলে শূন্যতা ছাড়া কিছুই নেই।”
বিজ্ঞাপন
সব লেনদেনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মতিন। তদন্তে দেখা যায়, তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আলাদা নামের হলেও মালিকানা ছিল একই পরিবারের বা মতিনের ঘনিষ্ঠদের। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকার পরপরই সেই অর্থ স্থানান্তর হতো মতিনের নিয়ন্ত্রণে থাকা অ্যাকাউন্টে।
একটি ব্যাংক বিবরণীতে দেখা গেছে ঠিকাদার “আরএম ট্রেডার্স” পেয়েছে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা, তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা স্থানান্তর হয়েছে “এ. মতিন অ্যান্ড ব্রাদার্স” নামে একটি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে।
‘অডিট রিপোর্ট’ যা গোপন রাখা হয়েছিল, বিআইডব্লিউটিএর অভ্যন্তরীণ অডিট বিভাগ ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে একটি প্রতিবেদন দেয়, যেখানে বলা হয়েছিল “প্রকল্পের গড় কাজের অগ্রগতি ৪২% হলেও বিল দেওয়া হয়েছে ১০০%। যন্ত্রপাতির প্রকৃত মূল্য নির্ধারণে গড়পড়তা ৬০% অতিরিক্ত দাম দেখানো হয়েছে।” কিন্তু সেই রিপোর্টটি কখনো প্রকাশ করা হয়নি। বরং যিনি রিপোর্টটি প্রস্তুত করেছিলেন, তাঁকে পরে অন্যত্র বদলি করা হয়।
বিজ্ঞাপন
অভিযোগ সূত্র বলছে, নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মতিন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মির্জা আজমের প্রভাবে গড়ে ওঠা একটি সিন্ডিকেট বিআইডব্লিউটিএ-তে তদবির, বদলি ও টেন্ডার বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই সিন্ডিকেট পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন কর্মচারী ইউনিয়নের প্রভাবশালী দুই নেতা।
তারা হলেন, আবুল হোসেন ও সরোয়ার হোসেন। প্রকৌশলী আব্দুল মতিন এই সিন্ডিকেটের অন্যতম চালিকাশক্তি। তার দপ্তর থেকেই চলেছে নানা তদবির ও বদলির সুপারিশ, যার পেছনে রয়েছে মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেন।
এ ব্যাপারে খুলনার আন্টিহারা নৌপথ ড্রেজিং প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মতিনের মুঠো ফোনে কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফার পক্ষে জনবাণীকে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মো. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, দুদকের নিকট অভিযুক্ত কোন বিচারাধীন বিষয় প্রমাণিত হলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আইন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। চেয়ারম্যান মহোদয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে সরাসরি পরিচিতিই নন। কদাচিৎ কর্মস্থলে কোথাও হয়তবা একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ হতে পারে তবে তা অন্য পাঁচজন সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীর সাথে সমজাতীয় সম্পর্কের শামিল।








