তিতাস গ্যাসে মাফিয়া জিএম সৈয়দা আতিয়া

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে গ্যাস চুরি ও সংযোগ বিচ্ছিন্নের নামে শত কোটি টাকা হরিলুট করেছেন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দা আতিয়া বিলকিস।
বিজ্ঞাপন
টাকা দিলেই সমস্য সমাধান। একটি চক্র অবৈধ সংযোগ দিয়ে বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকার ক্ষতি করছে। আর এর নেতৃত্বে নিচ্ছেন গ্যাস সেক্টেরের মাফিয়া আতিয়া। এই চক্রের কারণে তিতাস এখন ঘুষের হাট। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী ইতোমধ্যে আতিয়া বিলকিসের পদোন্নতি, বদলি, সম্পদ ও গ্যাস সংযোগ সংক্রান্ত যাবতীয় নথি তলব করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন এবং সেই অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন।
দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আতিয়া বিলকিস একসময় কমিশনের সাবেক প্রভাবশালী কমিশনার মোজাম্মেল হক খানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। মোজাম্মেল হক খান জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তাদের পরিচয় ঘটে। পরবর্তীতে তিনি দুদকে যোগ দিলে, সেই সম্পর্ককে পুঁজি করে আতিয়া বিলকিস তিতাস গ্যাসে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার শুরু করেন।
বিজ্ঞাপন
অভিযোগ রয়েছে, তিনি দুদকের প্রভাব ব্যবহার করে সহকর্মীদের হয়রানি, পদোন্নতি বাণিজ্য, এমনকি গ্যাস সংযোগে কমিশন বাণিজ্য করতেন।
একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,“তিনি দুদকের কমিশনারের নাম ব্যবহার করে ভয় দেখাতেন। কেউ তার বিরোধিতা করলে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাঠানো হতো দুদকে।”
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি সরকারি ছুটিতে ছেলেকে দেখতে কানাডা যান আতিয়া বিলকিস। কিন্তু নির্ধারিত সময় শেষে দেশে না ফিরে অবৈধভাবে চার দিন অতিরিক্ত অবস্থান করেন। বিষয়টি নজরে আসলে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে।
কমিটির প্রধান ও জেনারেল ম্যানেজার (অর্থ) মো. রশিদুল আলম জানান “তিনি বলেছেন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তাই দেশে ফিরতে দেরি হয়েছে। তবে অনুমতি ছাড়া অতিরিক্ত অবস্থানের বিষয়টি সত্য।”
তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, আতিয়া বিলকিসের কাছে একাধিক পাসপোর্ট, ছুটি না নিয়েই বিদেশ সফর এবং বিদেশে আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞাপন
দুদকের চিঠিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া এলাকায় দেওয়া গ্যাস সংযোগের তথ্য। অভিযোগ রয়েছে, ওই সময় এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়, যার একটি বড় অংশ কানাডায় পাচার করা হয়েছে।
দুদক তার বিরুদ্ধে মানবসম্পদ বিভাগে বদলি সংক্রান্ত অনিয়ম, পদোন্নতির অসঙ্গতি এবং আর্থিক লেনদেনের তথ্য চেয়েছে।
তিতাসের এক কর্মকর্তা বলেন,“আতিয়া বিলকিস কোম্পানির অভ্যন্তরীণ প্রশাসনকে নিজের ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করতেন। তার প্রভাবের কারণে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেত না।”
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ওএসডি মোতাকাব্বিরের বিলাসী জীবন
বিষয়টি নিয়ে বারবার ফোন ও এসএমএস পাঠানো হলেও সৈয়দা আতিয়া বিলকিস কোনো সাড়া দেননি।
তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুদক তদন্তের পাশাপাশি কোম্পানির নিজস্ব তদন্তও চলছে। প্রয়োজনে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিজ্ঞাপন
প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন,“এ ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে, সরকারি প্রতিষ্ঠানে এখনো ব্যক্তি-প্রভাব ও দুর্নীতির সংস্কৃতি গভীরভাবে প্রোথিত। এমন কর্মকর্তারা জবাবদিহির আওতায় না এলে, প্রতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ফিরবে না।”
দুদকের অনুসন্ধান এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। তবে তদন্তে প্রমাণ মিললে আতিয়া বিলকিসের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের মামলা দায়ের হতে পারে।
দুদকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,“প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ শক্ত। আমরা পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করছি। দুর্নীতির প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কেউ ছাড় পাবে না।”
বিজ্ঞাপন








