Logo

গণপূর্তের প্রকৌশলী ময়নুল ও রায়হান ঘুষের সাম্রাট

profile picture
বশির হোসেন খান
১৭ নভেম্বর, ২০২৫, ১৫:২৭
13Shares
গণপূর্তের প্রকৌশলী ময়নুল ও রায়হান ঘুষের সাম্রাট
ছবি: পত্রিকা থেকে নেওয়া।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের ইলেকট্রিক্যাল মেকানিক্যাল (ই-এম) বিভাগ-৩ ঘুষ বাণিজ্যের ‘হটস্পট’ হিসেবে বহুদিন ধরে আলোচিত। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত ১০ লাখ টাকার ঘুষ লেনদেনের ভিডিও যেন দীর্ঘদিনের চাপা অভিযোগের ঢাকনা খুলে দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ভিডিওর সূত্র ধরে যে তথ্য মিলছে তা আরও উদ্বেগজনক। অভিযোগকারীদের ভাষায়, এটি একজন প্রকৌশলীর ঘটনা নয় এটি একটি দুর্নীতির মেশিনারি। এই পরিস্থিতিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্তে নেমেছে। কমিশনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায় এটি বড় নেটওয়ার্কের অনুসন্ধান। শুধু ভিডিওতে থাকা ব্যক্তি নয়, পেছনের কাঠামোও চিহ্নিত করা হবে।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবদুল খালেক আকনের সামনে ঠিকাদার নগদ ১০ লাখ টাকা রেখে বলছেন “স্যার, ১০ লাখ চেয়েছিলেন, ১০ লাখই দিলাম।” এই ভিডিও প্রকাশ পাওয়ার পর ই/এম বিভাগ-৩ এ আর্থিক অনিয়ম, টেন্ডার কারচুপি ও ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে বহু অভিযোগ নতুনভাবে সামনে আসতে শুরু করেছে। ভিডিওটি ‘স্ট্যান্ডঅ্যালোন’ ঘটনা নয়। এর আগে জমা পড়া অভিযোগগুলো আবার যাচাই হচ্ছে। খালেক আকন একাই এই লেনদেন পরিচালনা করতেন এমন কোনো ইঙ্গিত এখনো পাওয়া যায়নি।”

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক ঠিকাদার দাবি করেছেন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী খালেক আকনের পেছনে থেকে পুরো সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করেন নির্বাহী প্রকৌশলী এস. এম. ময়নুল হক। অভিযোগকারীরা দাবি করেন, কাজের বিল ছাড়, প্রকল্প অনুমোদন এবং মালামালের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ঘুষের হার ও পদ্ধতি নির্ধারণে নির্বাহী প্রকৌশলীর ভূমিকা রয়েছে বলে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। যদিও দায়িত্বপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন যা নেওয়া হয়েছে তা পুরাতন মালামাল ক্রয়ের টাকা। তবে অভিযোগকারীরা এটিকে অসঙ্গত ও দায় এড়ানোর ব্যাখ্যা বলে অভিহিত করছেন। ময়নুল হক বলেন, পুরাতন মালামাল ক্রয়ের মূল্য হিসেবে এই অর্থ লেনদেন হয়েছে। তবে দুদকের একটি সূত্র বলছেন, এই ব্যাখ্যার সঙ্গে ভিডিওর দৃশ্য মেলে কি না তা যাচাই করা হবে।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারি মালামাল বিক্রির টাকা নগদ গ্রহণ বৈধ নয়। ব্যাখ্যাটি সন্দেহজনক। অভিযোগকারীদের বক্তব্য অনুযায়ী গণপূর্তের ই/এম-৩ ও তেজগাঁও সিভিল বিভাগ-৩ মধ্যে একটি সমন্বিত ‘প্রভাব নেটওয়ার্ক’ দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। বাপিডিপ্রকৌস সভাপতি হিসেবে উঠে এসেছে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ রায়হান মিয়ার নাম। তাদের অভিযোগ ঠিকাদার নির্বাচন, সুপারিশ বাণিজ্য, বিল নির্দেশ এসব ক্ষেত্রে রায়হানের ‘পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ’ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বলেন, রায়হান মিয়ার আশীর্বাদ থাকলে নিয়ম, যোগ্যতা, টেন্ডার কিছুই বাধা নয়।”

দুদক সূত্র নিশ্চিত করেছে, রায়হানের নথিপত্রও যাচাইয়ের আওতায় এসেছে। তদন্তে যুক্ত একটি সূত্র জানায় অভিযোগকারীরা যে তথ্য দিচ্ছেন, সেটি একটি সংগঠিত প্রক্রিয়ার দিকেই ইঙ্গিত করছে। কাজ না করেও বিল উত্তোলনের মতো অভিযোগও এসেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, ফাইল যাচাই, আর্থিক লেনদেন ট্র্যাক, প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি মিলিয়ে দেখা, এসব কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হুমায়রকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে উত্তর মেলেনি।

দুদক সূত্র বলছে তদন্তের অংশ হিসেবে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদেরও ব্যাখ্যা নেওয়া হবে। নীরবতা কোনো সমাধান নয়। ঠিকাদাররা বলছেন, ই-এম বিভাগ-৩ দীর্ঘদিন ধরেই ‘ঘুষ-নির্ভর’ নির্বাহী প্রকৌশলী কিছু কর্মকর্তা মিলে তৈরি করেছেন কর্তৃত্বের বলয় ভিডিওটি পুরো নেটওয়ার্ক উন্মোচনের সুযোগ তৈরি করেছে। তাদের কথা দুদক এবার কঠোর হলে পুরো চক্র ধরা পড়বে।

তেজগাঁও গণপূর্তের সিভিল বিভাগ-৩ উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ রায়হান মিয়া বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়। কারণ ভিডিওটি ফাঁস হওয়ার পর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী খালেক আকন আমাদের কাছে আসছে। কিন্তু আমি এই বিষয় তার পক্ষে কোনো পদক্ষেপ দেয়নি। যদি কেউ বলে থাকে তাহলে ভুল বলেছে। আমি এই চক্রের সঙ্গে জড়িত নয়।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতিবাজরা যতই ক্ষমতাধর হউক কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। তাদের আইনের আওয়ায় আনতে হবে।

জেবি/আরএক্স
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD