এক রাতেই নিঃস্ব শতাধিক পরিবার

ভোলার সদর উপজেলার বিচ্ছিন্ন কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝেরচর গ্রামে মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে এক রাতেই শতাধিক পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। বসতভিটা, ফসলি জমি, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদরাসা থেকে শুরু করে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্প সবই নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। এখন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন বাস্তুচ্যুতরা।
বিজ্ঞাপন
ষাটোর্ধ্ব শামসুন নাহার ও জাহানারা বেগম, যারা দীর্ঘ তিন দশক প্রতিবেশী হিসেবে পাশাপাশি বসবাস করতেন, আজ ভিটেমাটি হারিয়ে ছোট একটি টং ঘরে ঠাঁই নিয়েছেন। শুধু তারা নন, একই দুর্দশায় পড়েছেন শতাধিক পরিবার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, একসময় প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস ছিল রামদেবপুর, মধুপুর ও টবগী গ্রামে। কিন্তু গত কয়েক মাসের ভাঙনে ইতোমধ্যে ৬টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের মধ্যে ৫টি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে বাকি একটি প্রকল্পও। নদীতে হারিয়ে গেছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা, মসজিদ, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বাজার ও রাস্তাঘাট।
আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় ২ ভাইকে কুপিয়ে হত্যা
বিজ্ঞাপন
বাসিন্দারা জানান, ভাঙনের ফলে কেউ গরুর ঘরের পাশে চালা দিয়ে, কেউবা নদীতীরে টিনের টং ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। স্কুল ভবন হারিয়ে উত্তর-পশ্চিম কাচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস চলছে সাইক্লোন শেল্টারে। এমনকি স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে একটি মাটির কিল্লার ভেতরে।
স্থানীয় কৃষক মো. স্বপন ও আবুল হাসেম জানান, এই চরেই আগে ক্যাপসিকামসহ নানা সবজির বাম্পার ফলন হতো। এখন ফসলি জমি সব নদীতে চলে গেছে। জেলে পরিবারগুলোও ঘরবাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন।
বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, চর রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। তাদের একটাই দাবি- অবশিষ্ট চর রক্ষায় দ্রুত জিওব্যাগ বা সিসি ব্লক বসানো এবং বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোকে সরকারি সহযোগিতা প্রদান।
বিজ্ঞাপন
ভোলা পানি উন্নয়ন বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিয়া উদ্দিন আরিফ জানান, “আমরা অবগত আছি। বর্ষা মৌসুমে নদীর প্রবাহ বেড়েছে। মাঝেরচর পরিদর্শন করেছি। প্রকল্প গ্রহণের জন্য অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ চলছে। বাস্তবায়ন হলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে।”
মেঘনার ভয়াল ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়া মাঝেরচর আজ যেন ভোলার মূল ভূখণ্ডের চোখের আড়ালে ঘটে যাওয়া এক নির্মম বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।