তিস্তা নদী থেকে থামছে না অবৈধ পাথর উত্তোলন, বাড়ছে ভাঙনের ভয়

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে তিস্তা নদী থেকে পাথর উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। শত শত ইঞ্জিনচালিত নৌকায় প্রতিদিন পাথর তোলা হচ্ছে এবং তা ট্রলির মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
বিজ্ঞাপন
ডিমলার বাইশপুকুর, চরখড়িবাড়ী, একতা বাজার, তেলির বাজার, তিস্তা বাজার ও বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় অন্তত ১৫ থেকে ২০টি স্থানে এভাবে অবাধে পাথর তোলা হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
তাদের অভিযোগ, এই কর্মকাণ্ডের কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হচ্ছে, তীরবর্তী ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। একই সঙ্গে ট্রলিচালিত পাথর পরিবহনের কারণে গ্রামীণ রাস্তাগুলো দ্রুত ভেঙে যাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
২০১৫ সালে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী জেলা প্রশাসকের কাছে নুড়ি পাথর উত্তোলনের অনুমতি নেন। পরে তারা বোমা মেশিন বসিয়ে নিজস্ব ও খাস জমি থেকে পাথর তুলতে শুরু করেন। যদিও স্থানীয়দের আন্দোলনের মুখে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে তা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এরপর থেকেই প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় গোপনে নদী থেকে অবৈধভাবে পাথর তোলা চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
চরখড়িবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা হাসিনুর রহমান বলেন, “এভাবে নদী থেকে পাথর তুলতে থাকলে নদী তার গতিপথ হারাবে। আমরা যারা নদীর ধারে থাকি, প্রতিদিন ভয়ে থাকি, কখন ঘরবাড়ি নদীতে চলে যায়।”
বাইশপুকুর গ্রামের রবিউল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, “ভোর থেকে রাত পর্যন্ত পাথর তোলা হয়। ট্রলির কারণে গ্রামের রাস্তা ভেঙে গেছে। প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয় না।”
বিজ্ঞাপন
একতা বাজারের কৃষক নুরুল আমিন জানান, পাথর তোলার কারণে তার প্রায় তিন বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি বলেন, “আমরা কৃষকরা এখন পথে বসার শঙ্কায় আছি।”
তিস্তা বাজারের দোকানদার আতিকুর রহমান জানান, “রাতে এত ট্রলি চলে যে রাস্তায় হাঁটাও বিপজ্জনক হয়ে গেছে। কয়েক দিন আগে একটি ট্রলি উল্টে কয়েকজন আহত হয়েছে।”
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, “সবার জানা কারা এ কাজ করছে। প্রভাবশালী মহলের আশ্রয় ছাড়া এমন কাজ সম্ভব নয়। মাঝে-মধ্যে অভিযান হয়, কিন্তু দু-এক দিন পর আবার আগের মতো শুরু হয়ে যায়।”
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরানুজ্জামান জানান, “নদী থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন সম্পূর্ণ বেআইনি। আমরা তথ্য পেলেই অভিযান পরিচালনা করি।”
তবে স্থানীয়দের দাবি, কেবল অভিযান নয়, স্থায়ীভাবে এ পাথর উত্তোলন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে তিস্তার ভাঙন ভয়াবহ বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে।








