নীলফামারী গ্যাসহীন শিল্পাঞ্চল, ক্রমশ বাড়ছে অনিশ্চয়তা

নীলফামারীর শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের সরকারি ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল ২০২৩ সালেই। ওই ঘোষণার পর প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে দুই বছর আগে। তবুও এখনো একটিও শিল্প কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়নি।
বিজ্ঞাপন
নীলফামারীর শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের সরকারি ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল ২০২৩ সালেই। ওই ঘোষণার পর প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে দুই বছর আগে। তবুও এখনো একটিও শিল্প কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়নি।
সিটিগেট ও সরবরাহকেন্দ্র চালু হলেও কার্যক্রম নেই। এতে হতাশ শিল্পমালিকরা। একই সঙ্গে থমকে যাচ্ছে জেলার সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন।
উত্তর জনপদের জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীলফামারীসহ আশপাশের জেলায় গ্যাস দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ওই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে অনুমোদন পায় বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর পর্যন্ত পাইপলাইন স্থাপনের প্রকল্প। এতে ১৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন, তিনটি গ্যাসস্টেশন নির্মাণ ও একাধিক নদী-খাল ক্রসিংসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন হয়। প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়ায় ১হাজার ৪৭০ কোটি টাকা। যেটা পূর্ব নির্ধারিত ব্যয়ের তুলনায় অনেক বেশি। পরিকল্পনা ছিল ২০২৩ সালের শেষে গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে।কিন্তু ওই সময়সীমা অনেক আগেই পার হয়ে গেলেও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো সংযোগের অপেক্ষায়।
বিজ্ঞাপন
গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) জানিয়েছে, রেগুলেটিং ও মিটারিংয়ের কাজ শেষ। পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস সরবরাহ লিমিটেডের (পিজিসিএল) অধীনে সৈয়দপুর সরবরাহকেন্দ্রের ডিআরএস নির্মাণও সম্পন্ন। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হলো, সিটিগেট ও সরবরাহকেন্দ্র দুটি প্রধান ফটক বন্ধ রেখে প্রহরীর হেফাজতে পড়ে আছে। সেখানে নেই কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নেই কোনো কার্যক্রম।
সূত্রের দাবি, সৈয়দপুর সিটিগেট স্টেশন থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে। ইতোমধ্যেই উত্তরা ইপিজেড, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা ও বিসিক শিল্পনগরীর পাইপলাইন বসানো হয়েছে। অর্থাৎ অবকাঠামোগত কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগহীনতায় গ্যাস সরবরাহ আটকে আছে। স্থানীয় শিল্প উদ্যোক্তাদের অভিযোগ বাইরের উৎস থেকে উচ্চমূল্যে গ্যাস কিনে উৎপাদন চালাতে হচ্ছে। এতে খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। উদ্যোক্তাদের ভাষায়, সব প্রস্তুত থাকার পরও কেন সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না, আমরা বুঝতে পারছি না।
বিজ্ঞাপন
উত্তরা ইপিজেড, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা বিসিক শিল্পনগরীসহ ভারী ও মাঝারি শিল্প কারখানাগুলো বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে গ্যাস কিনে উৎপাদন চালাচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে। অনেকে আংশিক উৎপাদন চালাচ্ছে, কেউ কেউ আবার বন্ধ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। এতে নতুন বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক উদ্যোক্তা ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। হাজার হাজার মানুষের সম্ভাব্য কর্মসংস্থান অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, আমরা প্রতিদিন বাইরের উৎস থেকে গ্যাস কিনে আনি। এতে উৎপাদন ব্যয় দ্বিগুণ হচ্ছে। অথচ সরাসরি সংযোগ থাকলে খরচ অর্ধেকে নেমে আসত। দ্রুত সময়ের মধ্যে সংযোগ না দিলে শিল্পাঞ্চল হিসেবে নীলফামারীর অগ্রযাত্রা থেমে যাবে।
রয়েল রিলাক্স মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজের (নোয়া) পরিচালক রাজু পোদ্দার বলেন, কেবল আশ্বাসে সমস্যার সমাধান হবে না। বাস্তবে গ্যাস সরবরাহ শুরু না হলে জেলার শিল্প খাত ক্ষতির মুখে পড়বে।
বিজ্ঞাপন
রানু এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুসান্ত কুমার বলেন, গ্যাস সংযোগ পেলে উৎপাদন ব্যয় কমবে, নতুন কারখানা গড়ে উঠবে কর্মসংস্থান বাড়বে।জেলাজুড়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। কিন্তু গ্যাস না আসায় সম্ভাবনা ধূলিসাৎ হচ্ছে। অবিলম্বে গ্যাস সরবরাহ না হলে বিনিয়োগ ও উৎপাদন দুটোই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
নতুন শিল্প উদ্যোক্তারা জানান, তারা ধারণা করেছিলেন দ্রুতই গ্যাস পাবেন। কিন্তু দুই বছর পার হলেও এখনো পদক্ষেপ নেই। এতে তারা বাধ্য হয়ে উচ্চমূল্যে গ্যাস কিনছেন। নিয়মিত লোকসান গুনছেন। তাদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে কোনো নতুন বিনিয়োগকারী এখানে আসবে না। বিদ্যমান কারখানাগুলোও টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
বিজ্ঞাপন
বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, বিসিকের সামনে পর্যন্ত পাইপলাইন বসানো হয়েছে। আমরা একাধিকবার পিজিসিএলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কোনো অগ্রগতি নেই। উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, আমরা আশাবাদী, খুব শিগগিরই সংযোগ দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে পিজিসিএল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে।








