বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ, ৮ জেলায় ভয়াবহ লোডশেডিং

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অবস্থিত কয়লাভিত্তিক বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে পার্বতীপুরসহ উত্তরাঞ্চলের আট জেলায় চলছে ভয়াবহ লোডশেডিং, কোথাও আবার লো-ভোল্টেজ সমস্যায় বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষ।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) টারবাইন বিকল হয়ে ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তৃতীয় ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর, সোমবার (২০ অক্টোবর) যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ১২৫ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটটিও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তিনটি ইউনিটের সবকটিই অচল হয়ে পড়েছে।
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। তৃতীয় ও প্রথম ইউনিটে মেরামত কাজ চলছে, তবে আগামী এক সপ্তাহের আগে উৎপাদন শুরু হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, “যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি দ্রুত ইউনিটগুলো সচল করার। দুটি ইউনিট চালু হলে লোডশেডিং অনেকটাই কমে আসবে।”
দ্বিতীয় ইউনিটটি ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে সংস্কারাধীন থাকায়, তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যা চলছে। তবু কেন্দ্রটি উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করে আসছে। বর্তমানে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও, ঘাটতি পূরণে এই কেন্দ্রের বিকল্প নেই।
দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর পার্বতীপুর জোনাল কার্যালয়ের ডিজিএম জহুরুল হক বলেন, “বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় ভয়াবহ লোডশেডিং হচ্ছে। আমাদের এলাকায় দৈনিক চাহিদা ১৮ মেগাওয়াট, কিন্তু সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৬ থেকে ৭ মেগাওয়াট। এতে প্রায় ৮০ হাজার গ্রাহক মারাত্মক ভোগান্তিতে রয়েছেন।”
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় বাসিন্দা আবু সালেম বলেন, “একদিকে প্রচণ্ড গরম, অন্যদিকে ঘন ঘন লোডশেডিং। দিন-রাত বিদ্যুৎ না থাকায় জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।”
তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২৭৫ মেগাওয়াটের তৃতীয় ইউনিট থেকে প্রতিদিন ১৪০-১৫০ মেগাওয়াট, প্রথম ইউনিট থেকে ৪০-৫০ মেগাওয়াট এবং দ্বিতীয় ইউনিট থেকে ৬০-৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হতো। তিনটি ইউনিট একসঙ্গে সচল রাখতে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার ২০০ টন কয়লা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: হাতিয়ায় ২ টন ইলিশ জব্দ, আটক ৪৬
বিজ্ঞাপন
তবে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রটির তিনটি ইউনিট কখনোই একযোগে চালু রাখা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কোল ইয়ার্ডে ৪ লাখ ৬০ হাজার টন কয়লা মজুত থাকলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকায় সেটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) জানিয়েছে, পার্বতীপুর শহরে চাহিদা যেখানে ৬-৭ মেগাওয়াট, সেখানে সরবরাহ হচ্ছে সর্বোচ্চ ৩ মেগাওয়াট। শহরের প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক এই সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা বলছেন, দ্রুত বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সচল না হলে উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎ সংকট আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।