Logo

আলুর দাম ২২ টাকা নির্ধারণ, কৃষক পাচ্ছেন ৫ টাকা

profile picture
উপজেলা প্রতিনিধি
রংপুর
২৪ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৩৯
10Shares
আলুর দাম ২২ টাকা নির্ধারণ, কৃষক পাচ্ছেন ৫ টাকা
ছবি: প্রতিনিধি

রংপুরের তারাগঞ্জে সরকারের নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি না হওয়ায় হতাশায় পড়েছেন চাষিরা। হিমাগারে আলুর দাম সরকার নির্ধারণ করেছেন ২২ টাকা, প্রতি কেজি আলুর দাম ১২ টাকা হলেও হিমাগার ভাড়া বাদ দিয়ে কৃষক হাতে পাচ্ছেন ৫ টাকার কিছু বেশি।

বিজ্ঞাপন

চাষিরা বলছেন, আলুর দামে ধস নামায় ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। উৎপাদন খরচের সঙ্গে হিমাগারে সংরক্ষণ খরচও বেড়েছে। লাভ তো দূরের কথা, খরচের টাকা তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকরা। হিমাগার পর্যায়ে উৎপাদন খরচ ২৯ থেকে ৩০ টাকা হলেও আলু বিক্রি করে কৃষকেরা হাতে পাচ্ছেন মাত্র ৫ টাকা। অথচ ২৭ আগস্ট হিমাগার পর্যায়ে আলুর কেজি ২২ টাকা বেঁধে দেয় সরকার। কিন্তু এ দামে হিমাগারে কেউ আলু কিনছেন না।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার মৌসুমে তারাগঞ্জ উপজেলায় ৪ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার ৯৫ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। তিনটি হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছে ১৬ হাজার মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত হিমাগার থেকে আলু বের হয়েছে চার হাজার মেট্রিক টন। অথচ গত বছর এ সময় তিন ভাগের দুই ভাগ আলু বের করা হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠপর্যায়ে আলু উৎপাদন খরচ কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২২ টাকা। বস্তা, গাড়িভাড়া, শ্রমিকের খরচ ও হিমাগারে সংরক্ষণ খরচসহ এ খরচ দাঁড়াচ্ছে কেজিপ্রতি ২৯ থেকে ৩০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে বাজারে আলুর দাম প্রতি কেজি ১২ টাকা। হিমাগারে প্রতি কেজি আলুর দাম ১২ টাকা হলেও হিমাগারভাড়া বাদ দিয়ে কৃষকের হাতে আসছে মাত্র ৫ টাকার কিছু বেশি। ফলে সরকারি ক্রয় দর ২২ টাকা আর বাস্তবে কৃষকের প্রাপ্তি ৫ টাকার মধ্যে বিশাল বৈষম্য তৈরি হয়েছে। এতে হিমাগার পর্যায়ে কেজিতে কৃষকের ১৮ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) উপজেলার তিনটি হিমাগারে দেখা গেছে, প্রকারভেদে প্রতি কেজি আলু সাড়ে ১০ থেকে ১২ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা না থাকায় তেমন কর্মব্যস্ততা দেখা যায়নি। হিমাগারের শেডগুলো অধিকাংশ ফাঁকা। সিনহা হিমাগারে কথা হয় বামনদীঘি গ্রামের কৃষক সোনা মিয়ার সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘তিন একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। জমিতে তার উৎপাদন খরচ কেজিপ্রতি ২০ টাকা পড়েছে। মৌসুমের শুরুতে ১৪ টাকা কেজি হওয়ায় লোকসানের ভয়ে আলু হিমাগারে রেখেছেন। সরকার ২২ টাকা দাম বেঁধে দিলেও, সেই দামে কেউ আলু নেয় না।’

বিজ্ঞাপন

ইকরচালীর বড় আলুচাষি ইকবাল হোসেন বলেন, ‘হিমাগারে জায়গা না পেয়ে গোডাউনে, ঘরে আলু সংরক্ষণ করেছি। তা পচে যাওয়ায় ট্রাকে ট্রাকে সড়কের ধারে ফেলেছি। হিমাগারে যে আলু আছে, দাম না থাকলে ছেড়ে আসতে হবে।’

ঘনিরামপুর ঝাকুয়াপাড়া গ্রামের কৃষক আজিজার রহমান বলেন, ‘এক কেজি আলু উৎপাদনে খরচ পড়ছে ২০ টাকা, বস্তা, গাড়িভাড়া, হিমাগার ভাড়াসহ ৩০ টাকা। অথচ বাজারে পাচ্ছি ১২ টাকা। হিমাগারের খরচ বাদ দিয়ে হাতে আসে ৫ টাকা। এভাবে লোকসান হলে কৃষকেরা আলু চাষ ছেড়ে তামাক চাষে ঝুঁকবেন।’

বিজ্ঞাপন

সিনহা হিমাগারের ব্যবস্থাপক দুলাল হোসেন বলেন, ‘হিমাগারের আলু সংরক্ষিত আছে ১ লাখ ৫১ হাজার বস্তা। এই সময়ে গত বছর তিন ভাগের বেশি আলু বের হয়েছিল। এবার এখন পর্যন্ত মাত্র ৩২ হাজার বস্তা আলু বের হয়েছে। আলুর অবস্থা খুবই ভয়াবহ।’

তারাগঞ্জের এন.এন হিমাগারের ব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘১৫ ডিসেম্বরে মধ্যে হিমাগারের সব আলু বের হয়ে যায়। কিন্তু এবার যে পরিস্থিতি তাতে মনে হয় না আলু সব বের হবে। ২ লাখ ৬০ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ করা থাকলেও এ পর্যন্ত আলু বের হয়েছে মাত্র ৫৫ হাজার বস্তা।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীবা রানী রায় বলেন, ‘সরকারিভাবে রংপুরে আলু কেনা হলে কৃষকরা উপকৃত হবেন। আগামী মৌসুমে আলুর চাষ কমবে। কৃষকরা যাতে পরিকল্পিতভাবে আলু চাষ করেন, তা নিয়ে মাঠে কাজ করবেন যাতে লোকসানে না পড়েন কৃষক।’

জেবি/এসএ
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD