খেজুর গাছ তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে গাছিরা

গ্রামীণ পরিবেশ এখন মাধুর্যমন্ডিত। শীতের আগমনি বার্তা বইতে শুরু করেছে বাতাসে। হেমন্তের শুভ্রতা ও নান্দনিক পালা বদলের ছোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে প্রকৃতির প্রতিটি কোণে কোণে। মাঠজুড়ে পাকা ধানের শীষে ঝুলে আছে শিশির বিন্দু, আর ভোরের কুয়াশা জানিয়ে দিচ্ছে শীত সমাগত।
বিজ্ঞাপন
এই সময়টাতেই জীবননগর উপজেলায় গাছিদের ব্যস্ততা শুরু হয় খেজুর গাছ তোলাকে ঘিরে। উপজেলার জীবননগর, খয়েরহুদা, কাশিপুর, মাধবখালী, তেঁতুলিয়া, হরিহরনগর, সদরপাড়াসহসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যেই গাছিরা খেজুর গাছ উঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোথাও কোথাও আবার শুরু হয়ে গেছে রস সংগ্রহের কাজ।
উপজেলার প্রতাবপুর গ্রামের শুকুর মিয়া জানান, এবার আগাম শীতের আভাস পাওয়ায় তারা সময়ের আগে থেকেই কাজ শুরু করেছেন। খেজুর গাছের গোড়া পরিষ্কার করা, ধারালো দা, বালিধারা ও ভাঁড় সংগ্রহের কাজ চলছে পুরোদমে। প্রতিবছর শীতের শুরুতেই অঞ্চলের এই খেজুর রস ও গুড় দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক চাহিদা পায়। দেশ ছেড়ে খেজুরের গুড় বিদেশেও পাঠানো হয় স্বজনদের জন্য। প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তৈরি হওয়ায় এই রস ও গুড়ের স্বাদ অতুলনীয়।
বিজ্ঞাপন
প্রকৃতির এই নান্দনিক পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গাছিদের পরিশ্রম ও আনন্দে মুখর হয়ে উঠেছে গ্রামীণ জনপদ। শিশিরভেজা ভোরে খেজুর গাছ থেকে ফোঁটা ফোঁটা রস পড়ার শব্দ যেন জানিয়ে দিচ্ছে শীত এসেছে, বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর রসের মৌসুম শুরু হলো।
জীবননগর মাধবখালী গ্রামের গাছি মতিয়ার রহমান জানান, এক সপ্তাহ পরই খেজুর গাছের নলি গোঁজা হবে। আগাম রস থেকে গুড় তৈরি হলে চড়া দামে বাজার ধরা যাবে। সুমিষ্ট খেজুরের রস দিয়ে তৈরি হবে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সব খাবার। নলিন গুড়ের পাটালি থেকে শুরু করে মজাদার খাবার।
এদিকে পঞ্জিকার পাতার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে জীবননগরের প্রাণ-প্রকৃতি। হেমন্তের শুভ্রতা ও বিন্দু বিন্দু শিশিরে নান্দনিক পালাবদলের বার্তা নিয়ে এসেছে শীতের আগমনি বার্তা। এক সপ্তাহ ধরে জীবননগরে শীতের আবহ শুরু হয়েছে। মৃদু হিমশীতল পরিবেশ লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে, ভোর সকালের মৃদু কুয়াশা ও রাতের শীতল হাওয়া বেড়েছে। শীতের আগমনি বার্তায় মানুষ তাদের শীতকালীন সার্বিক প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছেন। শীতে পরিধানযোগ্য গরম কাপড়, কাঁথা, কম্বল প্রস্তুত ও পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত গ্রামের নারীরা। চলছে শীতকালীন পোশাক ও কাঁথা-কম্বল রোদের শুকানোর কাজ।
বিজ্ঞাপন
উপজেলার কালা গ্রামের গৃহবধূ ছাবিনা বেগম জানান, বর্ষাকাল চলে গেছে। বৃষ্টির সময় বাড়ির চারপাশে ঝোপ-জঙ্গল হয়ে যায়। কাদাপানি জমে থাকে। এখন শীতের টান চলে এসেছে। বসত বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করে দিন যাচ্ছে। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই এখন উঠান বাড়ি প্রস্তুত করতে তারা ব্যস্ত। খেজুরের গুড় ও মাস খানিক নবান্ন শুরু হবে।
জীবননগর উপজেলার কৃষি অফিসার মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, জীবননগর অঞ্চলে খেজুর গাছ তোলার কাজ চলছে। গাছিদের আগেই নিরাপদ রস, গুড় ও পাটালি উৎপাদনে প্রশিক্ষণ দেওয়া আছে। তারা এবারও প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে নিরাপদ রস উৎপাদন করতে পারবে।








