Logo

সাড়ে চার শতাব্দীর ঐতিহ্যে দাঁড়িয়ে আছে খেরুয়া মসজিদ

profile picture
উপজেলা প্রতিনিধি
বগুড়া
১৬ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:৩০
21Shares
সাড়ে চার শতাব্দীর ঐতিহ্যে দাঁড়িয়ে আছে খেরুয়া মসজিদ
খেরুয়া মসজিদ | ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ার শেরপুরে সবুজ-নির্জন পরিবেশে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশে মুসলিম স্থাপত্যের অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন খেরুয়া মসজিদ। প্রায় সাড়ে চারশ বছরের ইতিহাস ধারণ করা এই স্থাপনাটি আজও তার অনন্য নির্মাণশৈলী ও আধ্যাত্মিক আবহে দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে চলেছে। দেশের যেসব ঐতিহাসিক মসজিদ স্থাপত্য ও শিল্পমূল্যে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, খেরুয়া মসজিদ তাদের মধ্যে অন্যতম।

বিজ্ঞাপন

বগুড়া শহর থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার দূরের খন্দকারটোলা গ্রামে অবস্থিত এ মসজিদে প্রবেশের আগেই নজরে পড়ে ঘেরা সীমানা প্রাচীর। ভেতরে ঢুকলে দেখা যায় প্রতিষ্ঠাতার কবর, যা মসজিদের ইতিহাসকে আরও জীবন্ত করে তুলে ধরে।

ঐতিহাসিক তথ্য বলছে, সুলতানি ও মুগল স্থাপত্যের সম্মিলনে নির্মিত এ মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন আরব থেকে আগত আব্দুস সামাদ ফকির। মীর্জা নবাব মুরাদ খানের পৃষ্ঠপোষকতায় ৯৮৯ হিজরি বা ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণকাজ শুরু হয়। উত্তর-দক্ষিণমুখী এই স্থাপনার বাইরের দৈর্ঘ্য ৫৭ ফুট ও প্রস্থ ২৪ ফুট। ভেতরের অংশ তুলনামূলক ছোট— দৈর্ঘ্য ৪৫ ফুট, প্রস্থ ১২ ফুট। ছয় ফুট পুরু দেয়াল সেই সময়কার নির্মাণশক্তির নিদর্শন বহন করে।

বিজ্ঞাপন

তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের চার কোণায় রয়েছে চারটি মিনার। পূর্ব দেয়ালে তিনটি, আর উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুটি দরজা— মোট পাঁচটি প্রবেশপথ। ভেতরে রয়েছে তিনটি মেহরাব, যেগুলোর খিলান, কার্নিশের নিচে সারিবদ্ধ নকশা ও অলংকরণ মুগল স্থাপত্যশৈলীর সৌন্দর্য উন্মোচন করে। কিছু দেয়ালে পোড়া মাটির অলংকরণ এখনও টিকে আছে, যদিও সংখ্যা খুব সীমিত।

নির্মাণে ব্যবহৃত ইট, চুন, শুড়কি ছাড়াও বিশাল কৃষ্ণপাথর মসজিদের স্থায়িত্ব বাড়িয়েছে। মসজিদের সামনের দেয়ালে একসময় দুটি শিলালিপি ছিল। ধারণা করা হয়, একটি শিলালিপির ভেতর মূল্যবান সম্পদ সংরক্ষণ করা হয়েছিল, যা পরবর্তীতে ব্যবহার করা হয়। অন্য শিলালিপিটি বর্তমানে সংরক্ষিত আছে করাচি জাদুঘরে। আকবর শাসনামলের নির্মাণশৈলী— ইটের বিন্যাস, খাড়া প্যানেল, ফুল-লতা-পাতার নকশা— সবই দেয়ালে স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে।

নব্বইয়ের দশকে অবহেলায় ক্ষতিগ্রস্ত মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে সংস্কার করা হয়। তবে আজও মসজিদে যাওয়ার কাঁচা পথটি দর্শনার্থীদের জন্য কিছুটা ভোগান্তির কারণ।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় বাসিন্দা সামাদ মিয়া জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও বিদেশি পর্যটকরাও এ মসজিদ দেখতে আসেন। তার মতে, যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হলে দর্শনার্থীর সংখ্যা আরও বাড়বে এবং নতুন প্রজন্ম ঐতিহ্যবাহী মুসলিম স্থাপত্য সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করবে।

মসজিদের মুয়াজ্জিম মো. জুবায়ের বলেন, এ মসজিদই এ এলাকার মুসলিম আমলের অন্যতম প্রাচীন স্থাপনা। আব্দুস সামাদ ফকির স্থানীয় জনবসতি দেখে এখানে মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন এবং মীর্জা মুরাদ খানের সহযোগিতায় নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও জানান, নিয়মিত নামাজে সব বয়সের মুসল্লি অংশ নেন, তবে সরকারি উদ্যোগে সংস্কার হলে মসজিদ আরও জনবান্ধব হয়ে উঠবে।

ইতিহাস, স্থাপত্য ও ঐতিহ্যের অনন্য সমন্বয় খেরুয়া মসজিদকে শুধু একটি উপাসনালয় নয়— দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মূল্যবান সম্পদে পরিণত করেছে। ভবিষ্যতে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হলে এ স্থাপনা পর্যটনখাতেও নতুন সম্ভাবনা হিসাবে আবির্ভূত হতে পারে।

জেবি/এএস
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD