কিশোরগঞ্জে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষকরা

চলছে অগ্রহায়ণ মাস, আমন ধান ঘরে তুলার সঠিক সময়। প্রতি বছর যখন এই মাসটি আসে তখন সারাদেশের ন্যায় নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে রোপা-আমন ধান কাটার ধুম পড়ে যায়। এবার তার ব্যতিক্রম হয়নি।
বিজ্ঞাপন
উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার আমন মাঠ এখন সোনালী রঙ ধারণ করেছে। তাইতো কৃষকেরা ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মহোৎসব করছেন।
কৃষিতে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারের ফলে কৃষকেরা মাঠেই ধান মাড়াইয়ের কাজ সারছেন। আবার গ্রামাঞ্চলের জমি থেকে পাকা ও আধা পাকা ধান চুরি হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা রাত জেগে ধানক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন।
গতকাল বুধবার সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আমন ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠে সোনালী ধানের সমারোহ। বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। চারিদিকে সোনালী রঙের নতুন আমন ধানের মৌ মৌ ঘ্রান। মাঠে মাঠে চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ধুম। নবান্নের আনন্দে আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের ধুম চলছে উপজেলা জুড়ে। এখন মাঠের সোনালী ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা।
বিজ্ঞাপন
কয়েকমাস আগে যে স্বপ্ন বুনেছিল ধান ঘরে আসার সাথে সাথে সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। নানা ব্যস্ততায় বাড়ির উঠান ও কৃষি জমিতে ধান রেখে চলছে ধান মাড়াইয়ের মহোৎসব।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, উপজেলায় ১৪ হাজার ৯ শত ৭০ হেক্টর জমিতে এ মৌসুমে রোপা আমন আবাদ হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৩ হাজার ৭ শত ৭০ হেক্টর জমির ধান কর্তন হয়েছে। সার্বিকভাবে বলা যায়,কিশোরগঞ্জে মৌসুম এবার কৃষকদের মাঝে নতুন আশা ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে বলে জানান তারা।
বিজ্ঞাপন
কৃষকরা জানান, ইরি মৌসুমে জমি থেকে ফসল কেটে সরাসরি বাড়ি নিয়ে এলেও আমন ধান কেটে সরাসরি বাড়ি নিয়ে আসেন না তারা। শুকানোর জন্য কাটা আমন ধান চার-পাঁচ দিন জমিতেই রেখে দেন। তারপর বাড়িতে নিয়ে আসেন। এ সুযোগে কৃষকদের জমিতে কেটে রাখা ধান এমনকি আধা পাকা ধানও কেটে নিয়ে যাচ্ছে চোরেরা।
মাগুড়া এলাকার কৃষক জাকির হোসেন জানান, এবার প্রায় ৪ বিঘা জমিতে আমনের চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা থেকে ২৫-থেকে ২৮ মণ ধান আশা করছি। পোকা কিছুটা ছিল, ওষুধ দিয়েছি। তবে এবার করেন্ট পোকার কারণে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
কৃষক আবু বক্কর বলেন, 'প্রায় দেড় একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছি। ১২০ মনের মতো ধান পেয়েছি। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই ধানক্ষেত পাহারায় চলে যেতে হচ্ছে। পাঁচ- ছয় দিন ধরে জমিতে পাহারা দিচ্ছি। তিনি বলেন, এখানে ধান মাড়াইর পর খলা তৈরি করে ধান সিদ্ধ করে শুকাই। শুকানোর পর সেই ধানগুলো বাড়িতে নিয়ে যাই।'
গাড়াগ্রাম ইউনিয়নে কৃষক হোসেন বলেন, এ বছর তিনি ৫ বিঘা জমি বর্গা নিয়েছিলেন। আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে তার ৩ বিঘার ধান নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি জমিতেও আশানুরূপ ফলন হয়নি। ঋণ করে চাষ করেছিলাম, এখন সেই টাকা ফেরত নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
আরও পড়ুন: রিয়া মনিকে কুপিয়ে হত্যা, স্বামী আটক
বিজ্ঞাপন
উপজেলা কৃষি অফিসার লোকমান আলম বলেন, চলতি মৌসুমে ব্রিধান ৭৫, ব্রিধান ৫২, ব্রিধান ১০৩ সহ বিভিন্ন জাতের ধান ফলন হয়েছে। উপজেলায় ১৪ হাজার ৯ শত ৭০ হেক্টর জমিতে এ মৌসুমে রোপা আমন আবাদ হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৩ হাজার ৭ শত ৭০ হেক্টর জমির ধান কর্তন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবং মাঠ পর্যায়ে সময়োপযোগী কার্যকরী পরামর্শ নিয়মিত প্রদান করায় ধানের ফলন বেশ ভাল পাওয়া যাচ্ছে।
চলতি মৌসুমে পরিমিত বৃষ্টি হওয়ায় ধানি জমিতে পানি থাকায় ধানের খাদ্যে ঘাটতি দেখা দেয়নি। এতে ফলন ভালো হয়েছে। ধানে চিটা হবে না। ফলন ভালো হওয়ায় ধান উৎপাদনের মাত্রা ঠিক থাকবে। সার্বিকভাবে বলা যায়, কিশোরগঞ্জের আমন মৌসুম এবার কৃষকদের মাঝে নতুন আশা ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সব ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।








