নিজের জীবন তুচ্ছ করে নদীতে লাফ, তরুণীর প্রাণ রক্ষা

পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে ব্রিজের উপর থেকে লাফ দিয়ে এক তরুণীর জীবন বাঁচিয়ে সাহসিকতার পরিচয় দিলেন ইজিবাইক চালক হাসান।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ইন্দুরকানী শেখ ফজলুল হক মনি ব্রিজে এ ঘটনা ঘটে।
সাহসী ওই ইজিবাইক চালক পিরোজপুর সদর উপজেলার সংকরপাশা ইউনিয়নের ঝাউতলা মাটিভাঙ্গা গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, ইন্দুরকানী সদর ইউনিয়নের সেউতিবাড়িয়া গ্রামের এক তরুণী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা আনুমানিক ৬ ঘটিকায় আত্নহত্যা করার জন্য ইন্দুরকানী ফজলুল হক মনি ব্রিজ থেকে নদীতে ঝাঁপ দেয়।
বিজ্ঞাপন
এমন সময় স্থানীয় লোকজন তরুণীকে নদীতে ঝাঁপ দিতে দেখে ব্রিজের উপরে দাঁড়িয়ে থাকা ইজিবাইক চালক হাসানকে তরুণীকে বাঁচানোর জন্য নদীতে ঝাঁপ দিতে বলেন। পরে সাহসী ইজিবাইক চালক নিজের জীবনের কথা চিন্তা না করে সঙ্গে সঙ্গে ব্রিজের উপর থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ওই তরুণীর জীবন রক্ষা করেন। পরে তরুণীকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে তরুণীর ফিরে পায় নতুন জীবন।
প্রত্যক্ষদর্শী উপজেলা কালাইয়া গ্রামের হাফেজ মো: নাসরুল্লাহ বলেন, আমি এবং আমার বন্ধু ব্রিজে দাঁড়িয়ে ছিলাম এমন সময় ব্রিজের উপর থেকে একটি মেয়েকে নদীতে ঝাঁপ দিতে দেখি। পরে হাসান নামে এক ইজিবাইক চালক আসলে তাকে আমি মেয়েটিকে বাঁচানোর জন্য নদীতে ঝাপ দিতে বলা মাত্রই ইজিবাইক চালক তার জীবনের চিন্তা না করে সাথে সাথে ব্রিজের উপর থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মেয়েটিকে নদী থেকে উদ্ধার করে। পরে ইজিবাইক চালকসহ আমরা মেয়েটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: বুড়িমারী স্থলবন্দরে ভারতীয় চালকের মৃত্যু
এ ব্যাপারে সাহসী ইজিবাইক চালক হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ইজিবাইক নিয়ে ব্রিজের উপর আমার যাত্রী নেওয়ার জন্য আসি এমন সময় ব্রিজে উপর লোকজন দেখতে পেয়ে সেখানে যাই তখন শুনি একটি বোন আত্নহত্যার জন্য নদীতে ঝাঁপ দিয়েছে। তখন সেখানে যাওয়া মাত্রই নাসরুল্লাহ নামে একজন হুজর আমাকে মেয়েটিকে বাঁচানোর জন্য নদীতে ঝাঁপ দিতে বলে তখন আমি সাথে সাথে নদীতে ঝাঁপ দেই। কিন্তু তখন সন্ধ্যা হওয়ায় অন্ধকারে নদীতে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। পরে কিছু সময় খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে মেয়েটিকে দেখতে পেয়ে জীবিত অবস্থায় নদীর কিনারায় নিয়ে আসি।
ব্রিজে অনেক মানুষ থাকতে তিনি কেনো নদীতে ঝাপ দিলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে সাহসী ইজি বাইক চালক হাসান বলেন, আমি যখন জানতে পেরেছি যে মেয়েটি আত্নহত্যার জন্য নদীতে ঝাঁপ দিয়েছে তখন আমার উদ্দেশ্য ছিল মেয়েটির জীবন রক্ষা করা। কেননা জীবন বাঁচানো ফরজ। আর ওখানে দাড়িয়ে থাকে হুজুর যখন আমাকে বলেছে লাফ দেও তখন আমি তার কথায় বেশি সাহস পেয়েছি এবং কোনো ধরনের চিন্তা না করেই নদীতে ঝাঁপ দিয়েছি। তখন ভেবেছি ওই মেয়েটি যদি আমার নিজের বোন হতো তাহলে তো আমি চুপ করে বসে থাকতে পারতাম না।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের হাতে মা খুন
আত্নহত্যা চেষ্টার কারণ জানতে চাইলে তরুণীর বাবা দুলাল বলেন, আমার মেয়ের জামাইয়ের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ মেয়ের জামাই প্রবাসে থাকে। কিছুদিন ধরে মেয়ে আর মেয়ের জামাইয়ের মধ্যে জামেলা চলছে। গতকাল দুপুরেও মেয়ে আর মেয়ের জামাইয়ের মধ্যে ঝগড়া ও কথা-কাটাকাটি হয়। হয়তো সেই কারণনেই আমার মেয়ে আত্নহত্যার চেষ্টা করেছিল। আর আমার মেয়ে সাতারও জানে না। যে আমার মেয়েকে নতুন জীবন দিয়েছে আমার পরিবার সেই ইজিবাইক চালকের কাছে ঋণী হয়ে গেলাম।
বর্তমানে ওই তরুণী পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার অবস্থা আগের চেয়ে ভালো বলে জানিয়েছে তার পরিবার।








