থুথু ফেলা নিয়ে সংঘর্ষ, ধ্বংসস্তূপে পরিণত সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর সাভারে খাগান এলাকায় অবস্থিত সিটি ইউনিভার্সিটি ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাতভর দফায় দফায় ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিকের বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত টানা চার ঘণ্টা এ সংঘর্ষ চলে।
এ ঘটনায় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সিটি ইউনিভার্সিটির তিনটি বাস ও একটি প্রাইভেটকার। ভাঙচুর করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, রেজিস্ট্রার অফিস, আইটি বিভাগ ও কম্পিউটার ল্যাবসহ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার সন্ধ্যায় খাগান এলাকার ‘ব্যাচেলর প্যারাডাইস’ হোস্টেলের সামনে দিয়ে মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন সিটি ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী। এ সময় অসাবধানতাবশত তার ফেলা থুথু ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীর গায়ে লাগে। এ নিয়ে তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে রাত ৯টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির কয়েকজন শিক্ষার্থী দেশীয় অস্ত্র ও ইটপাটকেল নিয়ে ব্যাচেলর প্যারাডাইস হোস্টেলে হামলা চালান। এতে বেশ কয়েকটি কক্ষ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
এরপর ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে সিটি ইউনিভার্সিটির দিকে অগ্রসর হন। রাত ১২টার দিকে শুরু হয় দফায় দফায় সংঘর্ষ। সংঘর্ষ চলাকালীন উভয় পক্ষের শিক্ষার্থীরা দেশীয় অস্ত্র, ইট-পাটকেল ও ককটেল ব্যবহার করেন।
সংঘর্ষের সময় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় সিটি ইউনিভার্সিটির তিনটি বাস ও একটি প্রাইভেটকার। ভাঙচুর করা হয় আরও অন্তত পাঁচটি গাড়ি। সিটি ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা ককটেল ও গানপাউডার নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে প্রশাসনিক ভবনে হামলা চালায়, লুট করে নগদ টাকা, কম্পিউটার ও গুরুত্বপূর্ণ নথি।
বিজ্ঞাপন
সিটি ইউনিভার্সিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা উজ্জল সরকার বলেন, ‘ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। তারা ভিসি, প্রোভিসি ও রেজিস্ট্রার অফিসসহ বিভিন্ন কক্ষে লুটপাট চালিয়ে গেছে। রাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত তাণ্ডব চলেছে।’
সিটি ইউনিভার্সিটির চিকিৎসক ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এক শিক্ষার্থীর অসাবধানতাবশত থুথু পড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ড্যাফোডিলের হাজারো শিক্ষার্থী রাতভর আগুন, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। অন্তত দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহযোগিতা করেনি।’
সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শাহানুর বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের সময় প্রশাসনিক ভবনের ভেতর থেকে রাত ৩টার দিকে দেশীও অস্ত্রসহ আমরা ১০-১১ জনকে আটক করি। এ সময় ছয়জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠাই। এখনো তাদের পাঁচজন আমাদের হেফাজতে রয়েছে। ড্যাফোডিলের ভিসি এবং চেয়ারম্যানকে এখানে আসতে হবে। তবেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। নয়তো আমরা তাদের ছাড়ব না।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজিস বিভাগের ডিন অধ্যাপক বিমল চন্দ্র দাস সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে সিটি ইউনিভার্সিটি পরিদর্শনে এসে ঘটনাস্থলের ধ্বংসযজ্ঞ দেখে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘এখানে যে ভাঙচুর ও ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, সেজন্য আমি সত্যি সত্যি লজ্জিত এবং এর জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ধ্বংসযজ্ঞ হতে পারে, এটা আমাদের ধারণার বাইরে। এটা যারাই ঘটিয়েছে, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।’
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থী এখানে আটক আছে। ভিসি স্যারের নির্দেশে তাদের ছাড়িয়ে নিতে এখানে এসেছি। এখানকার শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন।’
এ ঘটনায় সিটি ইউনিভার্সিটি চার দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দুপুরে সিটি ইউনিভার্সিটির উপাচার্য লুৎফর রহমান এ তথ্য জানান। পরে দুপুর থেকে সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ করা শুরু করেন।
সংঘর্ষে জড়িত ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ১১ জন শিক্ষার্থী আটক থাকার পরে দুপুর ৩টার দিকে তাদেরকে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কতৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছে সিটি ইউনিভার্সিটি কতৃপক্ষ।
বিজ্ঞাপন
এদিকে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এ্যাডিশনাল ডিরেক্টর সুলতান মাহমুদ দুটি ইউনিভার্সিটি পরিদর্শন করেছেন।








