উত্তরখানে যুব মহিলা দলের নেত্রী কাজল রেখার বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’র অভিযোগ

ঢাকার উত্তরখানে যুব মহিলা দলের নেত্রী কাজল রেখার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ অক্টোবর দুপুরে উত্তরখান থানার পুলারটেক এলাকায় বাদল ভূইয়া নামে এক ব্যক্তি কাজল রেখা ও স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মারামারির অভিযোগে মামলা করেন।
বিজ্ঞাপন
তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বাদী নিজেই বাড়ির টাইলস দিয়ে নিজের মাথায় আঘাত করেন এবং পরবর্তীতে সরকারি টঙ্গী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ডাক্তারি সনদ সংগ্রহ করেন। এরপর তিনি উত্তরখান থানায় গিয়ে বিএনপি ঘরানার কয়েকজন নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী রেজাউল করিম বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে বাদল ভূইয়া ও তার ছেলে সিফাত ভূইয়া জমির মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে আসছে। প্রতিবেশীরা টাকা না দিলে তারা নানা হয়রানিমূলক পরিস্থিতি তৈরি করে।”
তিনি আরও জানান, বাদল ভূইয়া সম্প্রতি প্রতিবেশীদের চলাচলের পথে দেয়াল তুলে বাধা সৃষ্টি করেছেন এবং নিজের আঙিনার সীমানা বাড়িয়ে নিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
ঘটনাটি মীমাংসার জন্য যুব মহিলা দলের নেত্রী কাজল রেখা স্থানীয়দের সঙ্গে ঘটনাস্থলে গেলে বাদল ভূইয়ার স্ত্রী ও ছেলে লাঠি হাতে তাদের ওপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একাধিক ভিডিও ফুটেজেও ঘটনাটির সত্যতা পাওয়া গেছে।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বাদল ভূইয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রথমে আক্রমণাত্মক আচরণ করছেন এবং কাজল রেখাসহ উপস্থিত অন্যদের দিকে তেড়ে যাচ্ছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে উভয়পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় বাদল ভূইয়া ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশকে খবর দেন।
খবর পেয়ে উত্তরখান থানার একটি টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে জমির কাগজপত্র, জেলা প্রশাসকের নথি ও সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স যাচাই করে চলে যায়।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয়দের অভিযোগ, বাদল ভূইয়া পরিকল্পিতভাবে নিজের আঘাতকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতাদের ফাঁসাতে মামলা সাজিয়েছেন।
এ বিষয়ে কাজল রেখা বলেন, “আমাদের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই আমাকে এবং আমার সহকর্মীদের টার্গেট করা হচ্ছে। সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ১৭ বছর বাদল ভূইয়া ও তার লোকজন প্রকৃত মালিকদের জমিতে প্রবেশ করতে দেয়নি। সরকার পরিবর্তনের পরও স্থানীয় অস্ত্রধারী আ.লীগ নেতাদের দাপটে জমিতে উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।”
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাদল ভূইয়ার বিরুদ্ধে পূর্বেও চাঁদাবাজি, দখল ও সামাজিক অশান্তি সৃষ্টির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তারা প্রশাসনের কাছে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও মিথ্যা মামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
উত্তরখান এলাকার শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, “বাদল গংদের বিরুদ্ধে আমি ২০১৬ সালে উত্তরখান থানায় একটি জিডি করেছিলাম (নং–২২৫)। পরিবারটি সন্ত্রাসী প্রকৃতির। তাদের অত্যাচারে ২০২৫ সালে আমাদের জমি বিক্রি করে এলাকা ছাড়তে হয়েছে।”
অন্য ভুক্তভোগী সেলিনা আক্তার বলেন, “বাদল গংদের অত্যাচারে জমি বিক্রি করতে পারছি না। ক্রেতাদের কাছ থেকে তারা চাঁদা দাবি করে। বাদল একজন মাদকাসক্ত ও সন্ত্রাসী—ওর ভয়ে সবাই আতঙ্কে থাকে।”
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় কয়েকজন বাড়ির মালিক জানান, “এই জমিসহ আশপাশের কয়েকটি বাড়ির রেকর্ডীয় মালিক মাইদুল ইসলাম ও মারুফুল ইসলাম। অথচ বছরের পর বছর বাদল গং আদালতে মিথ্যা মামলা দিয়ে জায়গাগুলো দখল করে রেখেছেন।”
ঢাকা ইলেকট্রিক কোম্পানির (ডেসকো) এক কর্মকর্তা জানান, বাদল ভূইয়ার পরিবারের বাধার কারণে ঐ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, “তারা বিদ্যুৎ খুঁটি থেকেও সংযোগ দিতে বাধা দিয়েছে।”
এ বিষয়ে উত্তরখান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে, প্রাথমিকভাবে অভিযোগপত্র যাচাই করা হচ্ছে।”
বিজ্ঞাপন
তদন্ত কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি জানান, “৯৯৯-এ অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম, তবে অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে ফিরে আসি। পরে বাদী মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে থানায় এসে মামলা দায়ের করেন।”
স্থানীয়দের মতে, ঘটনাটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত এক পরিকল্পিত মিথ্যা মামলার উদাহরণ। তারা আশা করছেন, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এর সত্যতা উদঘাটন হবে।









