লাগামছাড়া ভাড়া, বিপর্যস্ত রাজধানীর সাধারণ ভাড়াটিয়ারা

ঢাকার শহরে বেসরকারি চাকরিজীবী সিদ্দিকুর রহমান পরিবার নিয়ে বাড্ডার একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। তাঁর অফিস অবস্থান মতিঝিলে, কিন্তু বাড়ির ভাড়া কম হওয়ার কারণে তিনি প্রতিদিন দীর্ঘ দূরত্ব পাড়ি দিয়ে গণপরিবহনে যাতায়াত করেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি জানালেন, মতিঝিলের বাসা ভাড়া অনেক বেশি, তাই এখানে আসা ছাড়া উপায় নেই। তবু এখানে বাসার ভাড়াতেই আমার বেতনের বড় অংশ চলে যায়। গত বছর বাড়িওয়ালা এক হাজার টাকা বাড়িয়েছেন।
সিদ্দিকুরের মতো অনেকেই ঢাকার বাসা ভাড়ার অতিরিক্ত চাপের মুখোমুখি। ডিসেম্বরের শেষ মাস এলে ভাড়াটিয়াদের মনে আতঙ্কের ছায়া নেমে আসে, কারণ অনিয়মিতভাবে বাড়িওয়ালারা বাসা ভাড়া বাড়ানোর নোটিশ দেয়।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা শহরের দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বাসা ভাড়ার চাপ ক্রমেই বাড়ছে। কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ক্যাব) জানিয়েছে, গত ২৫ বছরে রাজধানীতে বাসা ভাড়া প্রায় ৪০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির তুলনায় ভাড়ার বৃদ্ধি প্রায় দ্বিগুণ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর সিটি করপোরেশন এলাকায় ৭২ শতাংশ মানুষ ভাড়া বাসায় থাকেন। এসব ভাড়াটিয়ার মধ্যে আয়ের বড় অংশ বাসা ভাড়ায় যায়। উদাহরণস্বরূপ, ৫৭ শতাংশ ভাড়াটিয়ার আয়ের প্রায় ৫০ শতাংশ বাসা ভাড়ায় ব্যয় হয়।
শেওড়াপাড়া এবং বনশ্রী এলাকার ভাড়াটিয়ারা বলছেন, মাসিক বেতন ও বাসা ভাড়া মিলিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে গেছে।
বিজ্ঞাপন
আনিসুর রহমান জানান, ৪০ হাজার টাকার বেতনের মধ্যে ১৮ হাজার টাকা বাসা ভাড়ায় চলে যায়। একইভাবে রোকনুজ্জামান রোকন ও জুবায়ের ইসলামও ভাড়ার বাড়তি চাপের কথা শেয়ার করেন।
বাড়িওয়ালারা ভাড়া বৃদ্ধি সম্পর্কে বলছেন, নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বৃদ্ধি এবং অন্যান্য জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ভাড়া বাড়ানোর কারণ। মধ্যবাড্ডার রুহুল আমিন বলেন, “একজন বাড়ির মালিক সারা জীবনের অর্জিত অর্থ দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করেন। জীবনযাত্রার খরচ বাড়লে ভাড়া না বাড়ালে চলবে না।”
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথমবারের মতো বাড়ি মালিক ও ভাড়াটিয়াদের নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান করেছে। বৈঠকে ভাড়া নির্ধারণ, বার্ষিক বৃদ্ধির হার এবং নিয়মনীতি বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হবে।
বিজ্ঞাপন
ডিএনসিসির কর্মকর্তারা আশা করছেন, বৈঠকের মাধ্যমে নগরবাসী উপকৃত হবেন।
তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এখনো এই ধরনের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ফলে ভাড়াটিয়ারা দৈনন্দিন জীবনে বাসা ভাড়ার বোঝা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ মেস সংঘের মহাসচিব মো. আয়াতুল্লাহ আকতার বলেন, নতুন বছরে অযৌক্তিকভাবে বাসা ভাড়া বাড়ানো যাবে না। বাড়ি ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে আইন ও নির্দেশনা মানা আবশ্যক।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ভাড়াটিয়ারা সাবলেটে বাসা ভাড়া নিয়ে কিছুটা সহায়তা নিচ্ছেন। মালিবাগের সাজ্জাদ হোসেন জানান, পুরো ফ্ল্যাটের ভাড়া বহন করতে না পারায় তিনি একটি রুম সাবলেটে ভাড়া দিচ্ছেন। মোহাম্মদপুরের আনিস আহমেদও একই কারণে সাবলেট বাসায় থাকছেন।
ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ শহরে ভাড়া বাড়ানোর এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষকে দৈনন্দিন জীবনে অতিরিক্ত চাপের মুখোমুখি হতে হবে। নিয়মিত মনিটরিং, আইন বাস্তবায়ন এবং ভাড়াটিয়াদের অধিকার সুরক্ষা এখন অপরিহার্য।








