প্লট দুর্নীতি: তিন মামলায় শেখ হাসিনার ২১ বছরের কারাদণ্ড

রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দসংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা তিনটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মোট ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। প্রতিটি মামলায় সাত বছর করে সাজা দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এই রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালতপাড়ায় কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যরাও মোতায়েন ছিল।
গত রবিবার মামলাগুলোতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা একমাত্র আসামি রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ হয়। অন্য আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়নি এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও তারা পাননি।
বিজ্ঞাপন
দুদক প্রসিকিউটর খান মো. মাইনুল হাসান জানান, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা—জীবন কারাদণ্ড—চেয়েছিল। তবে খুরশীদ আলমের আইনজীবী শাহীনুর রহমান যুক্তি দেন, দুদক তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি।
প্লট বরাদ্দ অনিয়মের অভিযোগে দুদক গত জানুয়ারিতে মোট ছয়টি মামলা করে। এসব মামলায় শেখ হাসিনা, তার সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিকসহ বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। আজ তিনটি মামলার রায় দিলেন আদালত; বাকি তিনটির বিচার পৃথক আদালতে চলছে।
বিজ্ঞাপন
শেখ পরিবার ছাড়াও আসামির তালিকায় রয়েছেন— গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য শফি উল হক, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন, সাবেক মেজর সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফ, পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম, পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন।
৩১ জুলাই বিশেষ জজ আদালত-৫ তিনটি মামলায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। বাকি তিন মামলার অভিযোগ গঠন হয় বিশেষ জজ আদালত-৪ এ।
বিজ্ঞাপন
মামলার নথি অনুযায়ী- ১৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনাসহ ৮ জনকে আসামি করে প্রথম মামলা হয়। পরে তদন্তে আরও চারজন যুক্ত হয়ে মোট আসামি হন ১২ জন। ১২ জানুয়ারি সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা হয়, যা পরে বাড়তে বাড়তে হয় ১৮ জনে। ১৪ জানুয়ারি সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্লট বরাদ্দ ইস্যুতে তিনি ও তার মা শেখ হাসিনাসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তদন্ত শেষে আসামি সংখ্যা দাঁড়ায় ১৭।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়, ক্ষমতায় থাকাকালে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা influence ব্যবহার করে পূর্বাচল আবাসিক প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন, যদিও তারা ওই বরাদ্দের যোগ্য ছিলেন না। এভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত আজ রায় ঘোষণা করেন।








