পঞ্চগড়ে উৎপাদিত হচ্ছে উন্নতমানের আলুর বীজ, বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


পঞ্চগড়ে উৎপাদিত হচ্ছে উন্নতমানের আলুর বীজ, বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

কৃষিতে বিপ্লব এনেছে পঞ্চগড়ের কৃষক। কৃষি উৎপাদনে উন্নত জাত সহ জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে অনবদ্য ভূমিকা রেখে চলেছেন তারা। আলু বেগুন, পটল,শিম সহ শীতকালিন মৌসুমি সবজি আবাদেও দৃষ্টান্ত রেখে যাচ্ছেন এই জেলার কৃষকরা। উৎপাদিত হচ্ছে আলু বীজ। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) কৃষকদের আলু বীজ উৎপাদনে সহায়তা প্রদান করছে। এছাড়াও সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান  ব্র্যাক ।

পঞ্চগড় জেলায় এবারে ৯ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। গত বছর এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও এবার সেই লক্ষ্যমাত্রায় কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। কারন হিসেবে জেলা কৃষি বিভাগ জানায় ‘ অন্য আবাদ বেড়ে যাওয়ায় এই ঘাটতি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের অতিরিক্ত উপ পরিচালক মো. আব্দুল মতিন জনবাণীকে বলেন ‘ আবাদে এবারে ঘাটতি হওয়ার কারন অন্যান্য কৃষি পন্যের আবাদ বেড়েছে। পঞ্চগড় সদর উপজলোয় ১০২০ হেক্টর, বোদা উপজেলায় ১৬০০ হেক্টর, আটোয়ারী উপজেলায় ৯৫০ হেক্টর ও তেতুঁলিয়ায় ৫৯০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। আবাদ করা আলুর মধ্যে রয়েছে ‘ ডায়মন্ড , কার্ডিনাল এস্টারিক ও কারেজ।দেশি জাতের আলু যেমন; সাদা ও লাল পাকরী। পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের মোলানী পাড়া গ্রামের কৃষক নবীবর রহমান ‘তারা ১০০ জন কৃষক একত্রিত হয়ে এস্টারিক জাতের আলু বীজ লাগিয়েছেন। বিএডিসি তাদের আলু বীজ সরবরাহ করেন। ফেব্রয়ারীর শেষের দিকে তারা এই বীজ আলু তুলবেন। তাদের ব্লক লিডার  সাজ্জাদ হোসেন। তার ব্লকে রয়েছে ‘ সব মিলিয়ে ২০.০০ জমিতে এই বীজ আলু আবাদ হয়েছে। আলু বীজ জোনের এই এলাকায় দুই শতাধিক জমিতে বীজ আলু লাগানো হয়েছে।‘তারা এবারই প্রথম এই বীজ উৎপাদনে এস্টারিক আলু আবাদ করেছেন। আরো রয়েছেন ‘ ওই এলাকার তাসের পাড়ার স্বাধীন, ননী গোপাল ,জিয়াউল,যদুরাম বর্ম্মণ।


নবীবর রহমান জানান ‘ একরে ব্যয় হয়েছে ৫০ হাজার থেকে ৫৫ হাজার টাকা।‘একরে আলু উৎপাদিত হবে ‘ ৩৫০ মন থেকে ৩৫৫ মন। বীজ আলুর গ্রেড রয়েছে ‘এ ও বি। বিএডিসি উৎপাদিত বীজ আলু যাচাই-বাচাই করে সেই আলু বীজ নিবেন। ‘ নেওয়ার সময় বিএডিসি একটি নির্ধারিত দর দেন।

আলু কৃষকরা জানান‘ এবার সারের দাম অনেক বেশি।টিএসপি গত বছর ছিলো এক বস্তার দাম ১২০০ টাকা। সেই টিএসপি এবার কিনতে হয়েছে ১৫০০ টাকা থেকে ১৬৫০ টাকা। পটাশ ছিলো প্রতি বস্তা ১০০০ টাকা। সেই পটাশ কিনতে হয়েছে  ১২০০ টাকা থেকে ১৩০০ টাকা। জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে হাল চাষ করতে লাগতো একরে ৩০০ টাকা। সেখানে এবারে দিতে হয়েছে ‘ ১০০০ হাজার টাকা। ‘আবাদের আগে অতি বৃষ্টির কারনে  তিনবার চাষ দিতে হয়েছে জমিতে। কারন জমি বেশি ভেজা ছিলো। চাষকৃত আলুর জমিতে সেচ দিতে প্রতি একরে দিতে হয়েছে ৪ হাজার ৫০০ টাকা।

তাসের পাড়ার আতোয়ার রহমান বলেন ‘ আমি ৭ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি ‘ আমরটা বীজ আলু নয়। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ‘২০ হাজার টকা। কারন এবারে ব্যয় বেশি। প্রতি বিঘায় আলু আসবে ১০০ মন থেকে সবোর্চ্চ ১২০ মন। বাজারে আলুর দাম তো নেই। খুচরা আলু এখন প্রতি কেজি ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা। তাই বর্গা না দিয়ে নিজেই করছি। গতবার ৫ বিঘা জমি বর্গা দিয়েছিলাম। দামও ছিলো আলুর।  এদিকে বনগ্রাম বেংহাড়ি ইউনিয়নের মেনাগ্রাম ও ডাবর ভাঙ্গা পুঠিমারী এলাকায় এই বীজ আলু আবাদ করা হয়েছে। সুভাসুজন এলাকা সহ উলিপুখুরী বামনহাট, তেপুকুরিয়া সহ বিস্তৃর্ন এলাকায় আলু ক্ষেত সবুজে রুপ নিয়েছে। পুঠিমারি গ্রামের কৃষ্ঠ বর্ম্মণ  ৬ বিঘা জমিতে বীজ আলু এবং বাজারজাত করা ও খাবার জন্য ৪ বিঘা জমতে আলুর আবাদ করেছেন। 

ভক্তেরবাড়ী গ্রামের মফিজ উদ্দীন জানান ‘ তিনি সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে বীজ আলুর আবাদ করেছেন।ওই প্লটে অন্যরা আছেন। তিনি জানান ব্র্যাক বিঘা প্রতি ৬০ মন আলু নিয়ে যাবে। তার জাত ডায়মন্ড। নানা প্রান্তের পাইকাররা নিয়ে যাবেন। ‘ এই সব আলু দেশের বাইরে যায়। সে সব দেশে চাহিদা বেশি। ডাবর ভাঙ্গা গ্রামের নিতাই চন্দ্র বর্ম্মণ জানান তিনি এক একর জমিতে এই্ বীজ আল করেছেন। সামনে ১৪ দিনের মাথায় আলুর গাছ তুলে ফেলে ‘ শুধু মাত্র এই বীজ আলু আরো ১৫/২০ দিন মাটিতে রাখতে হবে। ‘ এই বীজ আলু প্রতি কেজি ১০ দরে কিনে নেন। ‘ পরে যে আলু থাকে ওই্ আলু দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে প্রতি কেজি  ৩০ থেকে ৩৫ দরে কিনে নিয়ে যায়। ব্র্যাক সিড অ্যান্ড অ্যাগ্রো এন্টারপ্রাইজের আওতায় তারা এই বীজ আলু আবাদ করেছেন। আরো রয়েছেন মেনা গ্রামের মোস্তফা, সুভাসুজন গ্রামের শাহজাহান, জাহাঙ্গীর সহ অনেক কৃষক। 

বিএডিসি পঞ্চগড়‘ এর উপপরিচালক মো. মজাহারুল ইসলাম জনবাণেকে বলেন ‘ পঞ্চগড় জেলায় ২৮০ একর জমিতে বীজ আলু আবাদ হয়েছে। ‘ আমরা প্রতি একরে ৫ মেট্রিক টন করে এই বীজ আলু নিবো।   সরকার এখনও দর নির্ধারণ করেনি। সারা দেশে যখন দর নির্ধারন হবে ‘ সেই দরে আমরাও এই বীজ আলু নিবো।

এসএ/