ড. মেহেদী মাসুদের প্রচেষ্ঠায় গ্রীণ ম্যাঙ্গো চাষে সাফল্য


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭:১৯ পূর্বাহ্ন, ১৪ই অক্টোবর ২০২২


ড. মেহেদী মাসুদের প্রচেষ্ঠায় গ্রীণ ম্যাঙ্গো চাষে সাফল্য
গ্রীণ ম্যাঙ্গো

বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট কাঁচা মিঠে আমের জাত গ্রীণ ম্যাঙ্গোর উপযোগিতা যাচাইয়ে প্রথম সাফল্য মিলেছে। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার রাতইল হর্টিকালচার সেন্টারে কৃষি কর্মকর্তারা উপযোগিতা যাচাইয়ে সাফল্য পেয়েছেন। এ আম কাঁচা আবস্থায় মিষ্টি। পাকলে মিষ্টিত্ব ও স্বাদ আরো বেড়ে যায়। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে গাছ থেকে আম ছেড়া যায়। তাইওয়ান, থাইল্যান্ডসহ বি শ্বের বিভিন্ন দেশে এ আম বাংলাদেশী মূদ্রায় ৫০০ থেকে ৭ ০০ টাকায়  কেজি দরে বিক্রি হয়। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বাজারে আম থাকে না। তাই নাবি জাতের এ গ্রীণ ম্যাঙ্গো বাংলাদেশের বাজারে অন্তত ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে এ আম চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।


গোপালগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ২ বছর আগে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক  ড. মেহেদী মাসুদ  থাইল্যান্ড থেকে পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট কাঁচা মিঠে আমের জাতের একটি ছায়ন (কাটিং) আনেন। এটি তিনি আমাদের গোপালগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারে দেন। হর্টিকালচার সেন্টারে আমরা দেশীয় প্রজাতির আমের চারার সাথে থাইল্যান্ড থেকে সংগৃহীত আমের ছায়ন সংযুক্ত করি। 


বাংলাদেশের আবহাওয়ায় ওই জাতের আমের চারা তৈরী করি। এরপর পরিচর্যা করা হয়। এ বছর ওই গাছে প্রথম আম ধরেছে। এ আম গাছে পোকা মাকড়ের আক্রমণ দেখা যায়নি। এ আমে রোগবালাই পরিলক্ষিত হয়নি। প্রতিটি আমের ওজন ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম। এ আম কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায়। তাই  এ আমের নাম করণ করা হয়েছে গ্রীণ ম্যাঙ্গো। পাকলে আমের মিষ্টিত্ব ও স্বাদ বহুগুণেবেড়ে যায়। এ আমের ৯০ ভাগ ভক্ষণযোগ্য। এ আমে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি সহ মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য ভিটিামিন ও খাদ্য উপাদান বিদ্যমান।  অক্টোবর-নভেম্বরে গাছ থেকে এ আম সংগ্রহ করা যায়। পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট ও সমাদৃত কাঁচা মিঠে এ জাতের আম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী মূদ্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। 


বাংলাদেশের বাজারে এখানে উৎপাদিত গ্রীণম্যাঙ্গো কমপক্ষে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে। বাংলাদেশের আবহাওয়া এ আম চাষের উপযোগী। আমরা আমাদের হর্টিকালচার সেন্টারে ইতিমধ্যে মাতৃবাগান সৃজন করেছি। এখান থেকে চারা উৎপাদন করে আমরা দেশের ৭৩ টি হর্টিকালচার সেন্টারে পাঠাতে কাজ শুরু করেছি। দেশের সব হর্টিকালচার সেন্টারে এই আমের মাতৃবাগান  হবে । এখান থেকে চারা তৈরী করে কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করা হবে। একজন কৃষক একবিঘা জমিতে এই জাতের আম চাষ করে প্রতি বছর খরচ বাদে অন্তত ৫ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন। তাই বাংলাদেশে এ আমের বাণিজ্যিক চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।


প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ড. মেহেদী মাসুদ  বলেন, আমাদের দেশে উৎপাদিত ফল দিয়েই আমাদের পুষ্টিসাধিত হবে। সেই লক্ষ্যে কৃষি বান্ধব সরকার বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এটি বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পে আমের ক্ষেত্রে আমরা  আগাম জাত, নাবি জাত , সময়ের জাত এবং বারমাসী জাত বেছে নিয়েছে। এ জাতগুলো আমাদের ৭৪টি হর্টিকালচার সেন্টারে অনট্রায়েল হচ্ছে। ফিল্ড ট্রায়েলের মাধ্যমে আমরা এগুলোর পারফরমেন্স  যাচাই করিছ। ইতিমধ্যে আমরা প্রায় ১৬ টা আমের জাত বিদেশে থেকে নিয়ে এসেছি। তার মধ্যে কার্টিমন, অলরেডি চাষী পর্যায়ে  চাষ হচ্ছে। বছরে ৩ বার এই জাতের আম ফলছে। কিউজাই, ব্যানানা ম্যাঙ্গো চাষ হচ্ছে। আমরা পুথিবীর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট জাতের কাঁচা মিঠে আমের জাতের ছায়ন থাইল্যান্ড থেকে সংগ্রহ করে বাংলাদেশে নিয়ে আসি। 


এই জাতটির জন্ম বা উৎস তাইওয়ান।  গোপালগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারে এটির পারফরমেন্স ট্রায়েল করা হয়েছে। এটির নাম দেওয়া হয়েছে গ্রীণ ম্যাঙ্গো। এ  গ্রীণ ম্যাঙ্গো অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য একটা বিস্বয় নিয়ে আসবে। গোপালগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারে ট্রায়েলে এ আমের পারফরমেন্স খুব ভালো দেখা গেছে । এখন আমরা চাষী পর্যায়ে এ আমের চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নিয়েছি। কারণ উচ্চমূল্যের আম চাষ করে আমাদের চাষী ভায়েরা লাভবান হতে পারবেন। আমাদের কৃষিমন্ত্রী ড.মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বাংলাদেশের কৃষিকে আধুনিক ও বাণিজ্যিকী করণ করে লাভ জনক করতে চাইছেন। তিনি আমাদের কৃষকের উৎপাদিত ফল সহ বিভিন্ন ফসল বিদেশে রফতানী করে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জণের পরিকল্পনা গ্রহন করেছন। সবদিক বিবেচনা করে গ্রীন ম্যাঙ্গো বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য একটি লাভজনক জাত হবে।


মেহেদী মাসুদ আরো বলেন, “এক বিঘা জমিতে এ জাতের আম গাছের চারা ১০৫টি রোপন করা যায়। এ জাতের আম গাছ আকারে ছোট। তাই অন্যান্য প্রজাতির আম গাছ এক বিঘায় মাত্র ৪৫ থেকে ৫০ টি রোপণ করা যায়। কিন্তু এই জাতের আম গাছ বিঘা প্রতি ১০৫টি রোপণ করা যায়। ২ থেকে ৩ বছরের মাথায় ফলন পাওয়া যায়। একবিঘা অন্তত ১ হাজার ৪৪০ কেজি আম ফলন পাওা যাবে। ৫০০ টাকা হিসেবে এ আমের বিক্রি নামবে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। খরচ বাদে কৃষক প্রথম ২ থেকে ৩ বছরেই ৫ লাখ টাকা লাভ করতে পারবেন। পরবর্তী বছর গুলোতে খরচ কমে আসবে। আমের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এতে কৃষকরে লাভ আরো বেড়ে যাবে। তাই এ জাতের আম বাণিজ্যিক চাষাবাদে আশার আলো দেখাচ্ছে।”