ধানখেতে পোকা দমনে ‘পার্চিং’ পদ্ধতি: সুফল পাচ্ছে কৃষক
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২:৩৪ পূর্বাহ্ন, ২৬শে অক্টোবর ২০২২
প্রাচীন পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে ফসল উৎপাদনে যুগে যুগে চাষাবাদে এসেছে অনেক পরিবর্তন। দেশীয় পদ্ধতির পাশা পাশি আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে সর্বত্র। কিন্তুু জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্ব অনেক এগিয়ে গেলেও কোন কোন ক্ষেত্রে এখনো পুরাতন বা প্রাচীন পদ্ধতির ব্যবহার হচ্ছে। যেমন ফসলের খেতে পোকা দমনে ‘পার্চিং’ পদ্ধতি। এটি এন্টিবায়োটিক ড্রাগ হিসেবে কাজ করছে।এই পার্চিং পদ্ধতি বিনা খরচে ও দ্রুত কাজ করায় কৃষকের মাঝে জনপ্রিয় হচ্ছে। এ পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।
চলতি রোপা আমন মৌসুমে ধানের পোকা দমনে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন কৃষকরা। পার্চিং পদ্ধতি হচ্ছে, ধান খেতের (জমি) মাঝে শুকনো গাছের শাখা ডাল পুঁতে রাখা। দুর থেকে পাখি সেখানে এসে বসে আহারের জন্য।সহজে ক্ষতি কারক পোকা দমন ও অর্থনৈতিক ভাবে সাশ্রয় হওয়ায় কৃষকদের এ পদ্ধতি ব্যবহারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে জীব বৈচিত্র ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ পদ্ধতি। সরেজমিনে কৃষকের মাঠ ঘুরে দেখা যায় পিংডে পাখি (স্থানীয় নাম কালো হেচ্ছা)। এর বৈজ্ঞানিক নাম-ডাইক্রোরাস এবং ইংরেজীতে বলা হয় ব্ল্যাক-ড্রোনগো। এ পাখি কৃষকের ধানের মাঠে ও আশ-পাশের গাছের ডালে বসতে দেখা যায়।
এই পাখির পাকস্থলীতে খুব শক্তিশালী এনজাইম থাকায় সে বিষাক্ত পোকা-মাকড় খেয়ে হজম করতে পারে। কৃষকের ধানের মাঠে পুঁতে দেয়া গাছের ডালে বসে এবং ধানের ক্ষতিকর বিষাক্ত পোকা-মাকড় সবুজ ফড়িং, সাদা ফড়িং, মাজরা পোকার ডিম খেয়ে এদের বংশ বিস্তার রোধ করে দেয়। এ ক্ষতিকর পোকা ধংস হলে ধানের চারা সব সময় সতেজ থাকে।
রায়গঞ্জ উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়নের কৃষক জসিম উদ্দিন, কামাল উদ্দিন, চান্দাইকোনা ইউনিয়নের আব্দুল করিম,বিনয় চন্দ্র , ঘুড়কা ইউনিয়নের আব্দুল বারিক, রহিমসহ একাধিক কৃষকের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপকালে তারা শ্যামল বাংলাকে জানান, পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করে ধানের ব্যাপক উপকার হচ্ছে। আর্থিক ভাবে তারা লাভবান হচ্ছেন। এ পদ্ধতিতে পোকা দমনের ফলে কীটনাশকের ব্যবহার অনেক কমে গেছে।
এ দিকে কৃষকরা অভিযোগ করে বলেছেন বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির রোগ-বালাই দমনকারী কীটনাশকের ছড়াছড়িতে ভেজালমুক্ত কীটনাশক চেনা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। কোম্পানির এজেন্টদের পরামর্শে ধানের ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার করে পরিবেশের ক্ষতি ও কৃষকরা নানা ধরনের রোগে ভুগছে। অজানা কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ধানের খেতে উর্বরকারী ব্যাক্টেরিয়া ও ধানের উপকারী পাখির ব্যপক ক্ষতি হচ্ছে। এ দিক থেকে আমরা লাভবান হচ্ছি। কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে দাবি জানান এসব কৃষক। তারা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভেজালমুক্ত সার, কীটনাশক পাওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা কামনা করেন।
রায়গঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, চলতি রোপা আমন মৌসুমে ১৯ হাজার ৭৮০ হেক্টর ভূমিতে ধানের চাষ করেছে কৃষক। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, চলতি আমন মৌসুমে ধানের সর্বনাশা পোকা দমনে, পার্চিং পদ্ধতির কোন তুলনা হয় না। এই পদ্ধতিতে কৃষি, কৃষক ও পরিবেশ সবকিছুই নিরাপদ। প্রতি ১০ শতাংশ জমিতে তিনটি করে গাছের ডাল পালা কেটে ধানের ক্ষেতে পুঁতে দিলে বেশি বেশি পাখি বসবে, ফলে খুব সহজে ক্ষতিকারক পোকা দমন হতে পারে। তিনি জানান চলতি রোপা আমন মৌসুমে উপজেলার অধিকাংশ ভূমিতে কৃষক পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। অন্য কৃষকদের সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে কৃষি অফিস কাজ করে যাচ্ছে। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে কৃষকের অর্থনৈতিক সাশ্রয় হচ্ছে।
আরএক্স/