শ্রীপুরে আবারো ফুটেছে নেদারল্যান্ডের টিউলিপ


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


শ্রীপুরে আবারো ফুটেছে নেদারল্যান্ডের টিউলিপ

গাজীপুরের শ্রীপুরের কেওয়া পূর্ব খন্ড গ্রামের গ্রামের সফল উদ্যোক্তা দেলোয়ারের মৌমিতা ফ্লাওয়ার্স বাগানে আবারো ফুটেছে সারি সারি নেদারল্যান্ডের টিউলিপ ফুল।টিউলিপ শীতপ্রধান দেশের ফুল। এর উৎপত্তির আদিস্থান নেদারল্যান্ডস। অটোমান সাম্রাজ্যের সময় থেকেই এই ফুলের পরিচিতি রয়েছে। অনেকের মতে এটি পামির মালভূমি এবং হিন্দুকুশ পর্বতমালা অঞ্চল থেকে উদ্ভুত হয়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে।

গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশে এর দেখা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এ অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখিয়েছেন উপজেলার কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা দেলোয়ার হোসেন। তাঁর বাগানজুড়ে ফুটেছে নানান রঙের রাজসিক সৌন্দর্যের ফুল টিউলিপ। 'মৌমিতা ফ্লাওয়ার্স’ নামের এ বাগানে সারি সারি শত শত টিউলিপ ফুল ফুটে রয়েছে। শীত আসলেই একের পর এক ফুটতে শুরু করে। বেগুনি, হলুদ, লাল ও সাদা সহ মোট তেরো রঙের ফুল রয়েছে এই বাগানে। ডিসেম্বর মাসের শুরুতে প্লান্টিং শুরু হয়। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাগানে শত শত টিউলিপ ফুলে দৃষ্টি কাড়ে হাজারো দর্শনার্থীদের। শীত এলেই দর্শনার্থীরা ভিড় জমায় বিদেশী এ ফুল দেখতে। 

গেলো বছর কৃষিমন্ত্রী আঃ রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনিও এসেছিলেন এ বাগানে বিদেশি ফুল টিউলিপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটক,সাধারণ দর্শনার্থী থেকে শুরু করে কৃষক ও কৃষি শিল্পোদ্যক্তরাও আসেন এ বাগানে। 

মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকালে  বাগান পরিদর্শনে এসে কথা হয় বাগান মালিক কৃষি উদ্যোক্তা দেলোয়ারের সাথে। 

দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ফুলের বাগানসহ নার্সারি কাজে সম্পৃক্ত তিনি। ২০১৮ সালে রিচ ওয়ান নামের একটি সিড কোম্পানি টিউলিপ ফুলের একহাজার বাল্ব (কন্দ) তাকে উপহার দিতে চান। কিন্তু প্রস্তুতি না থাকায় আনেননি। পরের বছর এনেছেন। রোপনের ২৫ দিন পর প্রথম একটি টকটকে লাল রঙের ফুল ফুটে। তাঁর আনন্দ দেখে কে! এরপর থেকেই বড় করে শুরু হয় এ ফুলের চাষ। বিশেষ করে গেলো বছরই বড় পরিসরে চাষ করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। চারদিকে পলিথিন এবং বিশেষ কাগজ দিয়ে বড় ধরণের ঢাকা শেড তৈরি করেছেন। যার চারপাশেই ছিদ্রযুক্ত নেট ব্যবহার করেছেন। এতে বিশেষ পদ্ধতিতে সূর্যের আলো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা করেন। প্রতিটি ফুলে তাঁর ৬৫ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান। পর্যটকদের কাছে প্রতিটি ১৩০ টাকা করে বিক্রি করেন। 

সম্প্রতি নেদারল্যান্ডস থেকে তিনি ১ হাজার ১০০টি টিউলিপ গাছের বাল্ব (বীজ হিসেবে ব্যবহৃত রূপান্তরিত কাণ্ড) নিয়ে আসেন। সেগুলোকে রোপণ করে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখেন। নিয়মিত পরিচর্যা আর প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে প্রথমবারেই পেয়ে যান সফলতা।টিউলিপের চাষ নিয়ে দেলোয়ার  শোনান তাঁর স্বপ্নের কথা। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোথাও টিউলিপের চাষ হচ্ছে না। তাই এই ফুলকে তিনি দেশে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে দিতে কাজ শুরু করেছেন। এ বছর নেদারল্যান্ড থেকে হলুদ, লাল, পিংক, অরেঞ্জ, সাদা, পার্পেলসহ ৮/১০ প্রজাতির ৭০ হাজার টিউলিপের বীজ আমদানি করেছেন। আমদানিকৃত বিজের ৪০ হাজার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়,১ হাজার রাজশাহীতে এবং ৫ হাজার যশোরের গদখালীতে রোপন করেছেন।

দেলোয়ার বলেন, এ দেশে গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস সহ বিভিন্ন ফুল ব্যাপকভাবে চাষ হয়। তবে ভিন্ন সৌন্দর্যের টিউলিপ ফুলের ব্যাপক চাহিদা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশের ফুলের বাজারে গোলাপসহ অন্যান্য ফুলের ভিড়ে ব্যাপকভাবে টিউলিপ ছড়িয়ে দিতে চান তিনি। তাঁর বিশ্বাস, এ দেশে টিউলিপের বড় বাজার তৈরি করা সম্ভব। বড় পরিসরে উৎপাদনে যাওয়াও সম্ভব।

তিনি আরো বলেন, এখনো বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ ফুল বিক্রি করে লাভবান হতে পারেন নি। তবে স্বপ্ন দেখেন, একদিন নিজের আর্থিক চাহিদা পূরণ করেও দেশের জিডিপি বাস্তবায়নেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবেন।এর আগে জার্বেরা, চায়না গোলাপ ও বিদেশী বিভিন্ন ফুল চাষে সফল হয়েছেন তিনি। স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক পেয়েছেন।দেলোয়ার বলেন, আমাদের দেশে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সেই চাহিদা মেটাতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ফুল আমদানি করা হয়। ফুল চাষে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ’ হয়ে উঠলেও আমরা পিছিয়ে আছি। দেশের অর্থনীতি ও চাহিদার কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিদেশী ফুল দিয়ে আমার স্বপ্ন যাত্রা শুরু। নানা প্রতিবন্ধকতার পরও থেমে থাকিনি।এরই মধ্যে পেয়ে যাই একের পর এক সফলতা।গেলো বছর টিউলিপ ফুল ফুটিয়ে নতুন স্বপ্ন ছূঁইতে পেরেছি।

এসএ/