১৮ বছর ধরে বিমানবন্দরে বসবাস করে সেখানেই মৃত্যু
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩:২৫ পূর্বাহ্ন, ১৫ই নভেম্বর ২০২২
মেহরান কারিমি নাসেরি অবশেষে বিমানবন্দরের টার্মিনালেই মারা গেলেন। ফ্রান্সের শার্ল দ্য গল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, নাসেরি গত শনিবার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যু ছিল স্বাভাবিক।
ইরানের নির্বাসিত এই ব্যক্তি ফ্রান্সের একটি বিমানবন্দরে আটকা পড়ে ১৮ বছর কাটিয়ে দেন। এ ঘটনা নিয়ে হলিউডের চলচ্চিত্র পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ ‘দ্য টার্মিনাল’ নামের একটি ছবি বানান। সেটি বেশ জনপ্রিয় হয়। আর তাতে মূল ভূমিকায় অভিনয় করেন টম হ্যাংকস। সঙ্গে ছিলেন ক্যাথেরিন জেটা-জোন্স।
নাসেরি মূলত অভিবাসনের ফাঁদে পড়েছিলেন, তিনি ফ্রান্সে প্রবেশ করতে পারছিলেন না। অন্য কোথাও যাওয়ার উপায়ও তার ছিল না। বাধ্য হয়ে একসময় তিনি টার্মিনালের অচেনা পরিবেশেই বসবাস শুরু করেন এবং একপর্যায়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হয়ে ওঠেন। সুবিশাল বিমানবন্দরের ছোট্ট একটা গণ্ডি ও প্লাস্টিকের বেঞ্চই তার ঠিকানা হয়ে যায়।
বৈচিত্র্যময় ঘটনাটির ছায়া অবলম্বনে স্পিলবার্গ ২০০৪ সালে ‘দ্য টার্মিনাল’ নামের যে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তাতে কাহিনির একটু ভিন্নতা ছিল। টম হ্যাংকস যে ব্যক্তির চরিত্র রূপায়ণ করেন, তিনি নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে আটকা পড়েছিলেন। ওই সময় তার দেশে আচমকা রাজনৈতিক বিপর্যয় শুরু হয়ে যায়। ফলে তার ফেরার সুযোগ ছিল না।
ওই চলচ্চিত্রের আয়ের একটি অংশ নাসেরিকে দেয়া হয়েছিল। তার বেশির ভাগ খরচ করে ফেলার পর কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি প্যারিসের শার্ল দ্য গল বিমানবন্দরে ফিরে এসেছিলেন। তখনো তার কাছে কয়েক হাজার ইউরো অবশিষ্ট ছিল।
১৯৪৫ সালে ইরানের খুজেস্তান প্রদেশে নাসেরির জন্ম। ১৯৮৮ সালে মায়ের খোঁজে বেরিয়ে তিনি ইরান থেকে লন্ডন, বার্লিন ও আমস্টারডাম হয়ে নভেম্বরে প্যারিসে পৌঁছান এবং সেখানেই থাকতে শুরু করেন। যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস- প্রতিটি দেশই তাকে বহিষ্কার করেছিল। কারণ তিনি অভিবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। রোয়াসি-শার্ল দ্য গল বিমাবন্দরে তার পক্ষে একদল মানুষ অনানুষ্ঠানিক সমর্থন জানিয়ে ঐক্যবদ্ধ হন। তারা নাসেরির জন্য খাবার, চিকিৎসা সহায়তা, বইপত্র এবং একটি রেডিওর বন্দোবস্ত করে দেন।
ফরাসি কর্তৃপক্ষ ১৯৯৯ সালে নাসেরিকে শরণার্থীর মর্যাদা দেয়। ফলে তিনি ফ্রান্সে বসবাসের অধিকার অর্জন করেন। কিন্তু এর পরও নাসেরি ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিমানবন্দরেই থেকে যান। সে সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। তারপর তিনি কিছুদিন একটি হোস্টেলে বসবাস করেন। সম্প্রতি নিজের বহুদিনের পুরোনো বাসস্থান বিমানবন্দরের টার্মিনালে ফিরে আসেন। সেখানে মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।
জেবি/ আরএইচ/