যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরে শিশুদের বিশ্বকাপ


Janobani

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১২:০৯ পূর্বাহ্ন, ২২শে নভেম্বর ২০২২


যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরে শিশুদের বিশ্বকাপ
ছবি: এএফপি

বিশ্বকাপ জ্বরে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। আর এই স্রোতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় আয়োজন করা হয়েছে শিশুদের বিশ্বকাপ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের প্রফুল্ল করে তুলতেই এই ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন। গতকাল রোববার ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে শিশুদের বিশ্বকাপের এই খবর তুলে ধরা হয়।


বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার ইদলিবে ৩০০-এর বেশি শিশুর অংশগ্রহণে গত শনিবার তাদের নিজস্ব ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হয়। সংগঠকরা আশা করছেন, ১১ বছরের যুদ্ধে বিপর্যস্ত মানুষগুলো এই আয়োজনে কিছুটা হলেও ভালো সময় কাটাবেন।


কাতারে অনুষ্ঠিত এবারের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে ৩২টি শিশুদের দল গঠন করা হয়েছে। ইদলিব এবং আশপাশের এলাকার বাস্তুচ্যুত শরণার্থী শিবিরের শিশুদের নিয়ে ২৫টি এবং বাকি সাতটি দল গঠন করা হয়েছে ওই অঞ্চলের শিল্পাঞ্চলে কাজ করা শিশুদের নিয়ে। গতকাল রোববার কাতারে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার প্রথম ম্যাচের অনুকরণে শিশুদের দলটিও কাতার ও ইকুয়েডর দেশের নামে দল নিয়ে খেলতে নামে। বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোর প্রতিটি গ্রুপ পর্ব অনুসরণ করে শিশুদের ম্যাচগুলো সাজানো হয়েছে বলে জানান আয়োজনকারী এনজিও সংস্থা ‘ভায়োলেট’এর কর্মী ইব্রাহিম সারমিনি।


উচ্ছ্বসিত শিশুরা ইদলিবের পৌর স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। অনেকেই এ বছরের বিশ্বকাপ দলের জার্সি পরে এসেছিল। ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুরা এই ‘ক্যাম্প ওয়ার্ল্ড কাপ’-এ অংশ নিতে গত কয়েক মাস ধরে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এই আয়োজনে অংশগ্রহণকারী ১২ বছর বয়সী বাসেল শেখো বলেন, ‘আমি স্পেনের প্রতিনিধিত্ব করছি। আশা করছি, আমরাই এবার কাপ জিতব।’ বাসেল একটি গ্যারেজে কাজ করে।


এনজিও কর্মী সারমিনি বলেন, ‘এই আয়োজনের উদ্দেশ্য শিশুদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করা এবং বাস্তুচ্যুত ও শ্রমিক তরুণদের আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে মনোযোগী করে তোলা।’ সারমিনি জানান, বিশ্বকাপ খেলার পুরোটা সময় ধরেই চলছে শিশুদের এই ক্যাম্প ওয়ার্ল্ডকাপ। আর এর ফাইনাল খেলাটি হবে ইদলিবের একটি ক্যাম্পে। তবে শীত শুরু হতে যাচ্ছে এবং এর সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিও শুরু হবে বলে উল্লেখ করে সারমিনি জানান, প্রাকৃতিক কারণে দারিদ্র্যপীড়িত শিবিরগুলোতে দুর্দশা নেমে আসবে। সারমিনি যোগ করেন, ‘তবে আমি আশা করি, শিশুদের এই ফুটবল খেলা দেখে, সমগ্র বিশ্ব বাস্তুচ্যুতদের দিকে তাদের মনোযোগ দেবে এবং তাদের সমর্থন করবে; যাতে তারা শিগগিরই তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারে।’


গৃহযুদ্ধের সূত্র ধরে আইএস জঙ্গিদের রাজত্ব ও পরবর্তী সময়ে তাদের দমনে পশ্চিমা যৌথবাহিনীর অভিযানে সিরিয়া পুরোপুরি একটি বিধ্বস্ত দরিদ্র দেশে পরিণত হয়েছে। তবে এখনো সরকারবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠী ইদলিব প্রদেশের বিশাল অংশ এবং পার্শ্ববর্তী আলেপ্পো, হামা এবং লাতাকিয়া প্রদেশের কিছু অংশে রয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারি বাহিনী এখনো এসব অঞ্চলে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। যে কারণে বিভিন্ন সময় এখনো এসব স্থানে হামলা ও হতাহতের খবর পাওয়া যায়।


যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে অন্তত ৫ লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন গত ১১ বছরে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন কয়েক লাখ। এমন অবস্থায় দেশটির বিভিন্ন প্রদেশের শরণার্থী শিবিরে দারিদ্র্যনিপীড়িত জীবন কাটাচ্ছেন বহু মানুষ। আর এমনই একটি অঞ্চল ইদলিব। এখানকার শিশুদের নিয়েই গঠিত হয়েছে এই বিশ্বকাপ ক্যাম্প। যারা দারিদ্র্যে জর্জরিত, কিছু সময়ের জন্য হলেও তারা আনন্দে মেতে উঠবেন।

সূত্র: এএফপি