গুচ্ছের ফাঁদে ইবি, স্বস্তির পরিবর্তে শঙ্কা


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:২৪ পূর্বাহ্ন, ৩১শে জানুয়ারী ২০২৩


গুচ্ছের ফাঁদে ইবি, স্বস্তির পরিবর্তে শঙ্কা
ইবি

শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে ২০২০-২১ সেশন থেকে ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০২১-২২ সেশনে আরো ২টি বিশ্ববিদ্যালয় যুক্ত হয় গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায়। ভোগান্তি ও সময় অপচয় রোধে গুচ্ছ পদ্ধতি চালু হলেও এই পদ্ধতি এখন শিক্ষার্থীদের জন্য হতাশার কারণ। দীর্ঘ ভর্তি প্রক্রিয়ার দরুণ সেশনজটহীন ক্যাম্পাসগুলোও এখন তীব্র একাডেমিক সেশনজটের আশঙ্কায় রয়েছে।


গুচ্ছ পূর্ববর্তী সময়ে উৎসবমুখর পরিবেশেই আয়োজিত হতো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের(ইবি) ভর্তি প্রক্রিয়া। ভর্তি প্রক্রিয়া শেষে বছরের প্রথম মাসেই ক্লাস শুরু করতো এই বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর প্রথম সেশনের ক্লাস শুরু হতে সময় নেয় অতিরিক্ত চার মাস। বর্তমানে ভর্তি পরীক্ষার ৬ মাস পরও ক্লাস শুরু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।


এদিকে ১০ম মেধাতালিকা প্রকাশের পরও ১৯৯০ আসনের মধ্যে ৩'শ এর অধিক আসন খালি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় আইসিটি সেল অফিস সূত্রে জানা যায়, নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর জন্য এখন পর্যন্ত ১০ম মেরিট লিস্ট প্রকাশ করা হয়েছে। আসন বেশি ফাঁকা থাকায় গণ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়। কিন্তু তারপরও আসন পূরণ হচ্ছে না। সর্বশেষ মেরিট লিস্ট ডাকার পরও খালি আছে প্রায় ৩০৫টি আসন। 


এদিকে ১০ম তালিকায় ভর্তি শেষে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে পরবর্তী তালিকা প্রকাশ করার কথা থাকলেও এখনও প্রকাশ করেনি কর্তৃপক্ষ। ২৯ জানুয়ারি থেকে ০১ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত চলবে চূড়ান্ত ভর্তি। আশঙ্কা করা হচ্ছে চূড়ান্ত ভর্তির পর আরও কিছু আসন খালি হতে পারে।


ইবিতে ভর্তি হতে আসা নবীন শিক্ষার্থী আরমান হোসেন শান্ত বলেন, 'যেখানে গুচ্ছ বহির্ভূত বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ভর্তি হওয়া আমাদের সেশনের শিক্ষার্থীরা তাদের একাডেমিক জীবনের অর্ধবর্ষ শেষ করে ফেলেছে সেখানে আমাদের ক্লাস শুরু নিয়েই অনিশ্চয়তা। কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া হবার কথা থাকলেও সবক্ষেত্রে তা না করায় অনেক টাকা খরচ ও ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থার এমন উদাসীনতা সত্যিই হতাশাজনক। "


গুচ্ছ পদ্ধতি ভর্তি কার্যক্রমকে স্বস্তির নামে প্রহসন অভিহিত করেন ইবি শিক্ষার্থী আসিফুর রহমান বলেন, " গুচ্ছ পদ্ধতি চালু হয়েছিল শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাগবের জন্য এবং শিক্ষার্থীবান্ধব ভর্তি পরিক্ষার পরিবেশ তৈরি করার জন্য। কিন্তু বাস্তব চিত্র হলো শিক্ষার্থী হয়রানি, প্রহসন, নাটকীয়তা, কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা, দায়িত্বহীনতার আরেক নামে এসে দাড়িয়েছে গুচ্ছ নামক এই তথাকথিত পদ্ধতি।


ভর্তি প্রক্রিয়ার এমন জটিলতার জন্য গুচ্ছ পদ্ধতিকে দায় দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির সাথে সংশ্লিষ্টরা। ইসলামী  বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. আহসান-উল-আম্বিয়া বলেন, 'গুচ্ছের অন্তর্ভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে জটিলতাগুলো তৈরি হয়েছে। যদি সঠিক পরিকল্পনা ও নির্দেশনা অনুযায়ী সমন্বয় করা হতো তাহলে এই ভোগান্তি ও ভর্তির দীর্ঘ প্রক্রিয়া তৈরি হতোনাহ। এই জটিলতার কারণে একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসন ফাঁকা থেকে যাচ্ছে।'


গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে স্বতন্ত্র ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে একমত পোষণ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক জৈষ্ঠ্য শিক্ষক জানান, 'গুচ্ছতে ভর্তি প্রক্রিয়া হওয়ায় তীব্র ভোগান্তিতে আছে অপেক্ষমান শিক্ষার্থীরা। ভোগান্তি কমানোর জন্য চালু হওয়া পদ্ধতি এখন আমাদের জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার অর্ধবছর পার হলেও আমরা এখনো ২০২১-২২ সেশনের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে পারিনি। এখন সময় এসেছে আমাদের এই পদ্ধতি কে বয়কট করার।'


গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে স্বতন্ত্র ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম 'জনবাণী'কে বলেন, ‘এটা জাতীয় সিদ্ধান্ত। চাইলেই আমরা বের হতে পারি না। আর বের হওয়ায় তোহ সমাধান নয়। কি কি কারণে এই জটিলতা ও ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে, সেটি পর্যালোচনা করে সমাধানের পথে যাওয়া উচিৎ।'


আরএক্স/