কৃষিতে আবহাওয়ার স্বয়ংক্রিয় পূর্বাভাস ব্যবস্থার যাত্রা শুরু


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫:৪২ পূর্বাহ্ন, ২৮শে মার্চ ২০২৩


কৃষিতে আবহাওয়ার স্বয়ংক্রিয় পূর্বাভাস ব্যবস্থার যাত্রা শুরু
সাব- সিজনাল টু সিজনাল’ স্বয়ংক্রিয় পূর্বাভাস ব্যবস্থার সূচনা

ফসল উৎপাদনে আবহাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করে যেখানে দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় কৃষককে যেমন উৎপাদন ঝুঁকি নিতে হয়, তেমনি আবহাওয়ার আগাম সঠিক তথ্য না থাকায় কৃষি উপকরণসমূহের অপচয়সহ সামগ্রিক উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। এজন্য কৃষকের কাছে আবহাওয়ার আগাম তথ্য থাকাটা জরুরি । এ সংকট মোকাবিলায় ‘কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্পের আওতায় ‘কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর’ এবং ‘বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর’ এর সহযোগিতায় কৃষিতে ‘সাব- সিজনাল টু সিজনাল’ আবহাওয়ার স্বয়ংক্রিয় পূর্বাভাস ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে । এই সিস্টেমের মাধ্যমে কৃষকেরা পরবর্তী ৪ সপ্তাহ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাবে, যা তাদেরকে সেই আবহাওয়া অনুযায়ী ফসল নির্বাচন থেকে শুরু করে উৎপাদন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।


সোমবার (২৭ মার্চ) রাজধানীর বিজয় সরণীতে বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘরের মাল্টিপারপাস হলে  ‘সাব- সিজনাল টু সিজনাল’ স্বয়ংক্রিয় পূর্বাভাস ব্যবস্থার সূচনা করা হয়।


অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ব্যক্তিবর্গ  এই স্বয়ংক্রিয় পূর্বাভাস ব্যবস্থাকে কৃষির জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে মনে করেন। তারা বলেন, বর্তমানে কৃষকেরা সাধারণত দৈনিক থেকে সর্বোচ্চ ৫ দিন পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাস পেয়ে থাকে। কিন্তু এই স্বল্প সময়ের আগাম তথ্য দিয়ে তারা ফসল উৎপাদন এবং দূর্যোগ মোকাবিলায় কার্যকরী সিদ্ধান্ত নিতে এবং প্রয়োগে পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ পাচ্ছে না। এক্ষেত্রে, ‘সাব- সিজনাল টু সিজনাল’ স্বয়ংক্রিয় পূর্বাভাস ব্যবস্থার মাধ্যমে সেই সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। এর পূর্বে গবেষক দল ডিএই এবং বিএমডির কর্মকর্তাদের নিয়ে নতুন উদ্ভাবিত স্বয়ংক্রিয় পূর্বাভাস ব্যবস্থার উপর সপ্তাহব্যাপী প্রযুক্তিগত এবং প্রায়োগিক প্রশিক্ষণের আয়োজন করেন।


উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার। তিনি বলেন, এই নতুন স্বয়ংক্রিয় পূর্বাভাস ব্যবস্থাটি একটি অত্যাধুনিক ব্যবস্থা যা আবহাওয়ার ধরণ সম্পর্কে সঠিক এবং সময়োপযোগী তথ্য প্রদানের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং এবং বিগ ডেটা অ্যানালিটিক্সের মতো সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে।


কৃষি সচিব আরও বলেন, এই পূর্বাভাস ব্যবস্থা শুধুমাত্র আমাদের কৃষকদের জন্যই নয়, কৃষি খাতের সমগ্র মূল্য শৃঙ্খলের জন্যও উপকারী। এটি আমাদের নীতিনির্ধারকদের কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য কার্যকর নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়ন করতে সাহায্য করবে। এটি আমাদের কৃষি উপকরণ সরবরাহকারী, প্রসেসর এবং রপ্তানিকারকদের তাদের সাপ্লাই চেইন পরিচালনা করতে, ঝুঁকি কমাতে এবং বিশ্ব বাজারে তাদের প্রতিযোগিতা বাড়াতে সাহায্য করবে।


মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় নেদারল্যান্ডের ‘ওয়েদার ইম্প্যাক্ট’ এর গবেষক এবং প্রকল্প সমন্বয়ক বব অ্যামারলান তার উপস্থাপনায় ‘সাব- সিজনাল টু সিজনাল’ আবহাওয়ার স্বয়ংক্রিয় পূর্বাভাস ব্যবস্থার প্রযুক্তিগত এবং প্রায়োগিক দিক তুলে ধরেন। এই স্বয়ংক্রিয় পূর্বাভাস ব্যবস্থার মাধ্যমে আবহাওয়া বুলেটিন, কৃষি- আবহাওয়া তথ্য সার্ভিস কীভাবে কৃষকদের নিকট পৌঁছে দেওয়া যায় এ বিষয়েও তিনি আলোকপাত করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রকল্প পরিচালক ড. মোঃ শাহ কামাল খান। তিনি বলেন, আমাদের কৃষকদের জন্য তাদের খামার ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় সাব-সিজনাল এবং সিজনাল পূর্বাভাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা বাস্তবায়ন করতে ডিএই, বিএমডির সক্রিয় সহযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়।


বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সিনিয়র পলিসি এডভাইজার ওসমান হারুনি, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস ।