পাবনা সুগার মিলে আয় নেই বেতন দিতে হয় ১১ লাখ টাকা
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২:০৪ অপরাহ্ন, ২৫শে মে ২০২৩
আখ চাষি, চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীসহ নানামুখী আন্দোলনের পরও গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ পাবনা চিনিকলের মাড়াই। আর এই মাড়াই কার্যক্রম বন্ধের কারণে নষ্ট হচ্ছে আখ মাড়াই যন্ত্রসহ মিলের কোটি কোটি টাকার সম্পদ। মিল বন্ধের পর ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন চাষীরা । সেই সাথে দীর্ঘ জীবন চাকরি করে অবসর গ্রহণের অর্থ না পেয়ে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছে।
জানা যায়, পাবনার ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়ায় ৬০ একর জমির নিয়ে দৈনিক ১৫’শ মে:টন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন পাবনা সুগার মিলটি ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ৭৯ কোটি টাকা ব্যায়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের অর্থায়নে স্থাপিত মিলটি ১৯৯৬-৯৭ মাড়াই মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে চিনি উৎপাদন শুরু হয়। পরের বছর ১৯৯৭-৯৮ মৌসুম থেকে বাণিজ্যিকভাবে মাড়াই মৌসুম চালু করে কারখানাটি। তবে উৎপাদন শুরুর পর থেকেই লোকসান গুনতে থাকে চিনিকলটি।
২০২০ সালে শিল্প মন্ত্রণালয় দেশের কয়েকটি চিনি কলের সাথে পাবনা চিনিকলের আখমাড়াই বন্ধ করে দেয়। এর পর থেকেই বন্ধ পাবনা চিনিকলের আখমাড়াই। যে মিলটিকে ঘিরে ছিল ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য। শ্রমিক-কর্মচারী, ও চাষিদের কোলাহলে মুখর থাকতো পুরো কারখানা এলাকা। এখন সে জায়গায় সুনসান নীরবতা। মারাই বন্ধের পর থেকে এ অঞ্চলে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে আখ চাষ। আখ চাষে যে পরিমাণ লাভবান হতো কৃষক অন্যান্য সবজী কিংবা ধান চাষে সে পরিমানে লাভবান হচ্ছেন না তারা৷
আখ চাষী মোহাম্মদ মোকবুল হোসেন জানায়, আমরা যখন আখ চাষ করতাম তখন আমাদের বিঘা প্রতি জমিতে ৪০-৫০ হাজার টাকা লাভ হতো কিন্তু এখন বর্তমানে অন্যান্য সবজি কিংবা ধান আবাদ করে সে পরিমাণ লাভ হচ্ছে না। এই সুগার মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে আমাদের প্রচুর পরিমাণে লোকসান হচ্ছে । সরকারের কাছে আমাদের আকুল আবেদন এই সুগার মিলকে আবার চালু করে দিন।
পাবনার দাশুড়িয়ার কালিকাপুর গ্রামের মিন্টু হোসেন জানায়, আখ চাষ ছিল সহজ পদ্ধতি। অল্প পরিশ্রমে মোটা অংকের টাকা আয় করা সম্ভব ছিল। আর আমাদের এই পাবনা সুগার মিলটি ছিল অনেক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন সুগার মিল। এই সুগার মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে যেমন আমরা আখ চাষ করতে পারছি না। তেমনই অনেকেই যারা মৌসুম ভিত্তিক সুগার মিলে চাকরি করতেন তারা তাদের চাকরি হারিয়েছেন।
পাবনা সুগার মিলে নিরাপত্তা প্রহরী আনোয়ার হোসেন জানায়, পূর্বে যখন সুগার মিলটি চালু ছিল তখন মানুষজন আসা যাওয়া করতো , মানুষের সাথে দেখা হতো সময় কেটে যেত। কিন্তু বর্তমানে একদম সুনসান নীরবতা। ঠিকই নিয়মিত ডিউটি পালন করে কিন্তু আমাদের সময় যেন কাটতে চায় না।
এ বিষয়ে পাবনা সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আখতারুজ্জামান জানায়, এই মিলের মাড়াই বন্ধের পর মিলটিতে কর্মরত অধিকাংশ স্থায়ী, ও মৌসুমভিত্তিক স্থায়ী শ্রমিক-কর্মচারীদের অন্যান্য চিনিকলে বদলি করা হয়েছে। আগামীতেও সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক মিলের কার্যক্রম চলবে। আর বর্তমানে পাবনা সুগার মিলে যে সকল যন্ত্রাংশ আছে অন্যান্য মিলে সেই যন্ত্রাংশ প্রয়োজন হলে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সেই মিলে পাঠানো হচ্ছে। বর্তমানে মিলটিতে ৫৭ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন৷ প্রতিমাসে বেতন দিতে হয় ১১ লাখ টাকা
আর পাবনা চার আসনের সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, এই সুগার মিলটি বন্ধ হয়েছে কর্পোরেশনের বড় বড় কর্তাদের কারচুপির কারণে। এই সুগার মিলটি চালু হওয়া বড় প্রয়োজন। আমি অবশ্য এ বিষয়ে সংসদে আলাপ করেছি। ইনশাআল্লাহ সুগার মিল চালু হবে।
আরএক্স/