সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জেমসের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা
বাদিনী ২ ঘন্টা কাঠগড়ার আটক!
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮:৫৯ অপরাহ্ন, ৬ই জুন ২০২৩
ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মোনায়েম হোসেন জেমস (৩২) এর বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ইডেন কলেজের ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার বাদিনীকে ২ ঘন্টা কাঠগড়ায় আটক রাখা হয়েছিলো।
মঙ্গলবার (৬ জুন) দুপুরে ঢাকার মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাকিল আহাম্মদের আদালতে এই ঘটনা ঘটে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আজ এ মামলায় লালবাগ থানার পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য্য ছিল। জামিনে থাকা আসামি হাজিরা প্রদান করেন। শুনানিকালে বাদি পক্ষে আইনজীবী প্রতাপ বাড়ৈ বিচারককে জানান, গত ২২ মে হাইকোর্ট আসামি জেমসের জামিন বাতিল করেছেন তাই আসামির জামিনের থাকার আর অধিকার নেই।
শুনানিকালে আসামি পক্ষে আইনজীবী মনজরুল আলম আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি হাইকোর্টের আদেশ সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে বিচারককে জানান। ওই সময় মামলার বাদিনীও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক হাইকোর্টের আদেশ দেখে আসামির জামিন বাতিল করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন এবং আসামিকে কাঠগড়ায় আটকে রাখেন।
এর কিছু সময় পর আসামি পক্ষের আইনজীবী বিচারককে হাইকোর্টের আদেশ দেখিয়ে বলেন, ১৫ দিনের মধ্যে আসামিকে আত্মসর্মণ করতে বলেছেন হাইকোর্ট। তা আবার আদেশ প্রাপ্তির দিন থেকে। এখনো ১৫ দিন পার হয়নি। আসামি প্রায় ২ ঘন্টা আটক থাকার পর কাঠগড়া থেকে বের করে বিচারক আসামিপক্ষের আইনজীবীসহ আসামিকে এবং বাদিনীসহ তার আইনজীবীকেও খাসকামরায় ডেকে নেন। খাসকামরা থেকে বের হয়ে আসামিসহ সকলেই আবারও এজলাসে এসে বসে । কিছু সময় পর আসামিপক্ষের আইনজীবী আসামিকে নিয়ে আবার খাসকামরার দিকে যান। এটা দেখে বাদিনীও বিচারকের খাসকামরার দিকে যেয়ে বিচারকের রুমে প্রবেশ করে বিচারকের সাথে অসৎ আচারণ করে। আদালতকে অসম্মান করার কারণে বাদিনীকে কাঠগড়ায় আটক রাখাার আদেশ দেন বিচারক। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী বাহিরে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের দেখে আসামিকে বিচারকদের চলাচলের রাস্তাদিয়ে বের করে দেন।
প্রায় ২ ঘন্টা ইডেন কলেজের ছাত্রী বাদিনী কাঠগড়ায় থাকার পর বিচারক দুপুর দেড়টায় এজলাসে ওঠে বলেন, আপনারা উভয় পক্ষই খাসকামরায় ছিলেন। বাদিনীর আচরণ আপনারা দেখেছেন। তিনি কিভাবে মিস বিহেব করেছেন। যা আদালত অবমাননার সামিল ছিল কি না? তখন বাদি পক্ষে আইনজীবী ক্ষমা প্রার্থণা করলে আদালতে বাদিনীকে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। এরপর বাদিনীকে ছেড়ে দেয়া হয় এবং আসামিকে বিচারকদের চলাচলের রাস্তাদিয়ে বের করে দেয়ারও কঠোর সমালোচনা করেন।
এদিন বাদি পক্ষের দেওয়া আসামিকে আটক রাখার পিটিশন আদালত নথিভূক্ত করেছেন এবং লালবাগ থানার পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৫ জুন দিন ধার্য্য করেন।
আরও পড়ুন: ইডেন শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের মামলায় আ.লীগ নেতার আত্মসমর্পণ
এ সংক্রান্তে আসামি পক্ষের আইনজীবী মনজরুল আলম জানান, আমরা শুনানির সময়ই জানতে পারি হাইকোর্ট আসামির জামিন বাতিল করে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন। আদেশ দেখে আসামি বিচারকতে অবহিত করলে তিনি বিষয়টি বুঝতে পারেন। বিষয়টি নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালে বিষয়। ১৫ দিনের মধ্যে আসামিকে আত্মসর্মণ করতে বলেছেন। তা আবার আদেশ প্রাপ্তির দিন থেকে। এখনো ১৫ দিন পার হয়নি। তাই বিচারক এ বিষয়ে কোন আদেশ দেননি। আসামিকে যেতে দিয়েছেন।
বাদি পক্ষে আইনজীবী প্রতাপ বাড়ৈ জানান, ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি এ মামলা দায়ের হয়। মামলায় ঢাকার ২ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল গত ৩০ মার্চ আসামিকে আত্মসমর্পনে জামিন প্রাদান করেন। বাদী পক্ষের আবেদনে হাইকোর্ট গত ২২ মে আসামি জামিন বাতিল করেন এবং আসামিকে ১৫ দিনের মধ্যে আসামিকে আত্মসর্মণ করতে বলেছেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, বাদিনী ইডেন মহিলা কলেজে পড়াশুনা করাকালীন সময়ে আসামির সাথে পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। আসামি তখন ঢাকা কলেজে পড়াশুনা করত। তারা একই জেলার বাসিন্দা হওয়ায় আসামির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেন। এক পর্যায়ে আসামি বিবাহের প্রলোভন দিয়া সাথে নিয়মিত শারিরীক সম্পর্ক করে আসতেছিল। সে বিবাহের জন্য বারবার বললে আসামি পরিবারের সম্মতিক্রমে দ্রুত বিবাহ করবে মর্মে জানায়। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৬ জুন লালবাগের একটি ভাড়া বাসায় বিবাহের প্রলোভন নিয়া ধর্ষন করে।
আসামির পিতা ও ভাইকে বিষয়টি জানালে বিবাহ করাইয়া দিবে মর্মে আশ্বস্ত করে। বাদিনী গত ৩০ জানুয়ারি ঢাকার ধানমন্ডি পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে শারীরিক পরীক্ষা করলে ডাক্তার ৪ সপ্তাহের গর্ভবর্তী বলে জানায়। এরপর আসামি বাচ্চা নষ্ট করে ফেলতে বলে। পরবর্তীতে আসামি বাদিনীকে বিবাহ না করে গত ৩ ফেব্রুয়ারি অন্যত্র বিবাহ করে। আসামি মোনায়েম হোসেন জেমস সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের হেমনগর গ্রামের আব্দুল ওহাবের ছেলে।
এদিকে বাদীনি জানান, আমার সাথে বার বাস অন্যায় করা হচ্ছে। আসামি যদি বার বার জামিন পেয়ে বাহির হয়ে যায় তাহলে কিভাবে ন্যায় বিচার পাবো? আদালতে নিকট তিনি ক্ষমা চেয়ে ন্যায় বিচার চান।
জেবি/ আরএইচ/