ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন প্রকৃতির জাদুঘর কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গলে


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:৫৩ অপরাহ্ন, ১৮ই জুন ২০২৩


ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন প্রকৃতির জাদুঘর কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গলে
ছবি: জনবাণী

দেশে এ মুহূর্তে প্রধান পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি হলো মৌলভীবাজার। ছোট-বড় মিলিয়ে এ জেলায় প্রায় ৫০টি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ২১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে বসবাস করছেন এখানে। একটি জেলায় একসঙ্গে এত পর্যটন আকর্ষণের কেন্দ্রস্থল খুবই কম থাকে। এর মধ্যে জেলার শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ হচ্ছে প্রধান দুই পর্যটন কেন্দ্রসমৃদ্ধ উপজেলা। বিশেষ করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মণিপুরি সম্প্রদায় অধ্যুষিত উপজেলা কমগঞ্জ পর্যটন আকর্ষণে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ছুটে আসেন এই উপজেলায়। কমলগঞ্জের উল্লেখ্যযোগ্য কয়েকটি পর্যটন আকর্ষণের একটি হচ্ছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। 


এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও পরিচিত। পরিচিতির দিক থেকে সুন্দর বনের পরেই লাউয়াছড়ার অবস্থান। এ উদ্যানটি কেবল পর্যটন স্থানই নয়, এ পার্ক এখন জীবন্ত প্রাকৃতিক গবেষণাগার, যা প্রাণী ও পাখি বিজ্ঞানীদের একটি রাজ্যও বলা যায়। বিখ্যাত পাখি বিশারদ ডেভিড জনসন ও পল থমসন লাউয়াছড়াকে পৃথিবীর অন্যতম উন্মুক্ত চিড়িয়াখানা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বাংলাদেশের ৭টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও ১০টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে এটি অন্যতম।


কমলগঞ্জ উপজেলার অবস্থিত ১২৫০ হেক্টর আয়তনের বনটি জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯২৫ সালে তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকার এখানে বৃক্ষায়ন শুরু করলে সেটাই বেড়ে আজকের এই বনে পরিণত হয়। শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার মৌলভীবাজার ফরেস্ট রেঞ্জের আওতাধীন ২ হাজার ৭৪০ হেক্টর আয়তনের সংরক্ষিত বন ছিল এলাকাটি। ১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী ১৯৯৬ সালের ৭ জুলাই জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়।


এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। সূর্যের আলোর প্রতিযোগিতার জন্য এ বনের গাছপালা খুব উঁচু হয়ে থাকে। একটা সময় এই বন এতই ঘন ছিল যে মাটিতে সূর্যের আলো পড়ত না। উঁচু-নিচু টিলাজুড়ে এ বন বিস্তৃত। বনের ভেতর দিয়ে দিয়ে অনেক পাহাড়ি ছড়া বয়ে গেছে, যা পর্যটকদের মুগ্ধ করে।


জীববৈচিত্র্যের দিক দিয়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের সমৃদ্ধতম বনগুলোর একটি। আয়তনে ছোট হলেও এ বন দুর্লভ উদ্ভিদ এবং প্রাণীর এক জীবন্ত সংগ্রহশালা। বনে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে নানা ধরনের বন্যপ্রাণী, পাখি এবং কীটপতঙ্গের শব্দ শোনা যায়।


আরও পড়ুন: মৌলভীবাজার হাওরে ফুটেছে শত শত পদ্মটুনা


এই উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভয়চর, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী দেখা যায়। বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য এ বন বিখ্যাত। বনের মধ্যে কিছু সময় কাটালেই উল্লুকের ডাকাডাকি কানে আসবে। লাউয়াছড়া উদ্যানে পাখির মধ্যে সবুজ ঘুঘু, বন মোরগ, তুর্কি, বাজ, সাদা ভ্রু সাত ভায়লা, ঈগল, শকুন, হরিয়াল, কালো মাথা টিয়া, পেঁচা, ফিঙে, লেজকাটা টিয়া, কালো বাজ, হীরামন, বাদুড় প্রভৃতি উল্লেখ্যযোগ্য। বনের বিচিত্র পশুপাখির ডাক বানরের ভেংচি আর উল্লুকের ছোটাছুটি পর্যটকদের মনে আনন্দ দেয় প্রতিনিয়ত। দিন দিন এখানে পর্যটক, শিক্ষার্থী, গবেষক, পাখি বিজ্ঞানীর আনাগোনা থাকলেও শীত ও বসন্তের সময় সবচেয়ে বেশি লোকসমাগম হয়। প্রকৃতি ভ্রমণের জন্য রয়েছে তিনটি  ট্রেইল বা হাঁটা পথ।


লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পাশেই রয়েছে মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জী। এ ছাড়া লাউয়াছড়া আরেকটি কারণে বিখ্যাত। ১৯৫০ সালে মাইকেল অ্যান্ডারসন নির্দেশিত হলিউডের বিখ্যাত ছবি ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজের কিছু দৃশ্য ধারণ করা হয়েছিল লাউয়াছড়ার এই জাতীয় উদ্যানে।


মাধবপুর লেক


কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর লেকটি চারদিকে সুউচ্চ সবুজ চা বাগানের মাঝখানে অবস্থিত। লেকের ঝকঝকে পানি, প্রকৃতির ছায়া, নিরিবিলি পরিবেশ ও শাপলা ফুলে দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে। মাধবপুর লেক যেন প্রকৃতির নিজ হাতে আঁকা হয়েছে।


খানাখন্দে ভরা চা বাগানের রাস্তা দিয়ে এ লেকে যেতে হয়। মাধবপুর লেকের ঝলমল পানি, ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ, শাপলা শালুকের উপস্থিতি মনোমুগ্ধকর অনুভূতি এনে দেয়। বেশকিছু বাঁক নিয়ে এঁকেবেঁকে পাহাড়ের ভেতর তার চলা। শীতকালে অতিথি পাখির দল আসে এই হ্রদে। হ্রদের জলে গোলপাতার ফাঁকে ফাঁকে ফুটে আছে নীল শাপলা। হ্রদের দুই পাশে টিলায় টিলায় ছড়ানো চায়ের গাছ।


চারপাশে ঘিরে থাকা উঁচু টিলা আর চা বাগান পরিবেষ্টিত মাধবপুর লেকটি পর্যটনের আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে অনেক জনপ্রিয়। প্রতিবছর হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসু মানুষ, দেশি-বিদেশি পর্যটক, প্রকৃতিপ্রেমিক, দর্শনার্থী, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা মনোমুগ্ধকর ও নির্জন লেকটি দেখতে ছুটে আসেন। গভীর এ হ্রদে রয়েছে বহু প্রজাতির বিশালাকৃতির মাছ ও কাছিম।


এ লেক ঘিরে রয়েছে দুটি ট্রেইল, যা উঁচু টিলা বেয়ে উঠতে হয়। বর্তমানে লেকটির চারদিকে ঘুরে আসতে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করতে হয়। কিছুক্ষণের জন্য হলেও যে কাউকে অন্য পরিবেশে নিয়ে যায়। কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ চৌমুহনা থেকে লেকটির দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতি কমপ্লেক্সের যাওয়ার পথের ধারে পড়ে লেকটি। হাম-হাম জলপ্রপাত


কমলগঞ্জ উপজেলার হাম-হাম জলপ্রপাত হয়ে উঠেছে আরেকটি দর্শনীয় স্থান। গহীন অরণ্যে অবস্থিত হওয়া এই জলপ্রপাতটি ২০১০ সালের শেষাংশে পর্যটন গাইড শ্যামল দেববর্মার সঙ্গে দুর্গম জঙ্গলে ঘোরা একদল পর্যটক আবিষ্কার করেন। এর পর থেকেই এটি বিখ্যাত হয়ে ওঠে। কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ইসলামপুর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত রাজাকান্দি রেঞ্জের ৭ হাজার ৯৭০ একর আয়তনের কুরমা বনবিট এলাকার পশ্চিম দিকে চম্পারায় চা বাগান। এই কুরমা বনবিটের প্রায় ৮ কিলোমিটার অভ্যন্তরে দৃষ্টি নন্দন এ হাম-হাম জলপ্রপাতটি অবস্থিত, যা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের প্রায় সীমান্তের নিকটবর্তী।


এখানে বর্তমানে সরাসরি পৌঁছবার কোনো সড়ক বা ব্যবস্থা নেই। কমলগঞ্জ উপজেলা চৌমুহনা চত্বর থেকে কুরমা চেকপোস্ট পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তায় স্থানীয় বাস/জিপ/মাইক্রোবাসে করে যেতে পারলেও বাকি পথ পাহাড়ি এলাকা পায়ে হেঁটে যেতে হয়।


হাম-হাম জলপ্রপাতে পর্যটকদের গহীন অরণ্য প্রবেশ করে জলপ্রপাত দেখতে হলে তৈলংবাড়ি বা কলাবন বস্তির আদিবাসীদের সাহায্য নিতে হবে। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা, উঁচু-নিচু পথে ট্রেকিং করা খুবই কষ্টের। পিচ্ছিল রাস্তার সতর্ক হয়ে চলাফেরা করতে হয়। ট্রেকিংকালে সবাইকে ভারসাম্য রক্ষর্থে বাঁশের লাঠি হাতে করে নিতে হয়। চলার পথে ডুমুরের গাছ আর বেত বাগানে দেখা মিলবে অগুনতি চশমা বানরের। এ জলপ্রপাতটিতে যেতে পেরোতে হয় দুর্গম পাহাড়ি সরু পথ।  জলপ্রপাতের অর্ধকিলোমিটার দূর থেকেই শোনা যায় ঝরনার জলধ্বনী।


পায়ে হেঁটে জলপ্রপাতটিতে পৌঁছাতে প্রায় ৩ ঘণ্টা সময় লাগে। ধারণা করা হয়ে থাকে, বাংলাদেশে অবস্থিত অন্যান্য জলপ্রপাতের তুলনায় এটি প্রশস্ততম। প্রায় ৩০ ফুট প্রশস্ততাবিশিষ্ট এবং ১৩৩ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট এ জলপ্রপাতটি। দিন দিন রোমাঞ্চকর অভিযাত্রীদের এক তীর্থভূমি হয়ে উঠেছে। ক্রমাগত পর্যটক সংখ্যা বাড়ছেই। ইতোমধ্যে সরকারও যাতায়াত ও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে। 


পদ্মছড়া লেক


কমলগঞ্জ উপজেলায় গেলে দেখা মিলবে পদ্মছড়া লেক। চারদিকে পাহাড় আর পাহাড়। উঁচু-নিচু টিলার সমাহার। সবুজের নান্দনিকতা রয়েছে লেকটি ঘিরে। এটি ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) মাধবপুর চা বাগানের ফাঁড়ি চা বাগান পদ্মছড়া চা বাগানে অবস্থিত। এই অপরূপ লেকটি এখন পর্যটকদের আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।


বলা হয়ে থাকে কমলগঞ্জ প্রকৃতির এক জীবন্ত জাদুঘর। এখানে প্রকৃতি নিজেকে এতটাই মেলে ধরেছে যে, পদ্মছড়া লেকটি এখনো অনেকের কাছে অজানা-অচেনা। পাহাড়ের বুকে সৌন্দর্য বিলিয়ে যাচ্ছে এটি। পলকেই মন চাঙা হয়ে উঠবে।


দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বাসে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল নামতে হবে। রেলপথে গেলে ঢাকা থেকে সিলেটগামী আন্তঃনগর ট্রেনে করে নামতে হবে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ভানুগাছ কিংবা শমশেরনগর রেলওয়ে স্টেশনে। শ্রীমঙ্গল থেকে বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে পদ্মছড়া লেকে যাওয়া যায়। আবার ভানুগাছ ও শমশেরনগর নামলে অটোরিকশায় করে যাওয়া যায়।


বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ


মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হচ্ছে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতি কমপ্লেক্স। মোহাম্মদ হামিদুর রহমান সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের একজন। তিনি কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই চা বাগানের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ধলই বর্ডার আউটপোস্টে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের  অক্টোবরে অসম বীরত্ব দেখানো এই মুক্তিযোদ্ধা হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত কমপ্লেক্সটিতে ভানুগাছ-মাধবপুর সড়ক দিয়ে যেতে হয়। এ কমপ্লেক্সে যাওয়ার কালে সড়ক পথের দুই দিকের পরিবেশও যেকোনো পর্যটককে মুগ্ধ করে। পথেই পড়ে শিববাজার জোড়া মন্দির যেখানে মণিপুরিদের সবচেয়ে বড় রাস উৎসবের স্থান রয়েছে।


এ ছাড়া কমলগঞ্জ উপজেলায় পদ্মছড়া লেক, ক্যামেলিয়া লেক, পাত্রখোলা লেক, বাম্বোতল লেক, শমশেরনগর গল্ফ মাঠ, শমশেরনগর বিমানবন্দরসহ বেশকিছু পর্যটন কেন্দ্র ও সবুজ চা বাগান রয়েছে। দৃষ্টিনন্দন ক্যামেলিয়া লেক


মৌলভীবাজারের চা বাগানের শ্রমিকদের কাছে যে লেকের নাম বিসলার বান। তবে এর প্রকৃত নাম হলো ক্যামেলিয়া লেক। কমলগঞ্জের শমশেরনগরে ব্রিটিশ কম্পানি ডানকান ব্রাদার্সের মালিকানাধীন শমশেরনগর চা বাগানে দৃষ্টিনন্দন এ লেকের অবস্থান। এ বাগানের আয়তন প্রায় ৪৩২৬ দশমিক ৪৭ একর।


চা বাগান কর্তৃপক্ষ প্রাকৃতিক এ লেকটিতে কিছুটা কৃত্রিমতা জুড়ে দিয়েছে। ইট-সিমেন্টের কিছু কৃত্রিম কাজ লেকটির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। লেকটির পানির ওপরে একটি পাটাতন তৈরি করা হয়েছে। এখন ‘বিসলার বান’ বা ‘ক্যামেলিয়া লেক’ হয়ে উঠেছে অসাধারণ এক পর্যটন স্পট। লেকটির পাশে রয়েছে চা শ্রমিকদের কাছে ‘ক্লাব ঘর’। এ ঘরে বা গাছের ছায়ায় পর্যাপ্ত সময় কাটানো সম্ভব। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এটি একেবারে নতুন গন্তব্য। তাই সেখানে যেতে হলে একা নয়, গ্রুপ করে যাওয়াই ভালো। তবে লেকটি যেহেতু চা বাগানের অভ্যন্তরে অবস্থিত, তাই  যাওয়ার আগে চা বাগান কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিলে ভালো হয়।


পাথারিয়া পাহাড়


মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় পাথারিয়া পাহাড় অঞ্চল অবস্থিত। এই পাহাড়েই রয়ে মনোমুগ্ধকর মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত। প্রায় ২০০ ফুট ওপর থেকে আছড়ে পড়া জলের স্রোত। এ ছাড়া এই পাহাড়ের বুক জুড়ে রয়েছে আরও অসংখ্য ছোট ছোট ঝরনা। যেগুলোর মধ্যে সন্ধানী, মায়াবন, মায়াকানন অন্যতম। যেই দুর্গম ঝরনাগুলোতে বর্ষার মৌসুমে যাওয়াটা বেশ দুষ্কর। বড় বড় পাথর, ক্ষীণ জলস্রোত আর প্রশান্তিদায়ক সবুজে ঘেরা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে প্রায় সারা বছরই থাকে পর্যটকদের আনাগোনা। মৌলভীবাজার হতে বড়লেখাগামী গাড়ি করে বড়লেখা পৌঁছার আগে কাঁঠালতলী নামক বাজারে নামতে হবে। সেখান থেকে ৮ কিলোমিটার পূর্বে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও পাথারিয়া বন বিভাগ অবস্থান। 


বাইক্কা বিল


একাধারে পাখি ও মাছের অভয়ারণ্য এবং গাছগাছালি ভরা বাইক্কা বিল মূলত হাইল হাওরের একটি অংশ। অগভীর এই হ্রদটিতে বিভিন্ন গাছপালার দেখা মেলে। সেই সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় জলাভূমিও। বিলের ঘেরাটোপে প্রবেশ করতেই পাখিদের মন মাতানো কলকাকলিতে মন ভরে উঠবে। শ্রীমঙ্গল পৌর শহর থেকে মৌলভীবাজার আসার মাঝ পথে বরুনা নামক এলাকায় এলে পশ্চিম দিকে বাইক্কা বিল যাওয়ার সড়ক।


বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র-বিটিআরআই


শ্রীমঙ্গল উপজেরা একটি পর্যটন অঞ্চল হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। শ্রীমঙ্গলের প্রকৃতি পর্যটকদের জন্য সমৃদ্ধ সম্ভার সাজিয়ে রেখেছে। বৃহত্তর সিলেটের ১৩৮টি চা বাগানের মধ্যে এই একটি উপজেলাতেই ৩৮টি চা বাগান, আশপাশের সব মিলিয়ে এই সংখ্যা ৬০-এর কম নয়। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে যেকোনো দিকে বের হলেই চা বাগানের সবুজ হাতছানি। 


বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র (বিটিআরআই) শহর থেকে দুই কিমি দূরে। রিকশা বা অটোরিকশা নিয়ে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায়। অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করলে চমৎকার ফুলের বাগান, রয়েছে বহু বছরের পুরোনো চা গাছ, চা ফ্যাক্টরি, টেস্টিং ল্যাব ইত্যাদি।


নীলকণ্ঠ সাত রঙ্গা চা


বিটিআরআই থেকে বের হলেই মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের আরেক আকর্ষণ নীলকণ্ঠ চা কেবিন। চা শ্রমিক রমেশ রাম গৌড় এখানে বিক্রি করেন পাঁচ, সাত, আট রংয়ের চা। শ্রীমঙ্গল শহরে বেশ কয়েক জায়গায় সাত রঙ্গা চা পাওয়া গেলেও সবচেয়ে ভালো মানেরটা হলো এই নীলকণ্ঠ।


সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা


শ্রীমঙ্গল শহরের প্রান্তে অবস্থিত সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানায়। ভালুক, হরিন, বানর, বন মোরগ, অজগর সাপ, বিভিন্ন ধরনের অতিথি পাখি, কথা বলা ময়না, বিভিন্ন রকম বিড়াল। পাখি দিয়ে সাজান ব্যক্তিগত এই চিড়িয়াখানাটি ভালো লাগবে। এখানে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা আর শহর থেকে রিকশা নিয়েই যাওয়া যায়, ২০ টাকা ভাড়া। তা ছাড়া রাস্তার দুই পাশে অজস্র চা বাগান, আপনার পরিবহনের ড্রাইভারকে বলে যেকোন চা বাগানে নেমে যেতে পারেন এবং ইচ্ছেমতো ছবি তুলতে পারেন। 


রিসোর্ট


শান্ত প্রকৃতি ও আবহাওয়া। বাঁশ ও ছন দিয়ে তৈরি ছোট ছোট ঘর। চারপাশে সবুজ গাছ আর পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ। মৌলভীবাজার অসংখ্য ইকো রিসোর্টগুলোকে সাজানো হয়েছে এভাবেই। প্রাকৃতিক বিভিন্ন স্থানগুলোর পাশাপাশি পর্যটকদের মন কেড়ে নেয় বিভিন্ন পাঁচ তারকা ও ইকো রিসোর্টগুলো। সুলভমূল্য থেকে শুরু করে বিলাসবহুল সব রিসোর্ট গড়ে উঠেছে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ। যার মধ্যে রয়েছে গ্রান্ড সুলতান টি রিসোর্ট, লেমন গার্ডেন, বালিশিরা রিসোর্ট, নভেম ইকো রিসোর্টে, ওয়াটারলিলি, টি হ্যাভেন ও টিলাগাঁও ইকো ভিলেজ, অরণ্য নিবাস ইকো রিসোর্ট অন্যতম। এ ছাড়া মৌলভীবাজার জেলা শহরের পাশেই রয়েছে দুসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা, মুক্তানগর রিসোর্ট ও রাঙাউটি রিসোর্ট।


জেবি/ আরএইচব/