আফিফ-মিরাজের বীরত্বে টাইগারদের অবিশ্বাস্য জয়


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


আফিফ-মিরাজের বীরত্বে টাইগারদের অবিশ্বাস্য জয়

দলীয় ৪৫ রানে ৬ উইকেটের পতন। সাকিব আল হাসান (১০) ছাড়া তিন পাণ্ডবসহ টপ অর্ডারের বাকি পাঁচ ব্যাটার ছিলেন সিঙ্গেল ডিজিটে। শুরুতেই দলের এমন বিপর্যয়ে ব্যাট হাতে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে দলকে দুর্দান্ত এক জয় উপহার দিলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব এবং মেহেদী হাসান মিরাজ। এ জয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

দুজনের অনবদ্য ব্যাটিং শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেটের স্বস্তির জয় এনে দিয়েছে বাংলাদেশকে। দুজনে দলকে শুধু জেতাননি, বাংলাদেশের হয়ে সপ্তম উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও গড়েছেন।

বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যকার তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টস জিতে ব্যাট করতে নামে আফগানরা। বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ২১৫ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারিরা।

এরপর লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের ইনিংসে একশর আগেই অলআউট হওয়ার শঙ্কা জাগে। সেখান থেকে আফগানদের স্বপ্ন ভেঙে আশার আলো দেখিয়ে দলকে জয়ের মুখ দেখালেন আফিফ ও মিরাজ জুটি।

২১৬ রানের সহজ টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে দলীয় রান ৫০ ছোঁয়ার আগেই প্যাভিলনে ফিরে যান প্রথম সারির ছয় ক্রিকেটার। সেখান থেকে খেলার মুখ ঘুরান তরুণ টাইগার জুটি মিরাজ-আফিফ।

এই জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল আয়োজনকারী বাংলাদেশ। জয়ে মূল অবদান আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মেহেদী হাসান মিরাজের বিশ্বরেকর্ড গড়া ১৭০ রানের পার্টনারশিপের। এর ফলে ৪ উইকেট ও ৭ বল হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করে টাইগাররা। মিরাজ ১১৫ বলে ৯৩ ও আফিফ ১২০ বলে ৮১ রান করে অপরাজিত থাকেন।

এদিকে চট্টগ্রামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা আফগানিস্তান শুরুতেই হারিয়ে বসে উইকেট। বেশি আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে তৃতীয় ওভারে মোস্তাফিজের শিকারে পরিণত হন আফগান ওপেনার রাহমানুল্লাহ গুরবাজ। ডাউন দ্য উইকেটে এসে মিডউইকেটে উড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছিলেন। বল জমা পড়েছে তামিম ইকবালের হাতে। তাতে ১৪ বল খেলা এই ওপেনার ফিরেছেন ৭ রানে।

তাসকিনের দ্বিতীয় ওভারেও রাহমানুল্লাহ গুরবাজের ক্যাচ উঠেছিল। কিন্তু সুযোগ কঠিন হওয়ায় বল হাতে জমাতে পারেননি আফিফ। তাসকিনের ষষ্ঠ ওভারে আরও একটি উইকেট পড়তে পারতো আফগানিস্তানের। শর্ট বলে পুল করেছিলেন নতুন নামা ইব্রাহিম জাদরান। কিন্তু ডিপ স্কয়ার লেগে তার ক্যাচ ফেলে দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ!

জীবন পেয়ে পরে জুটি গড়ার দিকে মনোযোগ দেন ইব্রাহিম। প্রাথমিক ধাক্কা সামালও দেওয়া হয় তাতে। রহমতকে সঙ্গে নিয়ে যোগ করেন ৪৫ রান। ১৪তম ওভারে এসে এই জুটিতে আঘাত হেনেছেন শরিফুল। তার বলে ইব্রাহিম স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন। একবার জীবন পাওয়া এই আফগান ব্যাটার সাজঘরে ফেরার আগে করেছেন ১৯ রান। তাতে ছিল ১টি চার ও ১টি ছয়।

তার পরেও রহমত ঢিমেতালে প্রান্ত আগলে ছন্দ ধরে রাখার চেষ্টায় ছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় স্পেলে বোলিং করতে এসে রহমতকে আর থিতু হতে দেননি তাসকিন। দারুণ এক বাউন্সারে মুশফিকের ক্যাচ বানিয়েছেন। ফলে ৬৯ বলে ৩৪ রানে শেষ হয় আফগান ব্যাটারের ইনিংস। রহমতের ইনিংসে ছিল ৩টি চারের মার। অবশ্য তার বিদায়ের পর কিছুটা ছন্দ পতন ঘটে ইনিংসের। দ্রুত সাজঘরে ফিরে যান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহও। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বলে কটবিহাইন্ড হওয়ায় ২৮ রানে শেষ হয় তার ইনিংস।

হঠাৎ চাপে পড়ে যাওয়া পরিস্থিতিতে দলকে উদ্ধার করে মূলত মোহাম্মদ নবী ও নাজিবুল্লাহ জুটি। নবী রয়ে সয়ে খেললেও আগ্রাসী ছিলেন জাদরান। এই জুটি ভালো স্কোরের স্বপ্নও দেখাচ্ছিল সফরকারীদের। কিন্তু নবীকে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি করিয়ে মাথা ব্যথা দূর করেছেন তাসকিন। তার পরেও নাজিবুল্লাহ হাল ছেড়ে দেননি।

গুলবাদিনকে সঙ্গে নিয়ে হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। জুটি গড়ারও চেষ্টায় ছিলেন তারা। কিন্তু বেশিরভাগ সময় খরুচে থাকা সাকিবের বোলিংয়েই সাজঘরে ফেরায় নাইবকে (১৭)। একই ওভারে রশিদ খানকে বোল্ড করে আফগান ইনিংসের রুপই পাল্টে দেন বামহাতি অলরাউন্ডার! ঝটপট ফিরে যান মুজিব উর রহমানও। মোস্তাফিজুর রহমানের বল বুঝতেই পারেননি তিনি। এমন সময়ে স্কোর ছিল ৮ উইকেটে ১৯৫। সঙ্গীদের আসা-যাওয়ার মিছিলে নাজিবুল্লাহ ফিরেছেন তার পর। শরিফুলের বলে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন। তবে ফেরার আগে স্কোর দুইশো অতিক্রম করে তারই কল্যাণে। আফগান ইনিংসের সর্বোচ্চ স্কোরার নাজিবুল্লাহ ৮৪ বলে করেছেন ৬৭ রান। তাতে ছিল ৪টি চার ও ২টি ছয়। তার বিদায়ের পর পর ৪৯.১ ওভারে ২১৫ রানে গুটিয়ে যায় আফগানিস্তানের ইনিংস। মোস্তাফিজের বলে শেষ উইকেটে ফিরেছেন ইয়ামিন আহমাদজাই।

৩৫ রানে মোস্তাফিজুর রহমান নিয়েছেন ৩টি উইকেট। তাসকিন, সাকিব ও শরিফুল দুটি উইকেট নিলেও খরুচে ছিলেন দুজন। তাসকিন ৫৫ রান দিয়েছেন আর সাকিব দিয়েছেন ৫০ রান। এক ওভারে ৪ রান দিয়ে একটি উইকেট মাহমুদউল্লাহর।

ওআ/