জুড়ীতে দিন দিন কমছে কমলার উৎপাদন: হতাশ চাষিরা


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০:৪২ পূর্বাহ্ন, ২০শে আগস্ট ২০২৩


জুড়ীতে দিন দিন কমছে কমলার উৎপাদন: হতাশ চাষিরা
কমলা

মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলা ও বড়লেখার আংশিক এলাকায় আবাদ হয় সিলেটের বিখ্যাত সবুজ কমলা। সম্প্রতি কমলা চাষিরা দিন দিন কমলা চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। কোন কোন মৌসুমে অগ্রিম বৃষ্টি হলে কিছু সংখ্যক ফল টিকে থাকে। এই ফল গুলো যখন একটু বড় ও রসালো হয় তখন এক ধরনের পোকার আক্রমণে ফসলের বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার জন্য আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা।


বেশ কয়েকজন কমলা চাষির সাথে কথা বলে জানা যায়, এখন কমলা চাষে লাভ থেকে লস বেশি। সে জন্য সবাই মনযোগ হারাচ্ছেন। বেশির ভাগ চাষিদের অভিযোগ যখন কমলার ফুল আসে তখন পানির তীব্র সংকটে দেখা দেয়ে। এই সময়ে পর্যাপ্ত পানি সেচের ব্যবস্থা না থাকায় তখন কমলার ফুল ও খুদে ফল সহ লেবুজাতীয় সব ধরনের ফসল ঝরে যায়। কৃত্রিম কোন পন্তা অবলম্বন করে কিছু দমন করা গেলেও মোট ফসলের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ফসল ঝরে যায় গান্ধি পোকার আক্রমণে। এই পোকা দমনের জন্য নেই কোন কিটনাশক বা বালাই নাশক। প্রতিরোধক ব্যবস্থা না থাকায় ফল শূন্য হয়ে যাচ্ছে প্রতিটি গাছ।


বিগত বছরে কমলার মৌসুমে জুড়ী উপজেলার হায়াছড়ায় কমলা ও বাতাবিলেবু'র বাগান পরিদর্শন করেন লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ ব্যবস্থাপনা  প্রকল্পের পরিচালক। সেখানে মাঠে কমলা চাষিদের সাথে মতবিনিময় করেন তিনি। একাধিক কৃষকের মতামত ও নেন। কমলাচাষিদের বিভিন্ন মতামত শুনেন ঐ কর্মকর্তা। এর পর সময় মতো প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহনের আশ্বাস দেন তিনি। তখন বেশিরভাগ কৃষকের অভিমত ছিল গান্ধি পোকা দমনের জন্য বিশেষ কোন পন্থা  কৃষি দপ্তর থেকে সহায়তা করা। তবেই চাষিরা কমলার ফলন ভালো ভাবে উপহার দিবে। কৃষি দপ্তরের কোন প্রতিক্রিয়া না পেয়ে বরাবরের মতো হতাশায় দিন কাটছে কমলা চাষিদের।


গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের কচুরগুল, লালছড়া, রুপছড়া, হায়াছড়া, শুকনাছড়া, জড়িছড়া ও ডোমাবাড়ী গ্রামে রয়েছে ছোট বড় প্রায় শতাধিক কমলার বাগান। এই এলাকার প্রবীণ বেশ কয়েকজন কমলা চাষিদের সাথে কথা হয়। তারা বলেন, আগের মতো এখন আর কমলা হয় না। বিগত বছরগুলোতে কমলার বাম্পার ফলন হলেও বিক্রি নিয়ে শঙ্কা ছিল। রাস্তায় পুলিশ ও বিডিআ'র আটক করে বলতো এগুলো ভারতীয় কমলা। তখন ক্ষোভে অনেকেই কমলার গাছ কেটে ফেলতেন। যখন কমলা বিক্রি করা যায় না গাছ রেখে কি লাভ এমন চিন্তা বিরাজ করতো চাষিদের মাঝে।


ডোমাবাড়ী গ্রামের মো: আছদ্দর আলী নামের প্রবীণ এক চাষি বলেন, আমরা যখন কচুরগুলের বাড়ীতে ছিলাম। তখনকার ১ গাছের কমল এখন ১০ গাছের কমলা দিয়েও সমান হবে না। তখন কমলার এতো চাহিদা ছিল না, এই এলাকায় মানুষের বসতি খুব অল্প ছিল। এখন  দেশে কমলার চাহিদা বেশি  মানুষ বেশি তবে নেই আগের মতো কমলার চাষাবাদ। এইতো সেদিনের কথা চোখের সামনে ভেঁসে আছে। এখন নেই আমাদের কমলার বাগান!


রুপাছড়া গ্রামের তোফায়েল আহমদ বলেন,  ছোটবেলা দেখতাম গাছে কমলা পেঁকে গাঁদা ফুলের মতো হলুদ বর্ণ ধারণ করতো। তবে, এখন বিগত দিনের মতো হয় না। কারণ এখন রোগ বালাই বেশি, বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণে কমলা পাকার আগেই ঝরে যায়। বিশেষ করে গান্ধি পোকা নামে একটি বিষাক্ত পোকার আক্রমণে কমলার রস হওয়ার সময় গাছ থেকে ঝরে যায়। এই রোগের নির্দিষ্ট কোন প্রতিষেধক না থাকায় পোকা দমন করা সম্ভব হয় না। সে জন্য কমলা চাষ করতে চাষিরা আগ্রহহীন।


জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুল আলম খান বলেন, আমরা কমলা বাগান পরিদর্শন করেছি। কিছু কমলা ঝরে যাচ্ছে এটা ঠিক তবে এই কমলা ঝরে যাবার কারণ পটাশিয়ামের ঘাটতি। চাষীদের বলেছি ১ লিটার পানির সাথে ৪ গ্রাম পটাশিয়াম মিশিয়ে গাছে দেবার জন্য। তাহলে এই ঝরে পড়া কমবে।


তিনি আরও বলেন, গান্ধী পোকা ফসল পাকার সময় আক্রমণ করে। এটি আরও মাসখানেক পরে হতে পারে। আমরা মাঠ পর্যায়ে চাষীদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এই মাসের শেষের দিকে লেবু জাতীয় ফসলের ওপরে চাষীদের নিয়ে একটি ট্রেনিং আছে। এছাড়াও আমরা বিভিন্ন সময় মতবিনিময় ও ট্রেনিং করে থাকি কৃষকদের নিয়ে।


লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ ও বৃদ্ধি প্রকল্পের পরিচালক ফারুক আহমদ বলেন, বিভিন্ন সমস্যার কারণে গাছ থেকে ফল ঝরে পড়ে। প্রথমে তীব্র খরা, তারপর বিভিন্ন পোকার আক্রমণ তো আছেই। আর চাষীরা কমলার গাছে সঠিক পরিমাণে সুষমভাবে কীটনাশক ব্যবহার করছে না। আর বিশেষ করে লাঠিটিলা এলাকায় কাঠবিড়ালির উৎপাত আছেই। এজন্যই সমস্যাগুলো হচ্ছে। তবে আমরা এখন সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছি মাল্টা চাষে।


আরএক্স/