তাল গাছে তাঁতী পাখির সংসার
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৩১ অপরাহ্ন, ২৭শে আগস্ট ২০২৩
বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই। আমি থাকি মহাসুখে অট্রালিকার পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি ঝড়ে। বাসা তৈরিতে যার নিপুণ কাজ সে তো শিল্পের বড়াই করতেই পারে।
কিন্তু কবি রজনীকান্ত সেনের কালজয়ী কবিতাটির নায়ক গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বাবুই পাখি আজ বিলুপ্তির পথে। প্রতিকূল পরিবেশ, বৈরী আবহাওয়া, শিকারীর উপদ্রব ও নির্বিচারে বৃক্ষ রোধনসহ নানা কারণে তাঁত পাখি নামে পরিচিত এই নিপুণ নীড় তৈরির গারিগরগুলো আজ হুমকিতে।
গ্রাম্য বাড়ির বাইর উঠানে তালগাছের পাতায় পাতায় দেখা যেত বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা। কিন্তু গ্রামের পথ ধরে অনেকসময় হাঁটলেও এখন বাবুই ও তার বাসা চোখে মেলা ভার।
বাবুই চষড়পবরফধব গোত্রের অন্তর্গত একদল প্যাসারাইন পাখি। খুব সুন্দর বাসা বোনে বলে এরা "তাঁতি পাখি" (ডবধাবৎ ইরৎফ) নামেও পরিচিত। এদের বাসার গঠন বেশ জটিল আর আকৃতি খুব সুন্দর। কয়েক প্রজাতির বাবুই একাধিক কক্ষবিশিষ্ট বাসা তৈরি করতে পারে।
তুতির সাথে এরা ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। এরা মূলত বীজভোজী পাখি, সে জন্য তাদের ঠোঁটের আকৃতি বীজ ভক্ষণের উপযোগী; চোঙাকার আর গোড়ায় মোটা।বাবুই পাখির বাসা উল্টানো কলসির মত দেখতে।
বাসা বানাবার জন্য বাবুই খুব পরিশ্রম করে। ঠোঁট দিয়ে ঘাসের আস্তরণ সারায়। যত্ন করে পেট দিয়ে ঘষে(পালিশ করে) গোল অবয়ব মসৃণ করে। শুরুতে দুটি নিম্নমুখী গর্ত থাকে। পরে একদিক বন্ধ করে ডিম রাখার জায়গা হয়। অন্যদিকটি লম্বা করে প্রবেশ ও প্রস্থান পথ হয়।
কথিত আছে: রাতে বাসায় আলো জ্বালার জন্য বাবুই জোনাকী ধরে এনে গোঁজে।বাবুইয়ের বাসা করার জন্য প্রয়োজন হয় নলখাগড়া ও হোগলার বন। কিন্তু দেশে নল ও হোগলার বন কমে যাওয়ায় এই বাবুইয়ের সংখ্যা খুবই কম। তা ছাড়া এই পাখি যেখানে বাস করে—তাল গাছে—সেখানে মানুষের চলাচল থাকে। এরা সাধারণত খুটে খুটে বিভিন্ন ধরনের বীজ, ধান, ভাত, পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু-রেণু ইত্যাদি খেয়ে জীবনধারন করে। গ্রিষ্মকাল এদের প্রজনন ঋতু। তারা বাংলাদেশে বাংলা ও দাগি বাবুই এর প্রজাতি বিলুপ্তির পথে, তবে দেশবাবুই এখনো দেশের সব গ্রামের তাল, নারিকেল, খেজুর, গাছে দলবেঁধে বাসা বোনে। এরা সাধারণত মানুষের কাছাকাছি বসবাস করে, তাই দেখা যায় এদের বাসা মানুষের হাতের নাগালের মাত্র পাঁচ অথবা ছয় ফুট উপরে। ফলে অনেক অসচেতন মানুষ এদের বাসা ভেঙে ফেলে আর একারণেই এদের সংখ্যা রহস্যজনকভাবে কমে যাচ্ছে। তাছাড়া দিন দিন গ্রাম থেকে তালগাছ হারিয়ে যাচ্ছে।
আনন্দনগর গ্রামের ইকতার লস্কার বলেন, দীর্ঘ ছয় মাস ধরে আমার একটি তালগাছে বাবুই পাখি বাসা বেঁধেছে তবে শিকারীদের উৎপাতে তারা সেখান থেকে চলে যাচ্ছে। আড়পাড়া ইউনিয়নের শ্রীহট্ট গ্রামের মকছেদ বিশ্বাস বলেন, আমাদের বাড়ির পাশে অনেক গুলো গাছে প্রতি বছরে বাবুই পাখি বাসা তৈরি করে যা দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্র-ছাত্রী ও পাখিপ্রেমি মানুষরা দেখতে আসতো কিন্তু এখন আর সেখানে বেশি গাছ নাই বাবুই পাখিও তেমন নাই। বিলুপ্ত প্রায় এই প্রাণীগুলোর অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন পাখি প্রেমি মানুষেরা।
আরএক্স/