সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম মানছে না খুচরা ব্যাবসায়ীরা
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২:১৬ অপরাহ্ন, ১৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৩
শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর মিরপুর-০১, ১২ ও ২ নম্বর সেক্টর, ফার্মগেট ও মোহাম্মদপুর খুচরা বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, পেঁয়াজ ধরন ভেদে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। আর প্রতিটি ডিম ১২ থেকে এলাকা ভেদে ১৩ টাকা; প্রতি হালি ডিম ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সরকার দাম আলুর দাম ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা বেঁধে দিয়েছে বেশি নিচ্ছেন কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মিরপুর ১৩ নম্বর সেক্টরের বাজারের আলু পেঁয়াজ-ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলামের জবাব ‘সরকার কি আমারে আলু পেঁয়াজ দেয়?যে সরকারের দামে আলু পেঁয়াজ বিক্রি করবো!’
আরও পড়ুন: অধিকারের আদিলুরের ২ বছরের কারাদণ্ড
ফার্মগেট কলমিলতা বাজারের ক্রেতা মোশারফ হোসেন ডিম কিনতে দাম জানতে চাইলে ব্যবসায়ী গোলাম রসুল জানালেন, ‘এক হালি ৫০ ট্যাকা। সরকার তো দর বাঁইধা দিয়েছে পিসের দাম ১২ টাকা। আমরা ১২ টাকায় কিনিচি। এক পিস লিলে দাম ১৩ টাকা। কোনটা লিবেন কন, হালি না পিস?’
খোঁজ নিয়ে জানা যায় রাজধানীজুড়ে একই চিত্র।
এভাবেই যার যেভাবে-যে দামে ইচ্ছা বিক্রি করছেন আলু, পেঁয়াজ আর ডিম। রাজধানীর গলির বাজারগুলোতে দাম আরও বেশি। অসহায় ক্রেতা। দ্বিতীয়বার দাম জিজ্ঞেস করলেই দোকানদারের কটু কথা বা চিৎকার শুনতে হয়। যাদের আয় কম, একদিন কাজ না করলে পরের দিন উপোস থাকতে হয় বা খাওয়া কমাতে হয়, তারা বাজারে গিয়ে খানিক দাঁড়িয়ে থেকে দাম শুনে এসব পণ্য কিছুক্ষণ দেখে চলে যাচ্ছেন সবজির দোকানের দিকে।
এ চিত্র বেশি দেখা গেছে মিরপুর বিভিন্ন এলাকার বাজারে।
দাম বেশি নিয়ে পাইকারি বাজারে খুচরা বিক্রেতাদের কথা কাটাকাটি করতে দেখা গেছে। মিরপুরের-১৪ নম্বর সেকশনের কচুক্ষেতের পাইকারি আলু বাজারও বেজায় গরম। সেখানে বিক্রমপুরের আলু পাইকারি ৩৮ টাকা আর রাজশাহীর আলু ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
দাম বেশির কারণে জাহাঙ্গীর হোসেনের আড়তে মিরপুরের বউবাজারের খুচরা বিক্রেতা আলাউদ্দিনের অশ্লীল কথা বিনিময় হচ্ছে। আলাউদ্দিন খুচরা বিক্রয় করার জন্য আলু নিতে মোকামে এসেছেন।
আলাউদ্দিন বলেন, ‘আপনারা পাইকারি ৪০ টাকায় বিক্রি করলে খুচরা কয় টাকা বিক্রি করবো? কাইল রাইতে টেলিভিশনে বুলিচে (জানিয়েছে) আলু ৩৫ টাকায় বিক্রি করতে হবি। কিনতেই হবি ৪০ টাকায়, বেচবো কয় টাকা? এর সাতে ভ্যানভাড়া আচে, ২-৩ কেজি নষ্ট হয়া যাবি। দুকান পর্যন্ত পুছতেই ৪২-৪৩ টাকা হয়া যাবি। ৫০ টাকায় বিক্রি করলি পাবলিক তো বাঁশ দিবি ‘।
সাংবাদিক বা বাজার মনিটারিং আঁচ করতে পেরে আড়তদার জাহাঙ্গীর হোসেন খুচরা বিক্রেতা আলাউদ্দিনকে বলেন, আমরা কি আর বেশি লাভ করি, কেজিতে ১-২ টাকা। আর এখন বাজারে যে আলু-পেঁয়াজ আছে তা আগের। কম দামের পেঁয়াজ দুই-তিন দিন পরে আসবে।
জাহাঙ্গীর হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন, সরকারের কাঁচাবাজারে দাম বেঁধে দিয়ে লাভ নেই, বিপরীত হবে। আমদানি কমে যাবে। দাম বেড়ে যাবে।
পাশের পাইকার আনিসুল ইসলাম দেশি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭২ টাকা, আমদানি করা বড় পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি করছেন। আর আলু বিক্রি করছেন ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে।
ডিমের পাইকারি বাজারে ভিন্ন ভিন্ন দাম দেখা গেছে। ভ্যানে করে দোকানে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ১২ টাকা পিস হিসাবে। কিন্তু মিরপুর ১৩ সেক্টরে প্রতি পিস ১২ টাকা ২০ পয়সা হিসাবে বিক্রি করছে। একই ডিম মিরপুর ১১ নম্বর সেক্টরের পাইকারি বাজারে ১২ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সরকার আলু-পেঁয়াজ ও ডিমের দাম বেঁধে দেয়। প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করেছে। একইসঙ্গে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬৪-৬৫ টাকা এবং আলুর কেজি ৩৫-৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার থেকেই নতুন দাম কার্যকর হওয়ার কথা।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) নিত্য-প্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ কথা জানান।