জমিতে ড্রাগন চাষ, লাভের টাকায় চলছে এতিমখানা


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:৩১ অপরাহ্ন, ২রা অক্টোবর ২০২৩


জমিতে ড্রাগন চাষ, লাভের টাকায় চলছে এতিমখানা
ড্রাগন গাছ

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. আবুল কাশেম তার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০ একর পতিত জমিতে নিজ উদ্যোগে ড্রাগন ফল চাষ করেছেন। সেই ড্রাগন ফল থেকে প্রতি মৌসুমে আয় হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আর ড্রাগন ফল বিক্রির লাভের টাকায় চলছে এতিমখানা। শুধু তাইা নয়, অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পেছনেও ব্যায় করা হচ্ছে। এতে প্রশংসা ভাসছেন সাবেক এই সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. আবুল কাশেম।


জানা গেছে, জেলার দেলদুয়ার উপজেলায় দেউলি ইউনিয়নের আলালপুর গ্রামে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বোরহানুল উলুম আহমাদিয়া ইয়াছিনিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসা, সুফিয়া কাশেম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, আবুল কাশেম ট্রাস্ট মসজিদ, আল জামিয়াতুল কাছেমিয়া ও জামেরুন্নেছা এতিমখানা, কমিউনিটি ক্লিনিক, পোস্ট অফিস ও সামাজিক কবরস্থান। এসব মিলিয়ে প্রায় ১৮ একর জমির ওপর গড়ে উঠা প্রতিষ্ঠানগুলোর ১০ একর পতিত জমিতে চাষ করা হয়েছে এই সুস্বাদু ড্রাগন ফল বাগান।


ড্রাগন ফল বাগানের কৃষক মো. আব্দুল কাদের বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিত্যক্ত ১০ একর জমির ওপর ড্রাগন বাগান করা হয়েছে। বাগানে ড্রাগনের চারা রয়েছে ১৫ হাজার। আমাদের বাগানে লাল, গোলাপী, বেগুনী, হলুদ ও সাদা জাতের ফল রয়েছে। এখন ড্রাগন ফলের মৌসুম। কেজিতে ধরছে ৫-৬টা। ড্রাগন ফল বাজারজাতে কোনো কষ্ট হয় না। প্রতিদিন প্রায় ৬শ থেকে ৮শ কেজি ড্রাগন ফল উত্তোলন করা যায়। তবে আমরা তা না করে মাসে মাসে উত্তোলন করছি। মাঝে মাঝে স্থানীয় পাইকারদের কারণে এর আগেও উত্তোলন করে বিক্রি করি। স্থানীয় পাইকারদের কাছে প্রতি কেজি ২ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।


বোরহানুল উলুম আহমাদিয়া ইয়াছিনিয়া ফাজিল মাদরাসার শিক্ষার্থীরা জানান, ড্রাগন ফলের বাগানে সজ্জিত আমাদের বিদ্যাপিঠ। এই বাগান দেখে শুধু আমরাই আনন্দ পাই না, আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও বাগানগুলো দেখতে আসছেন অনেকে। এছাড়াও আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে অনেক জায়গায় থাকায় পর্যাপ্ত আলো বাতাস পাওয়া যায়। শিক্ষা ব্যবস্থাও ভালো। তাছাড়া আমাদের লেখাপড়া, খেলাধুলা ও খাওয়াতেও কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে না। এখানে আমরা সুন্দরভাবে পড়াশোনা করতে পারছি।


আল জামিয়াতুল কাছেমিয়া ও জামেরুন্নেছা এতিমখানার মুহতামিম হাফেজ ইমরান হোসেন বলেন, এতিমখানা ও হিফজ শাখায় বর্তমানে অধ্যায়ন শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪২ জন। অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের খানাপিনা ভরন-পোষণের দায়িত্ব পালন করছেন প্রতিষ্ঠাতা টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সাবেক এমপি আলহাজ্ব মো. আবুল কাশেম। এতিমখানার শিক্ষার্থীদের ভরণ-পোষণের চাহিদা মেটাতে তিনি ১০ একর পতিত জমিতে ড্রাগন বাগান করেছেন। ওই ফল বিক্রির টাকা ব্যয় হচ্ছে এতিমখানার শিক্ষার্থীদের পেছনে।


বোরহানুল উলুম আহমাদিয়া ইয়াছিনিয়া ফাজিল মাদরসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. ইব্রাহিম খলিল বলেন, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চারদিকে ড্রাগন ফলের বাগান। বাগানটি দেখতে অসাধারণ। শিক্ষা প্রতিগুলোতে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা প্রকৃতির মনোরম পরিবেশে বেড়ে উঠছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিষ্ঠাতা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েই এই ড্রাগন বাগান করেছেন। উনার অবর্তমানে প্রতিষ্ঠানগুলো যেন বন্ধ না হয়, সে লক্ষেই উনার এই বাগান করা। বাগান থেকে উপার্জিত অর্থ এতিমখানাসহ তার অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনায় ব্যয় করা হচ্ছে।



জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও আবুল কাশেম ট্রাস্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. আবুল কাশেম বলেন, ১৯৭৩ সালে আমার বাবা ইন্তেকাল করেন। উনার রুহের মাগফিরাতের জন্য ওই সালেই আমি এখানে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করি। আমার প্রতিষ্ঠিত বোরহানুল উলুম আহমাদিয়া ইয়াছিনিয়া ফাজিল মাদরাসাটি বর্তমানে ডিগ্রি মাদরাসাতে উন্নীত হয়েছে। এর পাশাপাশি এখানে প্রতিষ্ঠা করেছি সুফিয়া কাশেম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, আবুল কাশেম ট্রাষ্ট মসজিদ, আল জামিয়াতুল কাছেমিয়া ও জামেরুন্নেছা এতিমখানা, কমিউনিটি ক্লিনিক, পোস্ট অফিস আর একটি সামাজিক কবরস্থান। এই প্রতিষ্ঠাগুলোর পরিচালনার ব্যয় মেটাতে আমার এই ড্রাগন বাগান করার উদ্যোগ।


আলহাজ্ব মো. আবুল কাশেম আরও বলেন, আমার ১৮ একর জমির ৮ একর জমিতে প্রতিষ্ঠানগুলো নির্মিত হয়েছে। বাকি ১০ একর পতিত জমিতে ড্রাগন বাগান করা হয়েছে। আমার এই ড্রাগন বাগানের বয়স প্রায় দেড় বছর। এ বছর আমি প্রায় ১৩/১৪ লাখ টাকার ফল বিক্রি করতে পেরেছি। ড্রাগন ফল বিক্রির টাকা এতিমখানাসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর পিছনে ব্যয় করা হচ্ছে। ওই টাকা আমি আমার ব্যক্তিগত কোনো কাজে খাটাই না। আমার ইচ্ছে আমার সকল সম্পতি আমি ট্রাস্টের নামে দিয়ে যাব। সম্পতির সকল আয়ে চলবে আমার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো।


তিনি আরও জানান, আগামীতে প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে পরনির্ভরশীল না হয় সেই লক্ষ্যেই আমার এই বাগান করার উদ্যোগ। আমার প্রতিষ্ঠিত এতিমখানায় যাতে দুই থেকে তিনশ এতিম সন্তান থাকতে পারে। তাদের আর্থিক কোনো কষ্ট না হয় সেটিকেই প্রাধান্য দিয়ে আমি ড্রাগন চাষে এগিয়ে যাচ্ছি। বাগানটি করতে আমাকে দেশের অনেক জায়গাতে ঘুরতে হয়েছে। সর্বশেষ নাটোর থেকে এই ড্রাগনের চারা এনে রোপণ করা হয়েছে।