বিএডিসির খাল খনন ও কালভার্ট নির্মাণে বিপ্লব ঘটেছে কৃষিতে


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:১১ অপরাহ্ন, ১৭ই অক্টোবর ২০২৩


বিএডিসির খাল খনন ও কালভার্ট নির্মাণে বিপ্লব ঘটেছে কৃষিতে
ছবি: সংগৃহীত

শুষ্ক মৌসুমে কৃষিতে সেচের পানির অভাব আর বর্ষা মৌসুমে অতি বৃষ্টির কারনে ক্ষেতে জলাবদ্ধতা থাকায় কৃষকের আহাজারি। সেই সাথে অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষতি। এ সমস্যা থেকে উত্তরনের জন্য বর্তমান সরকার নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন কওে চলেছে। ব্রীজ,কালভার্ট আর খাল খননের মধ্য দিয়ে সব মিলিয়ে এখন কৃষকের সোনালী সুদিন ফিরেছে। ফলে বদলে যাচ্ছে কৃষির দৃশ্যপট।


বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি প্রধান কৃষিকের আধুনিকায়ন করতে নানা মুখী কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছে বর্তমান সরকার। তারমধ্যে কৃষিকাজেসবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেচ কাজের জন্য বাংলাদেশ কৃষিউন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ইতিমধ্যে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর এই তিন জেলায় মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে খালখনন ও পানিনিষ্কাশনেরজন্য কালভার্ট নির্মাণসহ বহুমুখী কাজ চলমান রয়েছে। 



১ কেজি ধান উৎপাদনে প্রায় ৩ হাজার লিটার পানির প্রয়োজন হয়। তাই কৃষি কাজের অন্যতম অপরিহার্য উপদান হচ্ছে পানি, পানি ছাড়া কোন কিছুই উৎপাদন করা যায় না, সুতরাং কৃষি প্রধান এই দেশের তিন জেলার কৃষকের জন্য মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্প এক আশীর্বাদের নাম।


বর্ষা মৌসুমে কৃষি জমিতে জলবদ্ধতার কারণে প্রতি বছর হাজার কোটিটাকার লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়, এই কারণে বর্ষা মৌসুমে কৃষিজাত নিত্য-পণ্যের দাম হয়ে যায় আকাশ ছোঁয়া,দাম নাগালের বাইরেও  চলে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষের।


এছাড়াও জলাবদ্ধতা ও রাস্তানা থাকায়মাঠ থেকে কৃষিপণ্য পরিবহন ক্ষেত্রেও দেখা যায় নানা ভোগান্তি। এই সকল সমস্যা থেকে স্থায়ী ভাবে উত্তরণের জন্যব র্তমান কৃষিবান্ধব সরকার নানা মুখী কর্মসূচীর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষিউন্নয়ন কর্পোরেশনের মুজিবনগর সেচ প্রকরেল্প মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ৪৩৫ টি ছোট, বড়, মাঝারিকাল ভার্ট।


কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুরের কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, একটা সময় আমাদের মাঠে একটু বৃষ্টি হলে ও বর্ষা মৌসুমে পানি জমে থাকতো কিন্তু গত বছরেও মাঠের দুই প্রান্তে কালভার্ট নির্মাণ হওয়ায় এই সমস্যা থেকে চিরদিনের জন্য আমরা মুক্তি পেয়েছি। 


চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুর এলাকার কৃষক আব্দুররহীম জানান, বানাতখালী খাল খনন হওয়াতে আমাদের কৃষকদেরজন্য যেন ঈদ আনন্দ বয়ে এনেছে। সরকারের কাছে আর কিছুই চাওয়ার নেই।


মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার নাগাবিল এলাকার কৃষি উদ্যোক্তা নাহিদ হাসান জানান, বড় নাগার মাঠ থেকে গৌরি নগর গ্রামের ভিতর দিয়ে ভৈরব নদীতে পানি নিস্কাসনের জন্য একটি খাল থাকলেও কালের পরিক্রমায় সেটিভরাট ও দখল হয়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে ছিলাম আমরা কয়েক গ্রামের মানুষ তবে এবার খাল খননের পরে স্থায়ী সমাধান হয়েছে জলা বদ্ধতার।


এ বিষয়ে মুজিবনগর সেচউন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মাহাবুব আলম বলেন, সেই যুগে আলাদিনের যাদুর চেরাগ যেমন তার মালিকের চাওয়া পাওয়াপূর্ণ কওে ছিলঠিক এই যুগে এসে মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্প তেমনি কৃষকদেও সকল চাওয়া পাওয়া পূর্ণ করে চলছে।


তিনি আরো বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশ রত্ন শেখ হাসিনা নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কৃষির উন্নয়নের কাজ করে চলেছেন। যে কারণে আজ সমস্ত বাধাবিঘ্নতা পেরিয়ে দেশ পৌঁছে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়।  প্রধানমন্ত্রী কৃষকদেরভাগ্য পরিবর্তন ও দেশকেখাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে নানামুখী প্রকল্প হাতে নিয়েছেন আর আমরা মাঠ পর্যায়েতা বাস্তবায়ন করছি।

উল্লেখ্য যে, ২০২০-২১ অর্থ বছরেখুলনাবিভাগেরকুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেপুর জেলার ১৩টি উপজেলার সেচব্যবস্থার উন্নয়নে ২৩১ কোটি টাকা খরচে মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্প নামের একটি প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়।

‘মুজিব নগর সেচ উন্নয়ন’নামের প্রকল্পটি কৃষিমন্ত্রণালয়ের উদ্যোগেবাস্তবায়নকরছেবাংলাদেশ কৃষিউন্নয়নকর্পোরেশন (বিএডিসি)। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করাহবে।

প্রকল্পের প্রধান কাজগুলো হলো- ৫১টিখাল ২২০ কিলোমিটার পুনঃখননকরা, বিদ্যুৎ/সৌরশক্তি চালিত লো-লিফ্টপাম্প (এলএলপি) স্থাপনকরা ১৩০টি (৫ কিউসেক ২৫টি, ২ কিউসেক ৫০টি, ১ কিউসেক-৩০টি, ০.৫ কিউসেক ২৫টি)। পুরাতন গভীরনলকূপ মেরামত/সংস্কার-৪৮টি,এলএলপি/গভীরনলকূপের ভূ-গর্ভস্থ সেচনালানির্মাণ ১৭৮টি (১ হাজার ৫০০ মিটারের ৭৩টি, ১ হাজার ২০০ মিটারের ৫০টি, ১ হাজার মিটারের ৩০টি, ৮০০ মিটারের ২৫টি)। ভূ-গর্ভস্থ সেচনালাবর্ধিতকরণ ২২৫টি (প্রতিটি ৬০০ মিটার), সৌরশক্তি চালিতপাতকূয়ানির্মাণকরা ১৩০টি। ছোট/মাঝারি/বড় আকারের সেচ অবকাঠামো নির্মাণ ৪৩৫টি (ক্রস ড্যাম/ফুটব্রিজ, ক্যাটল ক্রসিং) (বড় আকারের-১৫ টি, মাঝারি আকারের ১২০টি, ছোটআকারের ৩০০টি)। প্রি-পেইডমিটার ক্রয় ৫০টি, পাম্প টেস্টিংল্যাবরেটরি স্থাপন একটিএবং অফিস ভবন নির্মাণ দুইটি (প্রতিটি ৪ হাজারবর্গফুট)।


‘মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন’নামের প্রকল্পটির আওতায় এমন প্রজেক্টগুলা ইতিমধ্যেই ৫০শতাংশের কাজ শেষ হয়েছে। তবে চলমান কাজ সম্পূর্নবাস্তবায়নহলে এই তিন জেলার কৃষকরা ঘটাতে পারবে কৃষি শিল্পের বিপ্লব এমনটিই মনে করছে এই অঞ্চলের সাধারন কৃষকরা।


জেবি/এসবি