কার্বন নির্গমন কমাতে বিশ্বকে সতর্ক করলো পরিবেশ বিজ্ঞানীরা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:০৭ অপরাহ্ন, ৮ই ডিসেম্বর ২০২৩


কার্বন নির্গমন কমাতে বিশ্বকে সতর্ক করলো পরিবেশ বিজ্ঞানীরা
ছবি: জনবাণী

আরব আমিরাত (দুবাই) থেকে:

#উষ্ণতা, বন্যা, বরফগলাসহ বিপর্যয়কর জলবায়ুর টিপিং পয়েন্ট অতিক্রমের দ্বারপ্রান্তে বিশ্ব

#কার্বন নিঃসরণ ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৫ শতাংশ কমাতে হবে

#৫ দিনে ৮৩ বিলিয়ন ডলারের তগবিল, ১১ টি অঙ্গীকার

#গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বাংলাদেশ


পৃথিবীর গড় উষ্ণতা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বৃদ্ধি পেলে ২০৩০ সালে আরো তিনটি বিপর্যয়ক কিপিং পয়েন্ট দৃশ্যমান হবে বলে মনে করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। এজন্য জীবাশ্ম জ্বালানিকে দায়ী করে তারা তা বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে হ্রাস করার পরিকল্পনা করে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ৪৫ শতাংশ কমানোর কথা বলছেন।


সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে চলমান বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ ২৮) বিশ্বনেতাদের সতর্ক করে একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে বিশ্বের ১২০ জন বিজ্ঞানী। তারা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা দিন দিন বেড়েই চলছে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরনের ফলে পৃথিবী উষ্ণতা, বন্যা, বরফগলাসহ পাঁচটি বিপর্যয়কর জলবায়ু টিপিং পয়েন্ট অতিক্রম করার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। 


আরও পড়ুন: জ্বালানির উৎপাদন বন্ধে উপায় খুঁজছে বিশ্ব


২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য নির্গমন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে বলে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ২০২৩ সালে কার্বন নির্গমন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। তারা জানান, কার্বন নির্গমন পরিস্থিতি উন্নতির পরিবর্তে গত দুই বছরে আরো অবনতি হয়েছে। এই নির্গমনের পরিমাণ এ বছর ৪০ দশমিক ৯ গিগা টনে গিয়ে পৌঁছাবে।


এদিন ক্লাব অব রোমের ৭৫ জন বিজ্ঞানী কপ নেতাদের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। তারা কপ প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের বিরোধিতা করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। খোলা চিঠিতে তারা বলেছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ ও বিজ্ঞান একে অপরের পরিপূরক। একটির সঙ্গে অন্যটি জড়িত। এ ব্যাপারে বিজ্ঞান নিয়ে সংশয়ের কোনো সুযোগ নেই। 


প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধের কোনো বিকল্প নেই। ২০৫০ সালের মধ্যে শুধু শূন্য কার্বন নির্গমন নিশ্চিত করলেই হবে না, বরং ওই সময় পর্যন্ত বিশ্বে যে কার্বন ডাই-অক্সাইড থাকবে, তা শোষণ করার জন্য নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে।


জীবাশ্ম জ্বালানির বিষয়ে এসব রিপোর্ট পরিবেশবাদীদের আরো ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। তারা দিনভর জলবায়ু সম্মেলন কেন্দ্রের ভেতরে নানা স্লোগানে তাদের প্রতিবাদ জানিয়ে জলবাযু সম্মেলনের নীতি নির্ধারকদের সতর্ক করে দিয়েছে। তাদের দাবি হলো, এবারের জলবায়ু সম্মেলনেই জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক।


এদিকে কপ-২৮ প্রেসিডেন্ট ড. সুলতান আল জাবের জানান, চলমান বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের ৫ দিনে লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের জন্য প্রতিশ্রুত অর্থের মধ্যে ৮৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি জমা হয়েছে। 


তিনি বলেন, এই ৫ দিনে ১১টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রতিশ্রুত অর্থ আদায় হয়েছে রেকর্ড পরিমান। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে এই কাজগুলো নতুন যুগ রচনা করবে। চুক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তর, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রথম ঘোষণা, নবায়নযোগ্য জ্বালানী এবং অতিমাত্রায় কার্বন নিঃসরনকারী শিল্পগুলিকে ডিকার্বোনাইজ করার উদ্যোগ।


গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বাংলাদেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে চলমান জলবায়ু সম্মেলনে ইনোভেশন ইন ডেভেলপিং ফাইন্যান্স ক্যাটাগরিতে গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন (জিসিএ) অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বাংলাদেশ। লোকাল লিড অ্যাডাপটেশন (এলএলএ) ক্যাটাগরিতে এ চ্যাম্পিয়নশিপ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের বাস্তবায়ন করা স্থানীয় সরকার ইনিশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (লজিক) প্রকল্প। প্রকল্পটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), সুইডেন, ডেনমার্ক, জাতিসংঘের মূলধন উন্নয়ন তহবিল (ইউএনসিডিএফ) এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহায়তায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। গত মঙ্গলবার রেসিলিয়েন্স হাবে আয়োজিত এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে স্থানীয় পর্যায়ে অভিযোজন ও সহনশীলতা বিনির্মাণে বাংলাদেশের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। গতকাল এই তথ্য জানিয়েছে কপ-২৮ সম্মেলন কেন্দ্রে থাকা বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের কর্মকর্তারা।


আরও পড়ুন: কপ-২৮ আসরে বড় প্রত্যাশা


জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো মোকাবিলায় স্থানীয়ভাবে পরিচালিত সৃজনশীল, প্রশংসনীয় এবং সম্প্রসারণযোগ্য প্রকল্পগুলোকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী এবং জনগণকে পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করার উদ্দেশ্যে ২০২২ সালে জিসিএ এলএলএ চ্যাম্পিয়ন্স অ্যাওয়ার্ডস চালু করা হয়।


লস এ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরাদ্দ দাবি কোন প্রকার দুষণ না করেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মালদ্বীপসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। এবারের সম্মেলনে শুরু হওয়া লস এ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন মালদ্বীপের জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ ও জ্বালানি মন্ত্রী তরিক ইব্রাহিম। দুবাইয়ে এক্সপো সিটিতে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনের সপ্তম দিনে একটি সাইড লাইন ইভেন্টে তিনি এ দাবি জানান। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো তিনিও জলবায়ু সম্মেলনের স্বোচ্ছার ভুমিকা পালন করছেন। এর আগে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ সমুদ্রের নীচে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক করে সারা বিশ্বে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট চেইঞ্জ জার্নালিস্ট'স ফোরামের সঙ্গে সম্মেলনে ব্লুজোনের ৩৩ নম্বর কক্ষে এক মতবিনিময় সভায় জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সচে' ঝুঁকিপূর্ণ দেশ মালদ্বীপের এই মন্ত্রী দক্ষিণ এশিয়ার জলবায়ু ন্যায্যতা আদায়ে আঞ্চলিক সহযোগিতার উপর গুরুত্বারোপ করেন।


মালদ্বীপের মন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক দ্বীপ বসবাসের উপযোগিতা হারিয়েছে। স্যানিটেশনসহ নানা সমস্যার কারনে স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে।


আরএক্স/