পিবিআইয়ের হাত থেকে রক্ষা পেলেন না মূল হত্যাকারী
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন, ২৫শে জানুয়ারী ২০২৪
কুষ্টিয়ায় আপন নিজের বোন আফরোজা খাতুন ওরফে পায়রা খাতুনকে হত্যা করে পুকুরের মধ্যে ফেলে রেখে আবার নিজেই বোনের হত্যা মামলার বাদী হয়েও পিবিআইয়ের হাত থেকে শেষ রক্ষা পায়নি আপন ভাই মোঃ মোহন বিশ্বাস (৩৬) নামের এক যুবক।
বুধবার (২৪ জানুয়ারী) দীর্ঘ দিন মামলাটি তদন্ত করার পর সমস্ত প্রমান হাতে পেলে এবং হত্যার সাথে জড়িত প্রমানিত হওয়ায় তাকে গ্রেফতার করেছে কুষ্টিয়ার পুলিশ বুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতারকৃত মোহন বিশ্বাস কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের ডাঁসা গ্রামের মৃত আতিয়ার রহমানের ছেলে। সম্পর্কে মৃত আফরোজা খাতুন ওরফে পায়রা মামলার বাদী মোহন বিশ্বাসের আপন বোন।
আরও পড়ুন: ভূয়া এনজিওর ফাঁদে সর্বশান্ত পাঁচ শতাধিক গ্রাহক
পিবিআই সুত্রে জানা যায়, নিহত পায়রা গত ০৫/০৩/২০২২ ইং তারিখ রাত আনুমানিক সাড়ে ৭ টার সময় রাতের খাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন ০৬/০৩/২০২২ ইং তারিখ ভোর আনুমানিক সাড়ে ৬ টার সময় বাড়ি হতে অনুমান ১/২ কিঃমিঃ দূরে কুমারখালী থানাধীন ডাসা গ্রামের নিহতের চাচার বাড়ি সংলগ্ন একটি পুকুরের মধ্যে পায়রার লাশ পাওয়া যায়।
পরে কুমারখালী থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করেন। বিষয়টি নিয়ে কুমারখালী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করে। পরে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, থাকায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে নিহত পায়রার ভাই মোহন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কুমারখালী থানার মামলা নং- ২৭, তাং- ২৩/১১/২২, ধারা- ৩০২/৩৪ পেনাল কোড। কুমারখালী থানা পুলিশ ২৩/১১/২০২২ ইং তারিখ হতে ২৩/০৮/২০২৩ ইং তারিখ পর্যন্ত তদন্ত করে। পরবর্তীতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর নির্দেশক্রমে পিবিআই কুষ্টিয়া ২৯/০৮/২০২৩ ইং তারিখে মামলাটির তদন্তভার গ্রহন করে।
পিবিআইয়ের অ্যাডিশনাল আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার), পিপিএম এর দিক নির্দেশনা মোতাবেক পিবিআই কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. শহীদ আবু সরোয়ারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পিবিআই কুষ্টিয়ার উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শরিফুল ইসলাম মামলার ঘটনার সাথে সূত্রোক্ত মামলার বাদীর সম্পৃক্ত থাকার তথ্য প্রাপ্ত হন। পিবিআই কুষ্টিয়ার একটি অভিযানিক দল অভিযান চালিয়ে মামলার বাদী মোঃ মোহন বিশ্বাস (৩৬) কে তার নিজ বাড়ি হতে গ্রেফতার করে।
পিবিআই কুষ্টিয়ার উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শরিফুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী মামলার ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করে। মোহন জানায় যে, তার বোন পায়রা অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে পারিবারিক অশান্তি সৃষ্টি হয়। গত ০৫/০৩/২০২২ ইং তারিখ বিকালে মোহনের স্ত্রী সুখি বেগম ও পায়রা প্রচন্ড ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়। ঐ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুখি বেগম ও মোহন বিশ্বাস পায়রাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক মোহন রাত ১২ টার পর পায়রাকে বাড়ির বাইরে ডেকে নিয়ে যায়। সুখি বেগম পায়রার মাথায় ইট দিয়ে সজোরে আঘাত করে। পায়রা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে মোহন ও তার স্ত্রী সুখি। বেগম ২টা ওড়না পায়রার গলায় পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে এবং লাশটি পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলে দেয়।
আরও পড়ুন: কমেই চলেছে চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা
কুষ্টিয়া পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোঃ শহীদ আবু সরোয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশক্রমে এবং বিশ্বস্ত সোর্সের মাধ্যমে জানতে পেরে মামলার বাদিকে আটক করি। পরে মামলার বাদিকে হত্যার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে আমাদের নিকট হত্যার বিষয়ে সমস্ত কিছু স্বীকার করে। আমরা পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আসামিকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
জেবি/এজে