এসি রুমে বসে মানুষের দুঃখ বুঝতে পারছে না ক্ষমতাসীনরা: ফখরুল
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জনগণ কেমন আছে, তা দেখতে আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীরা রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। এসি রুমে বসে মানুষের দুঃখ বুঝতে পারছে না ক্ষমতাসীনরা৷’
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) দুপুরে আয়োজিত এক সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের উদ্যোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
আওয়ামী লীগ সরকার যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই তারা এদেশকে দুর্ভিক্ষের মধ্যে ফেলেছে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, “১৯৭৪ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল, তখন এ দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। তখন না খেয়ে লাখ লাখ মানুষ মারা গেছে। এক টুকরো রুটির জন্য মানুষ আর কুকুর টানাটানি করেছে। সেদিন বাসন্তী লজ্জা নিবারণের জন্য একখণ্ড কাপড় পায়নি। সে মাছ ধরার জাল দিয়ে লজ্জা নিবারণ করেছে। আজ একই অবস্থা শুরু হয়েছে।”
ফখরুল বলেন, “মা তাঁর সন্তানকে খেতে দিতে না পারার কারণে সন্তানের মুখে বিষ তুলে দিয়ে নিজে বিষ খেয়ে মরছে। ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে মরছে, গলায় দড়ি দিয়ে মরছে। অহরহ ঘটছে এসব। এ অবস্থায় জনগণের সঙ্গে রসিকতা করে, মশকরা করে বলা হয়, জনগণের আয় বাড়ছে, জনগণ ভালো আছে।”
বিএনপির এ নেতা বলেন, “এ সরকার বাংলাদেশের সব অর্জনগুলোকে কেড়ে নিয়েছে, বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিয়েছে, ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। পুরোপুরিভাবে ক্রীতদাস করার সব ব্যবস্থা তারা করেছে।”
সংলাপের নামে নতুন নির্বাচন কমিশন নাটক করছে মন্তব্য করে বলেছেন, “নির্বাচন কমিশন নতুন নাটক শুরু করেছে। সে নাটক হচ্ছে বিভিন্ন পেশার, বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলছে তারা।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “গত পরশু দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেছে তারা (নির্বাচন কমিশন)। ৩০ জনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। এসেছে মাত্র ১৩ জন। সেখানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেছেন, এই তামাশাগুলো কেন করছেন?”
বিএনপির মহাসচিব বলেন, “নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ সরকার যদি না থাকে, তাহলে নির্বাচন কখনোই সুষ্ঠু করা যাবে না। এটা আমার কথা না, এটা একজন শিক্ষাবিদের কথা।”
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, “ক্ষমতাসীনরা বলছে, দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। সাধারণ মানুষের আয় কিন্তু ১৫ হাজার টাকার বেশি নয়। তার থেকে ক্ষমতাসীনদের আয় অনেক বেশি। মাসে এক হাজার কোটি টাকা যাদের আয়, তাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের গড় আয় মিলিয়ে জনগণকে বোকা বানাচ্ছে সরকার।”
ফখরুল বলন, “মাথাপিছু আয়ের মিথ্যা বক্তব্য আর উন্নয়নের বুলি শুভঙ্করের ফাঁকি ছাড়া কিছু নয়। দেশের মানুষকে এর মাধ্যমে বোকা বানাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা।”
আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “উনারা বলেন, আমরা নাকি বেশি বুঝি, সব জায়গায় মাতব্বরি করি। এটা একটা অরাজনৈতিক ভাষা, অশালীন ভাষা। এটা মাতব্বরি করার প্রশ্ন নয়, উনাদের জানতে হবে।”
বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, “এখন দরকার জনগণের সরকার। জনগণের সরকার করতে হলে অবশ্যই একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হলে নির্বাচনকালীন সময়ে একটা নিরপেক্ষ সরকার লাগবে, যা আওয়ামী লীগের অধীনে হবে না। আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। সবাই ঐক্যবদ্ধ হন। আমরা যেন দেশের সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে একটা দুর্বার আন্দোলের মাধ্যমে এই কর্তৃত্ববাদী খুনি সরকারকে উৎখাত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি।”
আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ-সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, আব্দুস সালাম আজাদ, সাবেক কৃষকদলের নেতা সাধন মিয়া সম্রাটসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
এসএ/