বিস্ফোরণের শব্দে অস্বস্তিতে সীমান্তবাসী, কাটছে না উদ্বেগও


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৫৯ অপরাহ্ন, ১৩ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪


বিস্ফোরণের শব্দে অস্বস্তিতে সীমান্তবাসী, কাটছে না উদ্বেগও
ছবি: জনবাণী

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান যুদ্ধের কারণে কোনভাবেই স্বস্তি মিলেছে না বাংলাদেশ সীমান্তের নিকটবর্তী বসবাসকারি মানুষের মনে। একই সঙ্গে কাটছে না উদ্বেগও।


কখন মিয়ানমারের অভ্যন্তর থেকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ, কখন সীমান্তের এপারে নিজ বসত ঘরে এসে পড়ে গুলি বা মর্টার শেল তার কোন পূর্ব নির্ধারিত কিছুই জানেন না এসব মানুষ। তার সাথে রয়েছে সীমান্ত অতিক্রম করে ওপার থেকে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের জান্তা সরকারের রাষ্ট্রিয় সদস্য বা অস্ত্রধারী রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ। একই সঙ্গে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে নতুন করে রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশের আশংকাও।


আরও পড়ুন: ঘুমধুম সীমান্তে অবিস্ফোরিত ‘রকেট লঞ্চার’ আতংক


এই যেন টানা ১৫ দিনের অস্বস্তিও উদ্বেগের কথা প্রকাশ করেছেন টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জালাল আহমদ।


তিনি বলেন, কোন ভাবেই যেন স্বস্তি নেই এলাকাবাসির মনে। সোমবার দিনব্যাপী হোয়াইক্যংয়ের লম্বাবিল ও উনচিপ্রাং সীমান্তের নাফনদীর ওপারে থেমে থেমে বিস্ফোরণের শব্দ শুনা গেলেও মঙ্গলবার তা বদলে গেছে। 


মঙ্গলবার ভোর ৪ টার থেকে এ পর্যন্ত (বেলা ১১ টা) সীমান্তের ওপারে বিকট শব্দের বিস্ফোরণ বলে দিচ্ছে ওখানে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বা যুদ্ধ চলছে। নানা মাধ্যমে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে বলা হচ্ছে মিয়ানমারের চাকমাকাটা, কোয়াংচিমন ও কুমিরখালী এলাকায় বিজিপির ঘাঁটি ঘীরে এই যুদ্ধ।


ওখানে যুদ্ধতে সীমান্তবাসির কোন ভয় নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, মুলত উদ্বেগ বা ভয়ের কারণ হচ্ছে এপারে কখন গুলি এসে পড়ে, কখন মর্টাল শেল এসে পড়ে তার তো কোন হিসেব নেই। এতে এখানেও হতাহতের আশংকা রয়ে যায়। ফলে সীমান্ত এলাকার মানুষকে সর্তক থাকার আহবান জানান তিনি।


হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারি জানান, নাফনদীর ওপারে বিস্ফোরণের শব্দ সোমবারের তুলননায় মঙ্গলবার ভোর থেকে বেড়ে গেছে। এতে এপারে গুলি-মর্টার শেল এসে পড়ার আশংকার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সহ অন্যান্যদের অনুপ্রবেশের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। তবে সীমান্তে কোস্টগার্ড-বিজিবি সর্তকাবস্থায় রয়েছে।


সাবরাং ইউনিয়নের ইউপি সদস্য রেজাউল করিম জানিয়েছেন, একই সময়ে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ সীমান্তের নাফনদীর ওপারে মিয়ানমারের মুন্ডু টাউনশিপের আশপাশের এলাকার তিন ও চার কিলোমিটার নামক এলাকায় ভোররাত চারটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত প্রচুর গোলাগুলি হয়েছে। এখনও থেমে থেমে গুলির শব্দ শুনা যাচ্ছে।


এদিকে, যদিও সোমবার দুপুরে ওপারে কালো ধোঁয়ার কুন্ডালি, কয়েকটি গুলি শব্দ শুনা গিয়েছিল। তবে সোমবার মধ্যরাতে ঘুমধুম ইউনিয়নের বাইশফাঁড়ি সীমান্তের ওপারে বিকট শব্দের বিস্ফোরণের শব্দ শুনা গেছে।


কি কারণে এ বিস্ফোরণের শব্দ তা নিশ্চিত করতে পারেননি ওই এলাকার ব্যবসায়ী তোফায়েল হোসেন।


তিনি জানান, বাংলাদেশ সীমান্তের ৩১ নম্বর পিলার থেকে ৫৬ নম্বর পিলারের প্রায় ৯২ কিলোমিটার সীমান্তের ওপারে এই নীরব এই গুলি বা মটাূর শেলের শব্দ। এখানে স্বস্তি নেই। রয়েছে উদ্বেগ। নতুন করে ওখানে আগুনের কালো ধোঁয়ার কুন্ডালি দেখা গেছে। যা ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সংকটের সময় ব্যাপকহারে দেখা গিয়েছিল সীমান্তের ওপারে। তখন রোহিঙ্গা এসেছে, এখন বিজিপি, অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আসছে। যা সীমান্তবাসির ভয়ের কারণ।


ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ঢেঁকিবনিয়া এলাকায় কখনও কালো ধোঁয়া আবার কখনও গুলি বা মর্টার শেলে শব্দ। কখন বন্ধ, কথন শুনা যাচ্ছে তা কেউ নিশ্চিত নন। এখানে উদ্বেগ থাকাটা স্বাভাবিক।


আরও পড়ুন: ঘুমধুম থেকে ১০০জন বিজিপি সদস্যকে টেকনাফে স্থানান্তর


আর সীমান্তের এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঠেকানো সহ সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির টেকনাফস্থ ২ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ।


তিনি বলেন, নাফনদী অতিক্রম করে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের পাশাপাশি কোনো দুষ্কৃতকারী যাতে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত অনুপ্রবেশের চেষ্টাকারি ১৩৭ জনকে প্রতিহত করেছে বিজিবি।


আরএক্স/