মিয়ানমারে সংঘাত: একদিন গোলাগুলির শব্দ আসেনি সীমান্তের এপারে
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২:৪৯ অপরাহ্ন, ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু এলাকায় জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে সীমান্ত চৌকির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলমান সংঘর্ষের আঁচ মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সীমান্তে লাগেনি।
গত ১৮ দিনের লড়াইয়ে দেশটির সরকারি বাহিনীকে হটিয়ে বিদ্রোহী আরকান আর্মি বাংলাদেশ সীমান্তের অধিকাংশ সীমান্ত চৌকি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তে লড়াইয়ের তীব্রতা কমে এসেছে।
আরও পড়ুন: নাফনদীর ওপারে সকাল থেকে থেমে থেমে বিস্ফোণের বিকট শব্দ
এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা এবং কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং সীমান্ত এলাকার শান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুই পক্ষের লড়াই তিন-চার দিন ধরে রাখাইনের মংন্ডু শহরের আশপাশেই হচ্ছে। ধীরে ধীরে বিদ্রোহীরা মংন্ডু শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মংন্ডুর এপারে টেকনাফ উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের সেন্ট মার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপ।
শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়ার বাসিন্দা নুর আহমেদ ও মোহাম্মদ শফিক জানান, সোমবার সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত গোলাগুলি কিংবা ভারী অস্ত্রের বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যায়নি। এতে মঙ্গলবার রাতে শান্তিতে ঘুমিয়েছে এলাকাবাসী। তারপরও ভয় হয় কখন আবার গোলাগুলি শুরু হয়। গত সোমবার দিনভর থেমে থেমে টেকনাফের হ্নীলা, সেন্ট মার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে গোলাগুলি ও ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দ শোনা গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: নাফনদী দিয়ে ২ রোহিঙ্গা নারীকে অনুপ্রবেশ করতে দেয়নি বিজিবি
স্থানীয় লোকজনের ধারণা , রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের পাশের বলিবাজার, মেগিচং, কাদিরবিল, নুরুল্লাহপাড়া, মাংগালা, নলবন্ন্যা, ফাদংচা ও হাসুরাতা এলাকায় লড়াই এখনও চলছে। বিদ্রোহীরা মংন্ডুর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। গত সোমবার সন্ধ্যায় মিয়ানমারের নলবন্ন্যা এলাকায় ব্যাপক লড়াইয়ের পর বিদ্রোহীরা আরও একটি ঘাঁটি দখল করেছে।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস সালাম বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের আশপাশের এলাকায় বেশ কয়েকদিন ধরে ব্যাপক গোলাগুলি ও ভারী অস্ত্রের বিস্ফোরণের আওয়াজ এপারে আসছে। মাঝে মধ্যে বিকট শব্দে কেঁপে উঠছিল টেকনাফ সীমান্ত।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতি প্রভাবে এপারের বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা নিয়েও সংকটে পড়েছে। নাফ নদীতে জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ থাকার পাশাপাশি স্থানীয়দের বহনকারি নৌযান চলাচলও সীমিত হয়ে পড়েছে।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, সোমবার সকালে হ্নীলা ইউনিয়নের ফুলেরডেইল সীমান্তে টানা ১০ থেকে ১৫ মিনিট গোলাগুলির শব্দ শোনা গিয়েছিল। তবে সকালের পর থেকে রাতভর গোলাগুলির কোন শব্দ ভেসে আসেনি। মঙ্গলবার সকাল থেকে সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সূত্র জানিয়েছে, মিয়ানমারে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে নাফ নদী এলাকায় টহল জোরদার করেছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড। নিয়মিত টহলও বাড়ানো হয়েছে। স্থলভাগেও পুলিশের টহল ও চারটি বিশেষ দল কাজ করছে। উদ্ভূত সীমান্ত পরিস্থিতিতে কেন্দ্র করে যেন কেউ অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, গত সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। সীমান্তে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তে বসবাসরত মানুষদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে গত ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে তমব্রু রাইট ও লেফট ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে জান্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। দু-তিন দিন তীব্র লড়াইয়ের পর তমব্রু ও ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি দখলে নেয় আরাকান আর্মি। সেখানে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে ঠিকতে না পেরে ৩৩০ জন বিজিপি, সেনা ও বেসামরিক নাগরিক পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁদের গত বৃহস্পতিবার সাগরপথে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী এবং অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। এছাড়া গোলাগুলিতে আহত হন আরও ৯ জন।
আরএক্স/