জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে
ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি-সম্পাদকের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭:৩১ অপরাহ্ন, ২৩শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪
সজীবুর রহমান, জাবি প্রতিনিধি: ধর্ষণ বিরোধী গ্রাফিতি অংকন করায় ছাত্র ইউনিয়ন নেতা অমর্ত্য রায় ও ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা ও বহিষ্কারের প্রতিবাদে নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর এর ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট চত্ত্বর থেকে শুরু হয়ে চৌরঙ্গী, মেডিকেল সেন্টার হয়ে শহীদ মিনার চত্ত্বরে এসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে মিছিলটি শেষ হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘বহিষ্কার মামলার হুলিয়া, নিতে হবে তুলিয়া’, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে আমরাই থাকবো, নুরুল আলম থাকবে না’, ‘ছিঃ ছিঃ ছিঃ ছিঃ, মামলাবাজ ভিসি’, ‘এই লড়াই বাঁচার লড়াই, এই লড়াইয়ে জিততে হবে’, ‘অ্যাকশন অ্যকশন, মামলাবাজ ভিসির বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘চিকা মারার স্বাধীনতা দে, নইলে গদি ছাইড়া দে’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়।
আরও পড়ুন: অবশেষে জাবির সিন্ডিকেট সভায় নিপীড়ক শিক্ষক জনি স্থায়ীভাবে বহিষ্কার
চলচ্চিত্র আন্দোলনের সংগঠক তাহসিন ইমতিয়াজ তৌসিফ বলেন, ‘ক্যাম্পাসে নানারকম ইস্যু নিয়ে আন্দোলন হয়, অনশন হয়। আমরা দেখেছি প্রত্যয় এম এইচ হলের সামনে সাত দিন অনশন করেছে কিন্তু প্রশাসন তার দাবি রাখতে পারে নাই, তারা সাবেক ছাত্রদের বের করতে পারে নাই। কিন্তু ছাত্রলীগের একজন অছাত্র মাত্র দুইদিন অনশনে বসার সাথে সাথেই প্রশাসন আমাদের দুই কমরেড অমর্ত্য ও ঋদ্ধর নামে মামলা করে দিলো। প্রশাসন এই হঠকারী সিদ্ধান্ত বহলে রাখলে আমরা আমাদের আন্দোলন আরো তীব্র করে তুলবো।’
জহির রায়হান চলচ্চিত্র সংসদের কোষাধ্যক্ষ তাসনিম নওশীন বাশার মোহনা বলেন, ‘আমাদের কাছে এই তদন্ত কমিটি একটি ভিত্তিহীন কমিটি। ভিসির সাথে মিটিংয়ে আমরা জানতে চাই ছাত্র শৃঙ্খলা বিধির কোন অধ্যাদেশ অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাদের বারবার জিজ্ঞাসা করার পরও তারা বলতে পারছিলেন না কোন ধারায় এই বহিষ্কার আদেশ দেয়া হয়েছে। সুতরাং এটা দিনের আলোর মত পরিষ্কার ভিসি তার বিশেষ ক্ষমতাবলে এই বহিষ্কারাদেশ দিয়েছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘একটা গ্রাফিতি মুছে ফেললেই কি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মুছে দেয়া সম্ভব! সম্ভব না। বঙ্গবন্ধুর অবমাননা আমরা করিনি। কিন্তু অবমাননা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অবমাননা হয়েছে একের পর এক নিপীড়ন বিরোধী গ্রাফিতি বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে ঢেকে ফেলার মধ্য দিয়ে হয়েছে। শিক্ষকরা বারবার বলেন আমরা তাদের সন্তানের মত কিন্তু তাদের প্রকৃত সন্তান হচ্ছে ধর্ষক চাঁদাবাজি করা ছাত্ররা যাদের ওনারা ডাবের পানি খাইয়ে অনশন ভাঙান। তাদের বিরুদ্ধে কখনো মামলা না হলেও মামলা হয় আমার কমরেড অমর্ত্য রায় ও কমরেড ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলীর বিরুদ্ধে। প্রশাসন ভাবছে তারা এভাবে আমাদের চাপে ফেলে বিল্ডিং করবে আর পকেটে টাকা ঢুকাবে! আমরা তা হতে দিবো না। আমরা আমাদের দীর্ঘদিনের মাস্টারপ্ল্যানের আন্দোলন ছাড়বো না।’
জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি শরণ এহসান বলেন, ‘গ্রাফিতি অঙ্কনের প্রেক্ষিতে দুইজন ছাত্র নেতাকে যেভাবে মামলার স্বীকার হইতে হয়েছে। এ নিয়ে কেবল এটাই বলবো এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করার প্রয়াস। আমরা তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা ও বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সহ-সভাপতি আশফার রহমান নবীন বলেন,‘ক্যাম্পাসের রাজনীতির যে পরিস্থিতি সেটা এখন জলের মত পরিষ্কার। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অন্যায় অবিচার হচ্ছে তার প্রতিবাদের যে সংস্কৃতি তার গলা টিপে ধরার পাঁয়তারা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের মত একটা ঘটনার বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে কিন্তু এটা প্রশাসন চায় না। তাই তারা ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি অঙ্কনের দায়ে রাতারাতি আমাদের দুইজন কমরেডকে বহিষ্কার করে দিল, মামলা করে দিলো। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪১,৪২,৪৩ ব্যাচের অছাত্ররা, যারা মাদকের সিন্ডিকেট চালায় তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন মামলা করে না। মামলা করে যার নামে কোনো চাঁদাবাজির অভিযোগে নেই, নিপীড়নের অভিযোগ নেই তাদের বিরুদ্ধে। অশুভ শক্তির এই পাঁয়তারা আমরা রুখে দেবো।’
আরও পড়ুন: এক যুগ ধরে অযত্নে ইবির প্রথম শহীদ মিনার
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী তাপসী দে প্রাপ্তি বলেন, ‘কি পরিমান আস্পর্ধা একটা প্রশাসনের হলে তারা দুইজন শিক্ষার্থী যারা সবসময় দুর্নীতি অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে দেয়, বহিষ্কার করে দেয়। বন্ধুগন আপনারা শুনেছেন যে, বারবার জিজ্ঞাসা করার পরেও তারা বলতে পারছে না কোন ধারা মেনে বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রশাসন কোনোভাবেই মামলার কোনো নথি দিচ্ছে না। বঙ্গবন্ধুকে পুঁজি করে, বঙ্গবন্ধুকে অপব্যবহার করে তারা চায় আমরা যারা অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলি, মাস্টারপ্ল্যান চাই তাদের টুটি চেপে ধরতে। বঙ্গবন্ধুকে পুঁজি করে এহেন ন্যাক্কারজনক ঘটনার আমরা ধিক্কার জানাই। আপনারা কি মনে করেছেন যে আপনারা এই মামলা বহিষ্কার দিয়ে চলমান আন্দোলন থামাতে পারবেন? তাহলে আপনারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। যে গ্রাফিতি অঙ্কনের জন্য আমাদের বন্ধুদের মামলা খেতে হয়েছে আমরা আগামীকাল দিনব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই গ্রাফিতি অংকন করবো।’
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের দেয়ালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি মুছে ধর্ষণ ও স্বৈরাচার বিরোধী গ্রাফিতি আঁকার ঘটনায় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি অমর্ত্য রায় এবং সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলীর বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা দায়ের করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আরএক্স/