হলমার্কের অর্থ কেলেঙ্কারি

তানভীর-জেসমিনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২:৩২ অপরাহ্ন, ১৯শে মার্চ ২০২৪


তানভীর-জেসমিনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
ছবি: সংগৃহীত

দেশের বৃহত্তর অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. তানভীর মাহমুদ ও তার স্ত্রী জেসমিন ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া এই মামলায় মোট ১৭ জনের মধ্যে ১৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। 


ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারক মো. আবুল কাশেম এ রায় ঘোষণা করেন।


এ মামলার আসামিরা হলেন হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. তানভীর মাহমুদ, তার স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, তানভীরের ভায়রা ও গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ।

টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, প্যারাগন গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, নকশী নিটের এমডি মো. আবদুল মালেক ও সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন সরকার।


এছাড়া সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন বা রূপসী বাংলা শাখার সহকারী উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. সাইফুল হাসান, নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মতিন ও সোনালী ব্যাংক ধানমন্ডি শাখার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা মেরি। সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের জিএম অফিসের জিএম ননী গোপাল নাথ ও মীর মহিদুর রহমান, প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির, ডিএমডি মাইনুল হক ও সফিজউদ্দিন এবং এজিএম মো. কামরুল হোসেন খান। এর মধ্যে আসামি জামাল উদ্দিন সরকার জামিনে রয়েছেন। এছাড়া সাইফুল, মতিন, হুমায়ুন, গোপাল নাথ, তসলিম, সাইফুল, মেরী ও জাকারিয়া পলাতক রয়েছেন।


আরও পড়ুন: ড. ইউনূসের দণ্ড স্থগিতের আদেশ হাইকোর্টে বাতিল


গত ১২ মার্চ ঢাকার আদালত রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করেন।


এর আগে ২৮ জানুয়ারি আদালত রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ২৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন। এদিন দুদকের আইনজীবী মীর আহম্মেদ সালাম মামলাটি রায় থেকে উত্তোলন পূর্বক দুইজন ম্যাজিস্ট্রেটের সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। আদালত দুদকের আবেদনটি মঞ্জুর করেন। এরপর আদালত মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৪ মার্চ দিন ধার্য করেন। এদিন (৪ মার্চ) তৎকালীন ঢাকার দুই মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান ও কেশব রায় চৌধুরী আদালতে সাক্ষ্য দেন। এদিন তাদের সাক্ষ্য শেষে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ১২ মার্চ দিন ধার্য করেন। গত ১২ মার্চ রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করেন।


এরআগে, ২০১৬ সালের ২৭ মার্চ ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা মামলার অভিযোগ গঠন করে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এ বদলির আদেশ দেন।


২০১২ সালের ৪ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় তিন হাজার ৬৯৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১১টি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।


আরও পড়ুন: অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় সহকারী প্রক্টর ও সহপাঠী রিমান্ডে


মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৪ আগস্ট রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রতি মাসে ১০০ কোটি টাকা দেয়ার শর্তে ১১টি মামলায় জেসমিন ইসলামকে জামিন মঞ্জুর করেন তৎকালীন সিনিয়র বিশেষ জজ জহুরুল হক। ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর একই আদালত ১১টি মামলায় পলাতক ১৭ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে পত্রিকায় আসামিদের পলাতক দেখিয়ে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।হলমার্ক গ্রুপের ঋণ কেলেংকারির এ ঘটনায় দায়ের হওয়া ১১টি মামলায় ২৫ জনের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। একই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর এ মামলার অভিযোগপত্রের অনুমোদন দেয় দুদক।দুদকের জ্যেষ্ঠ উপ-পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীসহ দুদকের ৬ কর্মকর্তা মামলাগুলো তদন্ত করেন। ১১টি মামলার মধ্যে শিবলী একটি মামলায় ও দুদকের উপ-পরিচালক এম আক্তার হামিদ, সহকারী পরিচালক মুজিবুর রহমান, সহকারী পরিচালক মশিউর রহমান, সহকারী পরিচালক নাজমুস সাদাত ও উপ-সহকারী পরিচালক জয়নাল আবেদীন দুটি করে মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন।অভিযোগপত্রে বলা হয়, সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে প্রতারণা, জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে রূপসী বাংলা (সাবেক শেরাটন) হোটেল শাখা থেকে হলমার্ক ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। সাক্ষী করা হয়েছে ৮০ জনকে। রমনা থানার মামলাগুলোর নম্বর ৮ থেকে ১৮।


হলমার্ক ডিজাইন ওয়্যার, হলমার্ক ফ্যাশন, ওয়ালমার্ট ফ্যাশন, ববি ফ্যাশন ওয়্যার, পারফেক্ট অ্যামব্রয়ডারি, জিসান নিট কম্পোজিটসহ ৬ প্রতিষ্ঠানের নামে ৪৫ কোটি ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা মূল্যের মালামাল আমদানি করা হয়। কিন্তু আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এর মূল্য পরিশোধ না করলেও ব্যাংকের ওই শাখা থেকে মূল্য পরিশোধ করা হয়। হলমার্ক ও ব্যাংকের অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ওই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। ভুয়া ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের হিসাবে সুতা রফতানির নামে ৫২৫ কোটি ৬২ লাখ ৯২ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের সুতা রফতানি করা হয় বলে নথিপত্রে দেখানো হয়। ওই হিসাবে পুরো অর্থ জমা করা হলে তা থেকে ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা হলমার্কের আরেক ভুয়া প্রতিষ্ঠান অ্যাপারেল এন্টারপ্রাইজের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়, যা পরে তানভির ও তার স্ত্রী তুলে নেন।২০১২ সালের ৪ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, পরস্পরের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থের অপব্যবহার এবং পাচারের অভিযোগে রাজধানীর রমনা থানায় ১১টি মামলা করে দুদক। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।


জেবি/এসবি