৯ মেম্বার অনাস্থা দেওয়ায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৫৯ অপরাহ্ন, ২রা এপ্রিল ২০২৪
জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার ৩ নং ডোয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক স্বপনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, অসদাচরণ, পরিষদের মেম্বারদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, শ্রমিকদের অর্থ আত্মসাৎ ও স্বেচ্ছাচারিতাসহ বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ কান্তি দত্ত ডোউয়াইল ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে তদন্তের কাজ শুরু করেন। পরিষদে অনিয়মিত উপস্থিতি, ইউপি সদস্যদের মূল্যায়ন না করা এবং অনিয়ম-দুর্নীতি সহ বিভিন্ন অভিযোগের কারণে গত ২২ ফেব্রুয়ারী পরিষদের ২ জন নারী মেম্বার সহ ৯ জন ইউপি সদস্য চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর অনাস্থা দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এদনি সকাল ১০ টা থেকে দুপুর সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত তদন্ত চলা কালীন সময়ে ৪০ দিন কর্মসূচি ও ইজিপিপির তালিকা ভুক্ত প্রায় ২ শতাধিক শ্রমিক সেখানে উপস্থিত হয়ে তারাও লিখিত অভিযোগ ও স্বাক্ষী দেন তদন্ত কর্মকর্তার নিকট।
আরও পড়ুন: ডোয়াইলের চেয়ারম্যান স্বপনের বিরুদ্ধে গ্রাম পুলিশের ধর্ষণ মামলা
জানা গেছে, আব্দুর রাজ্জাক স্বপন চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই মাসিক সভাসহ সকল ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের সভা না করেই সভার ভুয়া রেজুলেশন প্রদর্শন এবং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে কাজ না করেই কাগজে-কলমে উন্নয়ন কাজ দেখিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করে আসছেন। ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন টিআর, জিআর, কাবিখা ও কাবিটা, রাজস্ব খাতের ১%, পিআইসি, এডিপি প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ কোনো কাজ না করেই একই কায়দায় তিনি আত্মসাৎ করে আসছেন।
এছাড়াও তিনি বিধি-বহির্ভূতভাবে একই বছর একই স্থান দেখিয়ে এলজি এসপি ও হতদরিদ্রদের ৪০ দিনের কর্মসংস্থান কর্মসূচি (কর্মসৃজন) প্রকল্প দিয়ে কাজ না করেই সীম নিজের কাছে রেখে বরাদ্দের সম্পুর্ন অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক স্বপন ইউনিয়নের নাগরিক, ওয়ারিশ ও জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সনদ দিতেও অবৈধভাবে নগদ অর্থ গ্রহণ করেন।
ইউনিয়নের অসচ্ছল মানুষের জন্য সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা যেমন ভিভিএফ, ভিজিডি, টিসিবি কার্ড, মাতৃত্বকালীন ভাতা নিয়েও তিনি দুর্নীতি করেন এবং ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে তিনি পরিষদ পরিচালনা করেন।এ ছাড়াও প্রতি বছর ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্স বাবদ আদায় থেকে বিভিন্ন ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে লাখ লাথ আত্মসাৎ করেছেন ।এদিকে আব্দুর রাজ্জাক স্বপন ইতিপূর্বে ডোয়াইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় হত দরিদ্র ডিলারশীপে স্বত্তাধিকারী ছিলেন৷ চাল চুরি আত্মসাৎ এর সময় ধরা পড়া অবস্থায় তার লাইসেন্স বাতিল করে উপজেলা প্রশাসন।
এ দিকে প্রতিবন্ধী নিরঞ্জন সহ ৪০ দিন কর্মসূচি ও ইজিপিপির প্রকল্পের তালিকা ভুক্ত শ্রমিকরা জানান, আমরা কর্মসুচির তালিকাভুক্ত শ্রমিক। সীম ও মোবাইল আমাদের কাছে নাই। সীম ও মোবাইল চেয়ারম্যান এর কাছে থাকে। তিনি সমস্ত বিল তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করেছে।
ডোয়াইল ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য ডলি আক্তার , চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক স্বপন বিভিন্ন কায়দায় অনিয়ম-দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করেছেন। ডোয়াইল ইউনিয়নে সরকারের উন্নয়নের বরাদ্ধের যে প্রকল্প গুলা আসে আমরা মেম্বাররা কিছুই জানি না। তিনি সকল কিছুই আত্মসাৎ করেছে৷ চেয়ারম্যান হওয়ার পর ৩ তলা বাড়ী তৈরি করেছে। চেয়ারম্যান হওয়ার পর কিভাবে করল। আমরা তার বিচার চাই এবং বহিষ্কার চাই।
ডোয়াইল ইউপি সদস্য শিমুল, মিলটন, আজাহার,আফজাল হোসেন জানান, চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক স্বপনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে আমরা অনাস্থা ও অভিযোগ দিয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে। আজ ৪০ দিন কর্মসুচির লেভাররাও এসে লিখিত অভিযোগ দিচ্ছে তদন্ত কমিটির কাছে। সরকারের কাছে দাবী এই দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান এর বহিষ্কার চাই।
আরও পড়ুন: সরিষাবাড়ীতে অটো বাইকের কমিটি অনুমোদন
এদিকে ডোয়াইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক স্বপন মুঠোফোনে বার বার কল দেওয়া হলে নাম্বারটি বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ও অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা ডা. পলাশ কান্তি দত্ত জানান, মেম্বারদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তের কাজ চলছে। তদন্ত শুরু করেছি। ৪০ দিন কর্মসুচির শ্রমিকরাও এসে অভিযোগ দিয়ে গেছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আগেই কিছু বলা যাবে না।
জেবি/এজে