কালো টাকার মালিক ডিপিডিসি’র পশাল কৃষ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:১২ পূর্বাহ্ন, ৬ই জুন ২০২৪

বশির হোসেন খান: দুর্নীতি, অনিয়ম আর ক্ষমতার অপব্যবহার করে কালো টাকার মালিক ঢাকা পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানী (ডিপিডিসি) লিমিটেডের মিটারিং বিভাগের দক্ষিণের দায়িত্বে থাকা সাব-ডিভিশনাল প্রকৌশলী পলাশ কৃষ্ণ চৌধুরী’র (আইডি ২১৫৮৩)। চাকরি জীবনের ৯ বছরের মধ্যে ৮ বছরই তিনি দায়িত্বে আছেন এখানে। অনিয়মের মাধ্যমে সম্পদ গড়ার পাশাপাশি অসাধু উপায়ে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন তিনি। ক্ষমতার দাপটে কাউকেই যেন গ্রাহ্য করেন না। টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না এই দাপুটে কর্মকর্তা। মিটারের আধিপত্য বিস্তার এই সিন্ডিকেটের।
সূত্র বলছে, মূলত মিটারিং বিভাগ থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে থেকে বিপুল পরিমান সম্পদ ও কালো টাকার মালিক হওয়া পলাশ যে কোনো মুল্যে এখানে থাকেন। এই মধুর লোভেই বদলির শঙ্কা দেখা দিলেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে তা বাতিল করে দেন তিনি। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ডিপিডিসির’ মিটারিং বিভাগে অনিয়মকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিয়ে গড়ে তুলেছেন একচ্ছত্র আধিপত্য।
সংস্থাটির বেশ কয়েকটি সূত্র বলছে, তার অনিয়ম ও দুর্নীতি খতিয়ান এবং বেশ কয়েকবার গ্রাহকদের লিখিত অভিযোগের পরও রহস্যজনক কারণে ডিপিডিসির মানবসম্পদ বিভাগ (এইচআর) তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
গ্রাহকদের অভিযোগ এবং খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রাহকদের সঙ্গে স্বেচ্ছাচারিতাই শুধু নয়, গ্রাহকরা ঘুষ না দিলে গ্রাহকদের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার দেখিয়ে টাকা আদায় করে পলাশ কৃষ্ণ চৌধুরী। গ্রাহকদের নয়-ছয় বুঝিয়ে বাড়তি টাকা নেয়া এবং গ্রাহকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার নৃত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। প্রকৌশলী আবদুল্লাহ নোমান ডিপিডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নেয়ার পর দুর্নীতিমুক্ত একটি স্মার্ট ডিপিডিসি গঠনের প্রতিশ্রুতিকে এক প্রকার বুড়ো আঙ্গুলই দেখাচ্ছেন এই পলাশ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে ২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর চাকরি জীবনে প্রবেশ করেন পলাশ কৃঞ্চ চৌধুরী। এর এক বছর পরেই তিনি মিটারিং বিভাগের (দক্ষিন) যোগ দেন ২০১৬ সালের ৭ জুন। ৬বছর একই জায়গায় থাকার পর ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এইচআর বিভাগে তাকে বদলি করা হয়। কিন্তু খুব বেশি দিন তার এইচআর বিভাগ ভালো লাগেনি। কারন এখানে কোনো মধু নেই। তাই মধু আহরনের জন্য তিনি আবারো তার পুরোনো জায়গায় ফিরে আসেন। মাত্র ১৬ দিনের মাথায় মার্চের ১৫ তারিখে তিনি আবারো ফিরে আসেন তার রাজত্বে, যেখানে অনিয়মের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন তিনি।
এ সম্পর্কে পলাশ কৃষ্ণ চৌধুরী বলেন, আমি কতোদিন কোথায় থাকবো এটা এইচআর বিভাগের এখতিয়ার। এখানে বিশেষায়িত লোক দরকার।
আরও পড়ুন: মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর সমস্যায় কেউ দায়ী থাকলে ব্যবস্থা: প্রধানমন্ত্রী
সূত্রে জানা গেছে, ডিপিডিসির মত স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের স্পর্শকাতর এই বিভাগে থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এই সাব-ডিভিশনাল প্রকৌশলী পলাশ। ঢাকায় একাধিক ফ্লাট, প্লট, গাড়িসহ বিপুল পরিমান কালো টাকার মালিক তিনি। নিত্য নতুন অনিয়ম আর দুর্নীতির নতুন পথ তৈরি করেন পলাশ। ডিপিডিসির ৩৬টি ডিভিশন থেকে বিদ্যুৎ চুরির ঘটনায় জব্দকৃত গ্রাহকদের মিটার ট্যাম্পারিং, বাইপাস করে বিদ্যুৎ চুরির মিটার জব্দ করে মিটারিং ডিভিশনে পাঠানো হয় পরীক্ষা করার জন্য। অর্থাৎ জব্দকৃত ঐ মিটারে গ্রাহক কি পরিমাণ বিদ্যুৎ চুরি করেছে তা রিপোর্ট নেয়ার জন্য। এই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে গ্রাহকের কাছ থেকে জরিমানার বিল আদায় করা হয়। এ জাতীয় বেশিরভাগ কাজগুলোর জন্য পলাশ ওই শ্রেণীর গ্রাহকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে নয়-ছয় রিপোর্ট দেন। আর তাতে করে ডিপিডিসি প্রতিনিয়ত রাজস্ব হারাচ্ছে।
মিটারিং বিভাগ সূত্রে আরও জানা গেছে, ৩৬টি ডিভিশনে উচ্চচাপ বিদ্যুৎ সংযোগে গ্রাহকদের বাধ্য করা হয় তার কাছ থেকে এইচটি ও এলিটিসিটি মিটার কেনার জন্য। গড়ে তুলেছেন মিটার সিন্ডিকেট। না হলে ঐ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগের সময় নানা রকম ত্রুটি ধরে সংযোগ চালু করতে অপারগতা প্রকাশ করে। আর গ্রাহক যদি তার কাছ থেকে মিটার কিনতে সম্মতিও দেয় তাহলে ঐ গ্রাহককে এলটিসিটি মিটারের জন্য ৬০ হাজার টাকা এবং এইচটি মিটারের জন্য ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা গুনতে হয়। শুধু এখানেই থেমে নেই পলাশ, উচ্চচাপ বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করার সময় প্রতিটি গ্রাহকের কাছ থেকে সে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ নেয়। কোন গ্রাহক যদি ঘুষের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে সে গ্রাহককে লাইনের ত্রুটি রয়েছে দেখিয়ে আর ঐ সংযোগ চালু করে না। গ্রাহক উপায়ন্ত না দেখে একটা সময় বাধ্য হয় তাকে ঘুষের টাকা দেওয়ার জন্য।
আরও পড়ুন: মোদিকে প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন
জানতে চাইলে অভিযুক্ত মিটারিং বিভাগের (দক্ষিন) সাব-ডিভিশনাল প্রকৌশলী পলাশ কৃষ্ণ চৌধুরী, আমার বিরুদ্ধে এসব তথ্য সঠিক নয়, ঢাহা মিথ্য কথা। আপনাকে কেউ ভুল তথ্য দিয়েছে।
মিটারিং বিভাগের পলাশ কৃষ্ণ চৌধুরী’র অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে ডিপিডিসি’র জেনারেল ম্যানেজার (আইসিটি এন্ড মিটারিং) মো. রবিউল হাসান বলেন, এসব অনিয়ম-দুর্নীতির কথা শুনেছি। এই বিষয়ে আমরা খোঁজ খবর অবশ্যই নেবো। প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নিবো।
এ ব্যাপারে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমাদের ভেতরে যখন ক্ষমতার অপব্যবহারের চিন্তা থাকে তখনই দুর্নীতি হয়। আর দুর্নীতিকে রোধ করতে নিজেদের মনোভাবকে পরিবর্তন করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। না হলে দুর্নীতি বন্ধ হবে না।
জেবি/এসবি
বিজ্ঞাপন
পাঠকপ্রিয়
আরও পড়ুন

সব দেনা শোধ, নভেম্বর পর্যন্ত সারের কোনো ঘাটতি নেই: স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা

জুলাই যোদ্ধাদের জন্য সরকারি চাকরিতে কোনো কোটা থাকছে না: মুক্তিযুদ্ধ উপদেষ্টা

বিশ্বে চতুর্থ দূষিত শহর এখন ঢাকা, বাতাস অস্বাস্থ্যকর

ঢাকায় আসছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী, অভিবাসন ইস্যু পাবে বিশেষ গুরুত্ব
