‌‘জাতির পিতার হাত ধরেই রচিত হয় একটি আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশের ভিত্তি’


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


‌‘জাতির পিতার হাত ধরেই রচিত হয় একটি আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশের ভিত্তি’

ঐতিহাসিক ২৬ মার্চ ২০২২ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) আইসিটি টাওয়ারের অডিটোরিয়ামে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। রাজধানীর আগারগাঁও-এ আইসিটি বিভাগের পক্ষে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ।

আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম-এর সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য কথাসাহিত্যিক ও বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন। স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (গ্রেড-১) ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ ২৫ মার্চের কালো রাতের গণহত্যা ও তার অব্যবহিত পরেই ২৬ মার্চের মহান স্বাধীনতার ঘোষণার তাৎপর্য সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করেন। দেশের প্রতি বর্তমান প্রজন্মের দায়বদ্ধতার কথা তিনি স্মরণ করিয়ে দেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা এবং  রূপকার। তিনি শুধু বাঙালির নয়, ভারতীয় উপমহাদেশের একজন অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি বাঙালির অধিকার রক্ষায় ব্রিটিশ ভারত থেকে ভারত বিভাজন আন্দোলনে অংশগ্রহণ এবং পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান করেন। সারাবিশ্বে যে ক'জন ক্যারিশমেটিক লিডার ছিলেন যেমন আব্রাহাম লিংকন, মার্কিন লুথার, ফিদেল কাস্ত্রো ও নেলসন ম্যান্ডেলা- বঙ্গবন্ধু তাঁদের মতো বিশ্বনেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি সারাজীবন নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সংগ্রাম করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই রচিত হয় একটি আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশের ভিত্তি।’

তিনি আরো বলেন, ‘১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণেই বঙ্গবন্ধু কার্যত স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে গ্রেফতারের পূর্বে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে নিরস্ত্র বাঙ্গালী পাকিস্তানী সামরিক জান্তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এ মাসে ২৫ মার্চের কালো রাতে পাকিস্তানী সামরিক কর্তৃপক্ষ অপারেশন সার্চ লাইট শুরু করে এবং ঘুমন্ত বাঙ্গালীদের ওপর আক্রমন ও গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু একটি স্বাধীন-সার্বভৈৗম ভূখন্ডেরই স্বপ্ন দেখেননি, তিনি স্বপ্ন দেখতেন এ জনপদের সাধারণ মানুষ, যাঁরা শত শত বছর ধরে শোষণ-বঞ্চণা, নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, না-খেয়ে না-দেয়ে, রোগে-শোকে মারা গেছে, তাঁদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করার; তাঁদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসার ব্যবস্থা করে উন্নত জীবন নিশ্চিত করার। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদেরকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী জনগণের সাথে মিশে গিয়ে জনগণের খাদেম হয়ে সেবা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধু  রাজনৈতিক মুক্তি দিয়েছেন এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম সফল করেছেন। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল ও প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে।’

প্রধান আলোচকের বক্তব্যে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘একাত্তরে গণহত্যার মধ্যে দিয়েই আমাদের স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে। স্বাধীনতা এবং বাংলা ভাষা যুদ্ধ করে আমরা অর্জন করেছি। তাই বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষাকে স্বমহিমায় তুলে ধরতে হবে। তাহলে স্বাধীনতা যে লক্ষ্য নিয়ে অর্জন করা হয়েছে সেটি স্বার্থক হবে।  তিনি বলেন,  ২৬ মার্চের মহান স্বাধীনতা ও ২৫ মার্চের গণহত্যার তাৎপর্য নতুন প্রজন্মকে বুঝতে হবে। কত রক্ত, কত ত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই স্বাধীন দেশ পেয়েছি সেটি সবাইকে অনুধাবন করতে হবে। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট যেভাবে তৈরি হয়েছে, অন্য দেশের সেভাবে হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাসের দুর্দশার চিত্র নিয়ে অনেক গল্প, উপন্যাস, নাটক, সিনেমা তৈরি হয়েছে। সেগুলো থেকেই বর্হিবিশ্ব বাংলাদেশের অবস্থা সর্ম্পকে জানতে পেরেছে। অনেক ষড়যন্ত্র করেই এই দিনে দেশের খ্যাতিমান লোকদের হত্যা করা হয়েছে, যাতে বাংলাদেশ মেধাশূন্য হয়ে পড়ে। তাই এই সকল শহীদদের ত্যাগের মহিমা আমাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে হবে। স্মরণ করার সাথে সাথে দেশকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে হবে। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলার মর্যাদা অনেক। এই মর্যদাকে ধরে রাখতে হবে আমাদের তরুণ প্রজন্মকেই।’

আলোচনা সভায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং এর আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তাগণ অংশগ্রহন করেন। আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

এসএ/