আকবরিয়ার দই-মিষ্টি ও লাচ্ছার খ্যাতি দেশজুড়ে
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৩৭ অপরাহ্ন, ১৪ই জুন ২০২৪
দই-মিষ্টি লাচ্ছার কথা ভাবতেই গোটা দেশ স্মরণ করে বগুড়াকে। বর্তমানে অনেকের ভিড়ে শতাব্দীকাল ব্যাপি ঐতিহ্যের স্বাক্ষর ভোক্তাবান্ধব আকবরিয়া গুনগত মান ও সুনামের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখেছে। বগুড়ার মানুষ যেখানেই যাক না কেন কদর বাড়ে এ জনপদের সুস্বাাদু দই মিষ্টি লাচ্ছার কারণে। দই-মিষ্টি লাচ্ছা মানেই ইতিহাস খ্যাত হযরত শাহ সুলতান বলখি (রাঃ) এর পূন্ড্র নগরী বগুড়া।
দেশে ও দেশের বাহিরেও বগুড়ার দই-মিষ্টি ও লাচ্ছার কদর রয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে শতাব্দীর স্বাক্ষর আকবরিয়া। গোটা দেশের মানুষ এ প্রতিষ্ঠানের সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে হৃদয়ের মনিকোঠায় স্থান দিয়েছে।
নবাবী আমলে বিশেষ খাবার ছিল এই দই। কালে কালে দিন গড়িয়ে গেলেও এখনো বিশেষ খাবার হিসেবে ধরে রেখেছে দই। বিয়ে, জন্মদিন, ঈদ, পূজা, আকিকা, হালখাতা বা পারিবারিক যে কোন অনুষ্ঠানে দই হলো বিশেষ খাবার হিসেবে পরিবেশিত হয়ে থাকে। এরপর বগুড়ার শতাব্দীর স্বাক্ষর আকবরিয়া গ্রান্ড হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট ষাটের দশকেই দই তৈরীতে নতুন করে সূচনা করে।
সরার পাশাপাশি ডুঙ্গি (মাটির তৈরী বিশেষ ধরনের পাত্র) ও পাতিলেও দই তৈরী করে বিক্রি শুরু করলেন। ষাটের দশকের পর আকবরিয়া হোটেলের দই স্বাদের পরিবর্তন করে বিপ্লব ঘটায়। মানসম্মত দই তৈরী করে আকবরিয়া হোটেলও এগিয়ে গেল। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত লতিফপুর এলাকার রোকসানা আকতার রুকু জানান, আকবরিয়ার দুই মিষ্টি লাচ্ছা রয়েছে ভোক্তাদের প্রাণে প্রাণে। ছোটবেলা হতেই এ পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের পণ্য খেয়ে অভ্যস্ত। ছোটবেলায় নানার মুখে আকবরিয়ার অনেক গল্প শুনেছি। সে গল্পগুলো আমাকে এখনো স্মরণ করে দেয়।
আরও পড়ুন: প্রেমের টানে ৩ কন্যাসহ নিখোঁজ গৃহবধূ বগুড়া থেকে উদ্ধার
আকবরিয়া লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসেন আলী দুলাল জানান, বিদেশে বগুড়ার দইয়ের খ্যাতি সর্বপ্রথম ১৯৩৮ সালে ইংল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে। আকবরিয়া প্রতিষ্ঠানটি গোড়া পত্তন করে ১৯১১ সালে। প্রতিষ্ঠার পরবর্তীতে আকবরিয়ার দই-মিষ্টি স্বাদে ও গুনে অতুলনীয় হওয়ায় দেশ ও বিদেশে সকলের কাছে অতি প্রিয়। বগুড়ার দই-মিষ্টির স্বাদ এখন সকলের মুখে মুখে। এখন যেকোন অনুষ্ঠানাদিতে খাওয়ার শেষে বগুড়ার দই না হলে তৃপ্তি হয় না। সেই সময় আকবরিয়া হোটেলের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আলহাজ্ব আকবর আলী মিঞা তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের আমলে বগুড়া শহরে প্রথম লাচ্ছা সেমাই তৈরি করেন। বগুড়া শহর, শহরতলী ও আশপাশ জেলার লোকজন খবর পেয়ে এক নজর দেখার জন্য ও কেনার জন্য ছুটে আসত। সে সময় হতে আকবরিয়া অদ্যাবধি লাচ্ছা সেমাইয়ের গুণগতমানের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখেছে।
আরও পড়ুন: বগুড়ায় আবাসিক হোটেলে মা-ছেলের মরদেহ উদ্ধার
আকবরিয়া লিমিটেড চেয়ারম্যান হাসান আলী আলাল বলেন, প্রবাদ আছে, ‘পুরনো চাল ভাতে বাড়ে’ অর্থ্যাৎ যে প্রতিষ্ঠান যতই পুরাতন হয় তার সুনাম তত বাড়তে থাকে। পুরাতন প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা বেশি হয়ে থাকে তাতে কোন সন্দেহ নাই। আকবরিয়া প্রতিষ্ঠানটি শতাব্দীর স্বাক্ষর বহন করার সাথে সাথে এর ঈর্ষণীয় সাফল্য আজ দেশ ও দেশের বাইরের মাটিতে। এ প্রতিষ্ঠানের সুনাম অক্ষুন্ন রাখাই আমাদের ঐতিহ্য। রসনার ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের কথা চিন্তা করে ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের ক্রয় ক্ষমতার সামর্থ্য অনুযায়ী বেশ কয়েক ধরনের লাচ্ছা সেমাই তৈরি করছে এ প্রতিষ্ঠানটি। পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের কথা মাথায় রেখেই তৈরি হচ্ছে হরেক রকমের লাচ্ছা সেমাই। ক্রেতার সন্তুষ্টিই আমাদের অহংকার।
জেবি/এসবি