পর্নোগ্রাফি মামলায় অভিযুক্ত কিশোরগঞ্জ ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি গ্রেফতার


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:৫৫ অপরাহ্ন, ২৪শে জুন ২০২৪


পর্নোগ্রাফি মামলায় অভিযুক্ত কিশোরগঞ্জ ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি গ্রেফতার
নাজমুল হীরা - ছবি: প্রতিনিধি

চিনি চোরাচালানে অভিযুক্ত ও পর্নোগ্রাফি আইনে করা মামলার আসামি কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি নাজমুল হীরাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ।


ময়মনসিংহের গাঙিনারপাড় এলাকা থেকে শনিবার (২২ জুন) রাত দেড়টার দিকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।


এর আগে কিশোরগঞ্জের ১ নম্বর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আশিকুর আদালতে রবিবার (২৩ জুন) দুপুরে পর্নোগ্রাফি আইনে হীরাসহ তিনজনের নামে মামলা করেন এক ছাত্রী। মামলার বাদী শহরের একটি সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।


আরও পড়ুন: ছাত্রলীগ সভাপতিসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি মামলা


মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি নাজমুল হোসেন হীরাকে। এ ছাড়া হীরার দুই মামা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও তার বড় ভাই মোশাররফ হোসেন মোল্লা বাবুলকে মামলার আসামি করা হয়েছে।


আসামিদের সবাই শহরের বয়লা তারাপাশা এলাকার বাসিন্দা।


মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয় কলেজপড়ুয়া তরুণীর। দাম্পত্য জীবনে বনিবনা না হওয়ায় বিয়ের এক মাস পরই তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় এবং তিনি বাবার বাড়িতে চলে আসেন। সেখান থেকে ফের কলেজে যাওয়া শুরু করেন।


কলেজে যাওয়ার পথে প্রায়ই তাকে প্রেম নিবেদন করতেন নাজমুল হোসেন হীরা। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে বিয়ের কথা বলে শারীরিক সম্পর্ক করেন হীরা। ওই সময় হীরা কৌশলে তাদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের কিছু স্থিরচিত্র ও ভিডিও ধারণ করে রাখেন।


এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সম্পর্কের বিষয়টি হীরার মামা আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও মোশাররফ হোসেন মোল্লা বাবুলকে জানান মেয়েটি। তখন সুমন ও বাবুল মেয়েটিকে হুমকি দিয়ে বলেন, তাদের ভাগ্নের সঙ্গে বেশি বাড়াবাড়ি করলে শহরে থাকতে দেবেন না।


এভাবে ভয়-ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে মেয়েটিকে বেশ কিছুদিন থামিয়ে রাখেন তারা। পরে বাধ্য হয়েই নাজমুল হীরার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখতে হয় মেয়েটিকে। এভাবে টানা এক মাস অতিক্রান্ত হলে আবারও হীরাকে বিয়ের জন্য চাপ দেন তিনি।


একপর্যায়ে ২০২৩ সালের ৮ জুন গোপনে কাজী ডেকে বিয়েও করেন তারা। বিয়ের পরে তিনি জানতে পারেন, নাজমুল হীরা বিবাহিত; বাড়িতে তার স্ত্রী রয়েছে। বিষয়টি জানার পর মৌখিকভাবে হীরাকে তালাক দিয়ে চলে আসেন তিনি।


পরবর্তী সময়ে হীরা আবারও যোগাযোগ স্থাপন করে শারীরিক সম্পর্ক না রাখলে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ভাইরাল করে দেয়ার হুমকি দেন। এভাবে মেয়েটিকে ব্ল্যাকমেইল করে দুইবারে পাঁচ লাখ টাকা আদায় করেন তিনি। এই টাকা দিয়ে একটি মোটরসাইকেল কেনেন তিনি।


এজাহারে বলা হয়, হীরার পর একই পন্থা অবলম্বন করেন তার মামা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন। তিনিও ভয় দেখিয়ে মেয়েটির কাছ থেকে টাকা আদায় করে একটি আইফোন ও একটি স্যামসাংয়ের স্মার্টফোন কেনেন। সুমনের বড় ভাই মোশারফ হোসেন মোল্লা বাবুল আদায় করেন নগদ তিন লাখ টাকা। তিনিও কেনেন একটি পালসার মোটরসাইকেল।


এভাবে টাকা দিতে দিতে বর্তমানে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেন তরুণী।


আরও পড়ুন: হজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে ৪ হাজি আহত


এজাহারে অভিযোগ করা হয়, এতকিছুর পরও তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়।


মেয়েটির অভিযোগ, ‘নাজমুল হীরার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন এবং যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়ার কারণেই সে এমনটা করেছে। আর এ ক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা করেছেন তার মামা সুমন ও বাবুল।’


গতকাল এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাজমুল হোসেন হীরা বলেন, ‘যিনি মামলা করেছেন, তিনি তার বিবাহিত স্ত্রী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির বিষয়ে আমি নিজেও মামলা করেছি।


‘সে মামলায় আমার স্ত্রী সাক্ষী। কিছু লোকের কুপরামর্শে সে হয়তো এমনটা করেছে।’


জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ঘটনাটিকে ‘ষড়যন্ত্র’ উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার ভাগ্নে হীরার সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে হীরা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছিল, কিন্তু এখন কী কারণে মেয়েটি ভাগ্নের বিষয় টেনে এনে বড় ভাইসহ আমাকে মামলার আসামি করেছে, সেটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।’


চিনি চোরাচালানে অভিযুক্ত

ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে চিনি এনে দেশে বিক্রি চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও তার স্বজন নাজমুল হীরার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে নিউজবাংলায় সম্প্রতি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।


ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, হীরা নিজেও ছাত্রলীগের কমিটিতে ছিলেন। সুমন-হীরা একা নন, তাদের অনুসারীরাও এ কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন। এ বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপে কথোপকথনের স্ক্রিনশট ফাঁস হয়েছে।


সম্প্রতি চোরাচালানের চিনিসহ একটি ট্রাক আটক করে পুলিশ। ট্রাকটি সুমন ও হীরার ঘনিষ্ঠ একজন আনেন বলে খবর চাউর হয়। অথচ মামলার আসামি করা হয় ছাত্রলীগের অন্য এক নেতাকে। ওই নেতার দাবি, চোরাই চিনিবোঝাই ট্রাক ধরিয়ে দিতে তিনি সহযোগিতা করেছেন।


দেশে প্রতি কেজি চিনির দাম ১৪০ টাকা হলেও ভারতে দাম ৫০ রুপির মতো। ফলে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অনেকে চিনি নিয়ে এসে অবৈধভাবে দেশে বিক্রি করেন। সম্প্রতি সিলেট ছাত্রলীগের একাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে চিনি চোরাকারবারে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে।


জেবি/এসবি