কিশোরগঞ্জে রিকশাচালককে হত্যার দায়ে চারজনের মৃত্যুদণ্ড


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০:১২ অপরাহ্ন, ৩রা জুলাই ২০২৪


কিশোরগঞ্জে  রিকশাচালককে হত্যার দায়ে চারজনের মৃত্যুদণ্ড
ছবি: প্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে রিক্সাচালককে হত্যা মামলায় চারজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়াও তাদের প্রত্যেককে দুই লাখ করে জরিমানা করা হয়েছে। 


বুধবার বিকেলে কিশোরগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক এ রায় ঘোষণা করেন। 


মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামিরা হলেন, ভৈরব উপজেলার ছনছড়া গ্রামের মৃত লতিফ মিয়ার ছেলে মোঃ লিটন মিয়া (২৫), একই গ্রামের আবু মিয়ার ছেলে মোঃ রব্বানী (২৫), ভাটি কৃষ্ণনগর গ্রামের খোকা মিয়ার ছেলে জুয়েল মিয়া (২৪), বাঁশগাড়ী গ্রামের মৃত আবু তাহেরের ছেলে মোঃ কাজল (৩৩)।


অপরদিকে নিহত রিক্সাচালক সোহেল ওরফে বদন খন্দকার (৩৮) কুলিয়ারচর উপজেলার মাইজপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম খন্দকারের ছেলে। 


কিশোরগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আবু নাসের ফারুক মোঃ সনজু এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 


মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সকাল ৯ টায় বাড়ি থেকে বের হয় রিক্সাচালক সোহেল ওরফে বদন খন্দকার।


দুপুরে রিক্সাটি দাড়িয়াকান্দি বাসস্ট্যান্ডে রেখে বাড়িতে খেতে আসে। দুপুর আড়াইটায় আবার দাড়িয়াকান্দি থেকে ৪ জন যাত্রী নিয়ে ডোমরাকান্দা বাজারের উদ্দেশ্যে যায়। পরে সে আর বাড়িতে ফিরে আসেনি। রাত ৯ টার দিকে  মোবাইলে কল দেন স্ত্রী সরুফা বেগম। কিন্তু  সে রিসিভ করেনি।


পরে রাতভর পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পায়নি। পরদিন সকালে  সাড়ে ৭ টার দিকে লোকমুখে সংবাদ পান ভৈরব উপজেলার কালিকাপ্রসাদ এলাকার ফারুক চেয়ারম্যানের বাড়ির ২০০ গজ দক্ষিণে একটি অজ্ঞাত মরদেহ পড়ে আছে।


সেখানে গিয়ে বদন খন্দকারের মরদেহটি সনাক্ত করে পরিবারের সদস্যরা।এ ঘটনায় ২৫ সেপ্টেম্বর নিহত মোঃ সোহেল ওরফে বদন খন্দকারের পিতা আবদুল হান্নান খন্দকার বাদী হয়ে ভৈরব থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। 


মামলা দায়েরের পরেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২০২১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি নিহতের ব্যবহৃত ফোনটি উদ্ধার করে পুলিশ। পরে সেই মোবাইল ফোনের সূত্র ধরেই অজ্ঞাতনামা আসামিদের পরিচয় সনাক্ত করা হয়।


২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে সন্দেহভাজন আসামি লিটন মিয়াকে (২৫) ভৈরবের সম্ভুপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে উক্ত আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তার জবানবন্দির পরিপ্রেক্ষিতে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত আসামি রব্বানীকে (২৫) ২৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ভৈরবের শিমুলকান্দি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।


পরে তাকে দুইদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এরপর অপর দুই আসামি কাজল (৩৪) ও জুয়েল মিয়াকে (২৪) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে আসামি লিটন,কাজল, জুয়েল আদালতে স্বীকাররোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। 


২০২০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ভৈরবের শিবপুর বাজারে একটি পুরি-সিঙ্গারার দোকানের সামনে বসে আসামি লিটন, রব্বানী, জুয়েল ও কাজল অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে।


ঐদিন রাত সাড়ে ৮ টার দিকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আসামিরা ইজিবাজক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ভৈরবের দূর্জয়ের মোড় বাসস্ট্যান্ড থেকে কালিকাপ্রাসাদ যাওয়ার কথা বলে সোহেল ওরফে বদন খন্দকারের অটোরিকশাটি ১০০ টাকায় ভাড়া নেয়।


ইজিবাইকটি কালিকাপ্রাসাদের একটি ফাঁকা জায়গায় পৌঁছানমাত্রই আসামি রব্বানী প্রস্রাব করার কথা বলে ইজিবাইকটি রাস্তার পাশে থামায়।


পরে চালক বদন খন্দকারকে ইজিবাইক থেকে নামিয়ে তার হাত বেঁধে ফেলে এবং সাথে থাকা লোহার রড দিয়ে নিহতের নাঁকে, মুখে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। পরে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তার মোবাইল ফোন ও ইজিবাইকটি নিয়ে পালিয়ে যায়।


পরে ভৈরবের মুসলিম মোড় ব্রীজের কাছে অজ্ঞাত এক লোকের কাছে ৩০ হাজার টাকায় ইজিবাইকটি বিক্রি করে। এই ত্রিশ হাজার টাকার মধ্যে কাজল ৭ হাজার, রব্বানী ৭ হাজার, জুয়েল ৩ হাজার, বাকি টাকা নিয়ে যায় লিটন।


ঘটনার দুই/তিন মাস পর আসামি লিটন মিয়া অপর আসামি রব্বানীর শ্যালক জুয়েল মিয়ার মোবাইলের দোকানে মোবাইলটি ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করে।


জুয়েল মিয়া মোবাইলের লক খুলে সেটি ভৈরবের শিমুলকান্দি ইউনিয়নের বাইশমা মধ্যপাড়া জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা জয়নাল আবেদীনের কাছে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করে। 


এ ঘটনায় ২৫ সেপ্টেম্বর তার বাবা আব্দুল হান্নান খন্দকার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে ভৈরব থানায় হত্যা মামলা করেন।


পরে পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. জামিল হোসেন জিয়া মামলাটি তদন্ত করে  ২০২১ সালের ২২ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। দীর্ঘ সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত এ রায় প্রদান করেন।

 

এসডি/