কোটা আন্দোলন:

কক্সবাজারে আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ভাংচুর, ৪ নেতাকে মারধর


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭:৩০ অপরাহ্ন, ১৬ই জুলাই ২০২৪


কক্সবাজারে আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ভাংচুর, ৪ নেতাকে মারধর
ছবি: প্রতিনিধি

কক্সবাজারে কোটা আন্দোলনের পক্ষে মিছিল সহকারে গিয়ে জেলা আওয়ামীলীগ, জাসদ, জাতীয় পার্টির কার্যালয়সহ একটি মসজিদ, কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং গাড়িতে ভাংচুর চালানো হয়েছে। এসময় ছাত্রলীগের ৪ নেতাকে মারধর করা হয়েছে। এর মধ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে কক্সবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের আহবায়ককে।


মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দিনভর থেমে থেমে কক্সবাজার শহরের প্রবেশমুখ লিংক রোড, কক্সবাজার সরকারি কলেজ, শহরের লালদিঘীর পাড়া, ঝাউতলা এলাকায় এসব ঘটনা সংঘটিত করেছে কোটা আন্দোলনের পক্ষে মিছিল সহকারে ঘুরে বেড়ানো কয়েক শত শিক্ষার্থী।


এ ঘটনায় আহত কক্সবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের আহবায়ক রাজিবুল ইসলাম মোস্তাক, জেলা ছাত্রলীগ নেতা মঈন উদ্দিন, সাঈদ হোছেইন কাদেরী, ইউনুস উদ্দিন আকাশকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।


মঙ্গলবার বেলা ১১ টা থেকে কক্সবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়কের লিংকরোড ও কক্সবাজার সরকারি কলেজের গেইট থেকে এসব ঘটনার সূত্রপাত হয়।


আরও পড়ুন: কক্সবাজার পর্যটন জোনের আধা কিলোমিটার নালায় ১৪৫ অবৈধ স্থাপনা


পুলিশ, আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ নেতা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১১ টায় মিছিল করে কক্সবাজার পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী কোটা আন্দোলনকারিরা মিছিল সহকারে অবস্থান নেয় কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লিংকরোডে। তারা সেখানে স্লোগান দিয়ে অবস্থান নেয়। পুলিশ তাদের কে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও আন্দোলনকারিরা সরেনি। এসময় সড়কে চলাচলকারি কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে তারা। এই সময় কক্সবাজার সরকারি কলেজ গেইটে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। পরে কোটা আন্দোলনকারিরা মিছিল নিয়ে লিংক রোড থেকে কক্সবাজার সরকারি কলেজের দিকে যায়। এসময় কলেজের গেইটে আসলে কোটা আন্দোলনকারিদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশের হস্তক্ষেপে ছাত্রলীগ পিছু হটলেও আন্দোলনকারিরা কক্সবাজার সরকারি কলেজের গেইটে কয়েকটি মোটর সাইকেলে ভাংচুর চালায়। একই সঙ্গে কলেজের গেইটের স্থাপনায়ও ভাংচুর করে। পরে পুলিশের দুটি টিম আন্দোলনকারিদের সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।


এর ঘটনার পর কিছুক্ষণ আন্দোলন বন্ধ থাকলেও দুপুর আড়াই টার পরে মিছিল সহকারে আন্দোলনকারিরা আবারও অবস্থান নেন লিংক রোডস্থ কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। ওখানে পুলিশ আন্দোলনকারিদের সরিয়ে দেন। এর ঘন্টা দুয়েক পর বিকাল ৪ টার দিকে শহরের ঝাউতলা এলাকায় মিছিল সহকারে দেখা মিলে আন্দোলনকারিদের। হাতে লাঠি সহ ইটপাটকেল নিয়ে আন্দোলনকারিরা মিছিল সহকারে প্রধান সড়কে কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর চালিয়ে কক্সবাজার শহরের লালদিঘীর পাড়া এলাকায় যান। ওখান অবস্থিত কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগ, জেলা জাসদ, জাতীয় পার্টির কার্যালয় এবং আশে-পাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর চালানো হয়। ওই সময় মারধর করা হয় আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগের নেতাদেরও। ঘটনা চলাকালিন সময় পাশে অবস্থিত মসজিদের জানালা, অজুখানে ভাংচুর করে আন্দোলনকারিরা। ওখান থেকে আন্দোলনকারি মিছিল নিয়ে আছে কক্সবাজার কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে। বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে পুলিশের একটি দল আন্দোলনকারিদের সরিয়ে দেন।


কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, কোটা আন্দোলনকারিদের পক্ষে মিছিল সহকারে শহরে নাশকতা চালানো হয়েছে। মিছিলে অংশ নেয়ারা শিক্ষার্থী না। তারা সকলেই পরিকল্পিত হামলাকারি। এদের হাতে লাঠি, লোহারড, ইটপাটকেল ও ধারালো অস্ত্র ছিল। এরা শহরের ঘুরে ঘুরে মিছিল সহকারে ভাংচুর চালিয়ে দলীয় কার্যালয়ে আসে। ওখানে আওয়ামীলীগ কার্যালয়, জাসদ কার্যালয়, জাতীয় পার্টির কার্যালয় মসজিদ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর চালায়। এক পর্যায়ে দলীয় কার্যালয়ে থাকা কক্সবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের আহবায়ক রাজীবুল ইসলাম মোস্তাককে কুপিয়ে আহত করা হয়। একই সময় মারধর করা হয়েছে জেলা ছাত্রলীগ নেতা মঈন উদ্দিন, সাঈদ হোছেইন কাদেরী সহ কয়েকজনকে। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।


আরও পড়ুন: কক্সবাজারে কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ভাংচুর


তিনি বলেন, আন্দোলনকারিদের পক্ষে মিছিল করা লোকজন চিহ্নিত শিবির ও ছাত্রদলের ক্যাডার। এরা কখনও খালেদা জিয়া, কখনও নিজামীর নামে উল্লেখ করে রাজাকার দাবি করে শ্লোগান দিয়েছে।


আহত ছাত্রলীগ নেতা মঈন উদ্দিন জানিয়েছেন, এটা কোটা আন্দোলন ছিল না। শিবির ও ছাত্রদলের কিছু সংখ্যক লোকজন এই হামলা, ভাংচুর ও মারধর সংঘটিত করেছে।


যদিও আন্দোলনকারি পক্ষে এব্যাপারে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মিছিলটি কক্সবাজার কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে পৌঁছলে এক যোগে কয়েকজন উচ্চস্বরে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। এদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার আগেই রাজাকার-রাজাকার শ্লোগান শুনে পুলিশ তাদের শহীদ মিনার থেকে সরিয়ে দেন।


কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক মো. রকিবুজ্জামান বলেন, আন্দোলনকারিরা মিছিল সহকারে কয়েকটি স্থানে ভাংচুর ও কয়েকজনকে মারধর করেছে। তাদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে। কারা ভাংচুর ও মারধর করেছে তাদের ভিডিও, ছবি পাওয়া গেছে। তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। এখন পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।


এমএল/