বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ফেনী, মানুষের দুর্ভোগ চরমে
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১:২৬ পূর্বাহ্ন, ২২শে আগস্ট ২০২৪
ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজানের ঢলের কারণে ফেনী ও নোয়াখালীসহ দেশের আটটি জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙনস্থল দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করতে থাকায় একের পর এক জনপদ ডুবছে। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ফেনীর সাড়ে ৩ লাখেরও বেশি মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সেইসঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন জেলার বাসিন্দারা। এতে চরম দুর্ভোগ ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
আরও পড়ুন: নোয়াখালীতে বন্যায় পানি বন্দী প্রায় এক লাখ মানুষ
বুধবার (২১ আগস্ট) রাতে এ বিষয়ে ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার হাওলাদার মো. ফজলুর রহমান জানান, জেলায় চার লাখ গ্রাহকের মধ্যে তিন লাখেরও বেশি বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন। ভারী বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত (রাত ৮টা) জেলার সোনাগাজী ও দাগনভূঞা উপজেলার কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক রয়েছে।
আরও পড়ুন: জুড়ীতে অতিবৃষ্টি-পাহাড়ী ঢলে আবারও বন্যার শঙ্কা
ফেনী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হোসেন মাহমুদ শামীম ফরহাদ গণমাধ্যমকে জানান, আমাদের প্রায় ৭০ শতাংশ গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভবনগুলোর নিচ তলায় পানি ঢুকে মিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাই পানি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকবে। বন্যার পানি কমার আগে সংযোগ স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
জানা গেছে, গত তিন দিনের ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়।
ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়ন, আমজাদহাট, আনন্দপুর, মুন্সীরহাট, ইউনিয়নের ৪০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পরশুরামের মির্জানগর, চিথলিয়া, বক্সমাহমুদ এবং পৌরশহরসহ ৪৫টির বেশি গ্রাম পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ছাগলনাইয়ার পাঠান নগর, রাধানগর, শুভপুর ইউনিয়নেরও বেশ কয়েকটি গ্রামে সৃষ্টি হয়েছে বন্যার।
গতকাল বুধবার (২১ আগস্ট) বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি। রাস্তা-ঘাট থেকে ঘরবাড়ি কিছুই রেহাই পায়নি বানের জলে। ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিন উপজেলার প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ।
গত মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) একজন নিখোঁজের খবর পাওয়া গেলেও বুধবার সকাল পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাৎক্ষণিকভাবে তার পরিচয়ও জানা যায়নি। তবে ওই সময় অনেকজনকেই জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম জানিয়েছেন, টানা বর্ষণ আর ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২৭টি ভাঙা অংশ দিয়ে হুহু করে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। গেল মাসের মাসের শুরুতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর ১৫ স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। সেসব স্থানে জোড়াতালির মেরামতের পর চলতি মাসের শুরুতে বাঁধের আরও ১২ স্থানে ভেঙে যায়, প্লাবিত হয় ১০০টির বেশি গ্রাম। অবকাঠামো, ধান, ফসল ও মাছের ক্ষতি ছাড়িয়ে যায় ৩০ কোটির বেশি। ১৫ দিনের মাথায় আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে।
এ দিকে বন্যা দুর্গতদের জন্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে মাঠে নেমেছে স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সেনাবাহিনী, বিজিবি কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সহায়তা ও উদ্ধার অভিযানে তৎপর রয়েছেন।
জেবি/এসবি